২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি

দিল্লির দ্বিমত অন্যায্য

-


ভারত-বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির প্রাপ্যতা ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রকৃতিগত অধিকার। এ থেকে বঞ্চিত করার অধিকার কারো নেই। আন্তর্জাতিক আইনও তা সমর্থন করে না; কিন্তু ভারত বৃহৎ প্রতিবেশী হিসেবে আন্তর্জাতিক সব আইন লঙ্ঘন করে বাংলাদেশকে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করছে।
দুই দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত গঙ্গা, যা বাংলাদেশে পদ্মা নামে বইছে; তাতে ভারত ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে ১৯৭৪ সালে পরীক্ষামূলক চালু করে। যা বাংলাদেশের জন্য এখন মরণফাঁদ। লক্ষণীয়, এ দুই দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীগুলোতে বাঁধ দিয়ে ভারত শুষ্ক মৌসুমে একতরফা পানি প্রত্যাহার করছে। আবার বর্ষা মৌসুমে অবহিত না করেই পানি ছেড়ে দেয়ায় আকস্মিক বন্যায় ভাসছে বাংলাদেশ। এর সর্বশেষ নজির আমাদের পূর্বাঞ্চলের ১২টি জেলা সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যাকবলিত হয়। এতে বিপুল ফসল ও সম্পদ বিনষ্ট এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এসব দেখে এ কথা বলা অন্যায় হবে না যে, ভারত বাংলাদেশে পানি আগ্রাসন চালাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক আইনে এর সুরাহা হওয়া উচিত। যাতে কোনো পক্ষ বঞ্চিত না হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো- অভিন্ন নদীগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে নামকাওয়াস্তে পদ্মার পানিবণ্টন চুক্তি রয়েছে। অন্য সব নদীর পানি নিয়ে ভারত নির্বিকার। এর মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে ঝুলে আছে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি। ২০১১ সালে ঢাকায় ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সময় তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর অনেকটা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এ চুক্তিকে অনুমোদন দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় তা আর এগোয়নি। তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, তার রাজ্যেই পানির সঙ্কট রয়েছে।

দেড় দশক ধরে ভারতের সহায়তায় ক্ষমতায় টিকে থাকা সদ্য পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনা দেশের অধিকার জলাঞ্জলি দিয়ে তিস্তাচুক্তির কোনো সুরাহা করতে পারেনি।
আশার কথা, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশে ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে। দেশ পরিচালনার ভার নিয়েছে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। ভারতীয় বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার (পিটিআই) সাথে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘দীর্ঘ দিন ধরে অমীমাংসিত তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়ে মতপার্থক্য দূর করার উপায় নিয়ে ভারতের সাথে আলোচনা করবে অন্তর্বর্তী সরকার। বিষয়টি দীর্ঘ দিন ধরে ঝুলে আছে, এতে কোনো দেশের লাভ হচ্ছে না।’ সাক্ষাৎকারে দুই দেশের মধ্যে পানিবণ্টনের বিষয়টি অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী হতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো ভাটির দেশগুলোর অধিকার সমুন্নত রাখার সুনির্দিষ্ট অধিকার রয়েছে।
সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘বিষয়টি (পানিবণ্টন) নিয়ে বসে থাকার ফলে এটি কোনো কাজে আসছে না। আমি যদি জানি, আমি কতটুকু পানি পাবো, তাহলে এটি ভালো হতো। এমনকি পানির পরিমাণ নিয়ে যদি আমি খুশি না-ও হই, তাতেও সমস্যা নেই। বিষয়টির সমাধান হতেই হবে।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘এটা নতুন কোনো বিষয় নয়; বরং খুব পুরনো বিষয়। আমরা বিভিন্ন সময় এ বিষয়ে কথা বলেছি। পাকিস্তান শাসনামল থেকে এ নিয়ে আলোচনা শুরু। আমরা সবাই যখন ওই চুক্তি চূড়ান্ত করতে চেয়েছি, এমনকি ভারত সরকারও প্রস্তুত ছিল; তখন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার এর জন্য তৈরি ছিল না। আমাদের এটির সমাধান করতে হবে।’
আমরা মনে করি, অভিন্ন নদী তিস্তার পানিবণ্টন আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি মেনে সমাধান করতে হবে। ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কিছু অধিকার রয়েছে। সেই অধিকার অবশ্যই বাংলাদেশকে ভারতের দিতে হবে। এর জন্য যা যা করা দরকার বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে করতে হবে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
বছরে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার জলবায়ু অর্থায়নের দাবি বাংলাদেশ অরবিসের সাথে কাজ করতে আগ্রহী : অধ্যাপক ইউনূস ঢাবি সিন্ডিকেটে এখনো বহাল আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা হাসিনা বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করতে দিগন্ত টেলিভিশনসহ অসংখ্য গণমাধ্যম বন্ধ করেছে : ফখরুল শীত শুরু হচ্ছে তবু কমেনি ডেঙ্গুর প্রকোপ ব্যয়বহুল তদন্তেও শনাক্ত হয়নি লাশটি কার ‘রহস্যজনক’ কারণে নেয়া হয়নি ডিএনএ নমুনা নবনির্মিত ওয়ামি কমপ্লেক্সের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন যুদ্ধবিরতির মার্কিন চেষ্টার মধ্যে লেবাননে ইসরাইলি হামলায় চিকিৎসাকর্মী নিহত অস্বস্তিতে ক্রেতারা : কমিয়ে দিতে হচ্ছে কেনাকাটা গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৪৪ হাজার ছাড়াল আমরা মানুষের সম্মিলিত প্রজ্ঞাকে সম্মান করি

সকল