২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
দুর্নীতির ব্যাপ্তি নির্ণয়ে সরকারের চেষ্টা

এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ

-


৫ আগস্ট গণ অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে দেশে দুর্নীতি সর্বগ্রাসী রূপ নেয়। বলা ভালো, দুর্নীতির রাহুগ্রাসে দেশের অর্থনীতি এখন গহিন খাদে নিপতিত। সেখান থেকে কিভাবে আমাদের অর্থনীতি উদ্ধার করে আবার সচল করা যায়, তাই এখন গভীর চিন্তার বিষয়।
নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র চালানোর দায়িত্ব নেয়ার পর সে প্রচেষ্টা শুরু করেছে। এর ধারাবাহিকতায় দেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার শ্বেতপত্র প্রণয়নে গত বুধবার কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে ১২ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এই কমিটি গঠন সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের বরাতে নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শ্বেতপত্রে দেশের বিদ্যমান অর্থনীতির সামগ্রিক চিত্র থাকার পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিষয়ে সরকারের কৌশলগত পদক্ষেপ, জাতিসঙ্ঘের টেকসই অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়ন ও বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে করণীয় বিষয়ের প্রতিফলন থাকবে।
শ্বেতপত্রে ছয়টি ক্ষেত্রে আলোকপাত করা হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা। সেই সাথে অভ্যন্তরীণ সম্পদ, সরকারি ব্যয় (সরকারি বিনিয়োগ, এডিপি, ভর্তুকি ও ঋণ) ঘাটতি বাজেট অর্থায়ন বিষয়াদি থাকবে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনার মধ্যে থাকবে উৎপাদন, সরকারি কেনাকাটা ও খাদ্য বিতরণ এবং বাহ্যিক ভারসাম্যের মধ্যে থাকবে রফতানি, আমদানি, প্রবাসী আয়, সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই), বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, বিদেশী অর্থায়নের প্রভাব ও ঋণ। ৯০ দিনের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করবে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সম্মেলন কক্ষে গত বৃহস্পতিবার প্রথম বৈঠক করে অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
বিগত সরকারের নেয়া মেগা প্রকল্পগুলো খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়ে অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান বলেছেন, আমরা দেশের দুর্নীতি ধরতে আসিনি। কোন খাতে কী পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে তার ব্যাপ্তি নির্ণয়ে আমাদের কমিটি কাজ করবে। সুনির্দিষ্ট কোনো প্রকল্পের ব্যয় বা যৌক্তিকতা যাচাই করা হবে না। তবে মেগা প্রকল্পের নানা দিক খতিয়ে দেখা হবে।

তিনি আরো বলেন, দুর্নীতি কেন হয়েছে সেটা বলে দেবো। এছাড়া আমাদের এই কমিটি আর্থিক খাতের সংস্কারে সরকারের উদ্যোগকে সহযোগিতা করবে। ব্যাংক বা আর্থিক খাতের মূল্যায়ন করা হবে না। তার জন্য সরকার আলাদা ব্যাংকিং কমিশন করবে। তবে কমিটির কার্যক্রমে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান এলে তার নানান দিক বিবেচনা করা হবে। বিদায়ী সরকার অনেক নীতিমালা তৈরি করেছে। সেগুলোর প্রাসঙ্গিকতা পর্যালোচনা করা হবে। নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা কেমন হবে, সেটার ইঙ্গিত ও এলডিসি থেকে উত্তরণ কতটা মসৃণ হবে সে বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হবে। পাশাপাশি বিদেশী সহযোগীদের সাথে আগামীতে সম্পর্ক কেমন হবে সে বিষয়ে ইঙ্গিত দেয়া হবে।
পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার অর্থনীতিসহ দেশের সেবা খাতের বারোটা বাজিয়ে গেছে। পরিণতিতে ৫৩ বছর বয়সী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান আজ ভেঙে পড়েছে। জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, শেখ হাসিনা সরকার রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। তার এই কথার সাথে দ্বিমতের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। দেশবাসীর মতো আমাদেরও প্রত্যাশা, অন্তর্বর্তী সরকার ভেঙে পড়া রাষ্ট্র মেরামতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব ধরনের উদ্যোগ নেবে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement