২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ফোকলা হওয়া ব্যাংক উদ্ধার জরুরি

লুটেরাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিন

-

রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে জাতীয় সম্পদ লুটপাটে বিগত সরকার বিশ্বে নজির সৃষ্টি করেছে। সরকারি কোষাগার এবং ব্যাংকগুলো যেভাবে ফোকলা করে ফেলা হয়েছে সেই রেকর্ড ভবিষ্যতে কেউ ভাঙতে পারবে না। নিজেদের পেটপূর্তি করতে গিয়ে গোটা অর্থনীতিকে তারা খাদের কিনারায় নিয়ে গেছে। এখন অন্তর্বর্তী সরকারকে আর্থিক খাতে বিদ্যমান বিশৃঙ্খলা উত্তরণে বেগ পেতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে তারা আর্থিক খাতে সংস্কার শুরু করেছে। চ্যালেঞ্জ হচ্ছে লুট হয়ে যাওয়া সম্পদ ফিরিয়ে আনা।
লুট হওয়া অর্থ বড় দাগে বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। বিভিন্ন হিসেবে বিগত বছরগুলোতে ৭০ হাজার থেকে এক লাখ কোটি টাকা করে পাচার হয়েছে। বিগত ১৫ বছরে কম করে হলেও সর্বমোট এক হাজার লাখ কোটি টাকা বিদেশে চলে গেছে। যারা ব্যাংক ও সরকারি কোষাগার থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তারা এগুলো দেশে রাখেননি। অনেকে নিরাপদে এই অর্থ ভোগ করার জন্য দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে ভিন্ন দেশের নাগরিক হয়ে প্রবাসে চলে গেছেন। এ ধরনের এক দুর্বৃত্ত ইসলামী ব্যাংক লুটে নেয়া এস আলম। জানা যাচ্ছে, তার পরিবারের সবাই দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। ইনি একাই শুধু ইসলামী ব্যাংক থেকে ৭৫ হাজার কোটি টাকা লুট করে নিয়েছেন। ছয়টি ইসলামী ব্যাংকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে লুটে নেয়া তার অর্থের অঙ্কটা আরো বিশাল।
এ অবস্থায় বেহাত হয়ে যাওয়া গ্রাহকের অর্থ ব্যাংকগুলোতে ফেরত আনার জন্য দেশে থাকা তার সম্পদ নগণ্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দেশে এস আলমের সম্পদ কাউকে কিনতে নিষেধ করেছেন। তার সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে যতটুকু পারা যায় ব্যাংকগুলোর বেহাত হওয়া অর্থ ফেরত দেয়া হবে। আইনি জটিলতার কারণে তার সম্পদ এখনো বাজেয়াপ্ত করা যাচ্ছে না। বিগত সরকারের সময় এস আলমের মতো কয়েক ডজন ব্যাংকখেকো ছিলেন। দেশের ব্যাংকব্যবস্থা সুস্থ ধারায় ফেরাতে হলে এদের সবার কাছ থেকে অর্থ উদ্ধার করতে হবে। ইতোমধ্যে অভিযুক্তদের একটি অংশের বিরুদ্ধে নানা মাত্রায় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কারো ব্যাংক হিসাব জব্দ, কারো কাছ থেকে হিসাব তলব করা হয়েছে। তবে অনেকের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। এই ফাঁকে তারা আত্মসাৎ করা টাকা সরিয়ে নিচ্ছেন। সরকারের উচিত আর্থিক গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করে প্রত্যেক দুর্বৃত্তকে একটি জালের মধ্যে নিয়ে আসা। লুটেরাদের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার নীতি কার্যকর করা।
দুর্বৃত্তরা হাসিনা, রেহানা ও জয়সহ ক্ষমতাসীনদের শীর্ষ সাঙ্গপাঙ্গদের ঘুষ দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছে। লুটেরাদের মতো ক্ষমতা চক্রের শীর্ষ ব্যক্তিরাও অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার বিদেশে তাদের অবৈধ অর্থের খোঁজে নেমেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ সম্ভাব্য কিছু দেশে তাদের অর্থের সন্ধানে চিঠি দিয়েছে। ইউরোপের কিছু দেশের রাষ্ট্রদূতের সাথে এ নিয়ে সরকার সরাসরি কথা বলেছে। আশা করা যায়, পাচার হওয়া অর্থের একটি অংশ ফেরত আনা যাবে। তবে দুর্বৃত্তরা এমন কিছু দেশে তাদের লুটের অর্থ সরিয়ে নিয়েছে সেখান থেকে ফিরিয়ে আনা নাও হতে পারে। দেশবাসী আশা করেন, সরকার সুযোগের সর্বোচ্চ ব্যবহার করবে।


আরো সংবাদ



premium cement