২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ক্ষমতার অপব্যবহারের দৃষ্টান্ত

-

একটি সহযোগী দৈনিকের আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি জানান, আখাউড়ায় জাহানারা হক মহিলা কলেজে প্রভাষক রয়েছেন ১১ জন। কিন্তু কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্বে রয়েছেন সহকারী লাইব্রেরিয়ান (বর্তমান শিক্ষক পদমর্যাদা) তানিয়া আক্তার। গত ছয় মাস ধরে চলছে এমন তুঘলকি কাণ্ড।
তানিয়া আক্তার ওই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য অপসারিত পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফা কাজলের স্ত্রী। এ নিয়ে প্রভাষকদের মধ্যে অসন্তোষ থাকলেও এতদিন মুখ খুলতে পারেননি কেউ। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর প্রিন্সিপাল পদে পরিবর্তনের আশা দেখছেন বৈষম্যের শিকার প্রভাষকরা। সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ওই কলেজের সভাপতি ছিলেন। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাহাজাহান মিয়া মৃত্যুবরণ করেন। কমিটি জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রভাষককে প্রিন্সিপালের দায়িত্ব না দিয়ে লাইব্রেরিয়ান তানিয়া আক্তারকে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল করে। কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীর নামের তালিকার বোর্ডে তার অবস্থান ১৩।
কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আওয়ামী লীগ নেতা কাজল সাবেক আইনমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে স্ত্রীকে প্রিন্সিপাল করেন। তানিয়া আক্তারকে প্রিন্সিপাল করতে কৌশলে কলেজের প্রভাষকদের কাছ থেকে ‘দায়িত্ব নিতে অপারগ’ মর্মে দরখাস্ত নেয়া হয়। জানা যায়, ২০১১ সালে আখাউড়া পৌর শহরের নাসরীন নবী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কলেজ শাখা চালু করে নাসরীন নবী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ নামে পাঠ কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৯ সালে স্কুল থেকে কলেজটি আলাদা করা হয়। স্কুলের জমিতে কলেজের কার্যক্রম চললেও কলেজের নাম ও প্রতিষ্ঠাতার নাম পাল্টে যায়। তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মায়ের নামে ‘জাহানারা হক মহিলা কলেজ’ নামকরণ করা হয়। প্রতিষ্ঠাতা হয়ে যান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল। তবে এ জন্য তিনি কলেজ ফান্ডে ১৫ লাখ টাকা দিয়েছেন বলে জানান এক প্রভাষক। ২০২২ সালের ৬ জুলাই কলেজটি এমপিওভুক্ত হয়। কলেজের ১১ জন প্রভাষক ও তিন কর্মচারী এমপিওভুক্ত হন। এর মধ্যে তানিয়া আক্তারের (সহকারী লাইব্রেরিয়ান) পদটি এখনো এমপিওভুক্ত হয়নি। তিনি ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর এ কলেজে যোগদান করেন।
এ ব্যাপারে কলেজ পরিচালনার আহ্বায়ক কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি প্রভাষক ইলিয়াস মুন্সী বলেন, ‘কলেজ কমিটির তৎকালীন সভাপতি সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং কলেজের প্রতিষ্ঠাতা তাকজিল খলিফা কাজলের পরামর্শে সাময়িক সময়ের জন্য তানিয়া আক্তারকে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল করা হয়। পরবর্তী সময় নতুন প্রিন্সিপাল নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা ছিল। সভাপতির অনুপস্থিতিতে ইউএনওর পরামর্শক্রমে কলেজের কার্যক্রম চলছে।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক জহিরুল ইসলাম পাটোয়ারি বলেন, ‘জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রভাষক থেকে প্রিন্সিপালের দায়িত্ব দেয়ার নিয়ম। এ ক্ষেত্রে কলেজ কমিটির রেজুলুশন না দেখে বলতে পারব না কীভাবে লাইব্রেরিয়ানকে প্রিন্সিপালের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। শিক্ষকরা দরখাস্ত দিলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’
ক্ষমতার অপব্যবহার আমাদের দেশে বেশ দেখা যায়। আওয়ামী লীগের এই প্রবণতা বেশি। এটি অবিলম্বে বন্ধ করা জরুরি।


আরো সংবাদ



premium cement