২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বিদেশে চিকিৎসার প্রবণতা কমেছে

দেশে স্বাস্থ্যসেবায় আস্থা ফেরান

-

দেশীয় চিকিৎসার প্রতি মানুষের আস্থার সঙ্কট দীর্ঘদিনের। যে কারণে প্রতি বছর চিকিৎসার জন্য বিদেশে বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশ ভারতে যান হাজারো বাংলাদেশী। এতে করে আমাদের বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। অন্যদিকে ভারত আয় করে বিপুল অর্থ। অবস্থাটা এমন যে, বাংলাদেশী রোগীর ওপর অনেকটা নির্ভরশীল ভারতের হাসপাতালগুলো। এত দিন বাংলাদেশী রোগীদের ভারতে যাওয়া ক্রমেই বাড়ছিল। সেখানকার অনেক হাসপাতালে বেশির ভাগ রোগী বাংলাদেশের। দেশে সাম্প্রতিক পরিবর্তনের পর মেডিক্যাল ভিসায় ভারতে যাওয়া বাংলাদেশীর সংখ্যা ব্যাপকহারে হ্র্রাস পেয়েছে।
প্রতি বছর আমাদের দেশ থেকে কী পরিমাণ মানুষ ভারতে চিকিৎসাসেবা নিতে যান তা খোদ ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্যে জানা যায়। দেশটির গণমাধ্যমের তথ্য, ২০২২ সালে ভারতে বেড়াতে যাওয়া বিদেশী পর্যটকের সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন বাংলাদেশীরা। দেশটিতে এ বছর বিদেশী পর্যটকদের শীর্ষ তিন উৎস ছিল যুক্তরাষ্ট্র (২২ দশমিক ১৯ শতাংশ), বাংলাদেশ (২০ দশমিক ২৯ শতাংশ) ও যুক্তরাজ্য (৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ)। ওই বছর পর্যটন খাত থেকে ভারত আয় করে এক লাখ ৩৪ হাজার ৫৪৩ কোটি রুপি।
ভারতীয় গণমাধ্যম ফার্স্ট পোস্টের প্রতিবেদন, মেডিক্যাল ট্যুরিজমে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের একটি ভারত। ২০২২ সালে চার লাখ ৭৫ হাজার মানুষ মেডিক্যাল ভিসায় ভারতে যান। সেখানে, ২০২৩ সালের প্রথম ১০ মাসে যান পাঁচ লক্ষাধিক বিদেশী। তাদের বেশির ভাগ বাংলাদেশী। এদিকে ভারতীয় সংস্থা কেয়ার এজ রেটিংসের তথ্যমতে, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ মানুষ চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। ভারতে যাওয়া মেডিক্যাল পর্যটকদের মধ্যে ৫০-৬০ শতাংশ বাংলাদেশী। ভারতের হাসপাতালগুলোতে সর্বমোট যত রোগী সেবা নেন, তাদের মধ্যে বাংলাদেশীদের অংশ প্রায় ৩ শতাংশ। কেয়ার এজ রেটিংস বলছে, শুধু আগস্টে ভারতে চিকিৎসার উদ্দেশে যাওয়া বাংলাদেশীর সংখ্যা ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। আর পুরো বছরের হিসাব করলে এর পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ১০-১৫ শতাংশ কম (২০২৩ সালের তুলনায়)।
দেশটির সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট, বাংলাদেশী রোগীর সংখ্যা কমে যাওয়ার প্রভাব এর মধ্যে টের পেতে শুরু করেছে ভারতের হাসপাতালগুলো। সেখানকার বৃহৎ হাসপাতাল চেইন ফোর্টিস হেলথকেয়ারের একজন মুখপাত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমাদের হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা কমে গেছে। অনেক রোগী ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল অথবা স্থগিত করেছেন। কোনো কোনো হাসপাতালে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। দেশটি আরেকটি প্রধান হাসপাতাল চেইনের আন্তর্জাতিক মার্কেটিং টিমের একজন নির্বাহী জানিয়েছেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে তাদের হাসপাতালগুলোতে বাংলাদেশী রোগীর সংখ্যা কমেছে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরুর পর থেকে এ সংখ্যা কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। অন্য একটি হাসপাতাল চেইনের নির্বাহী বলেন, আমাদের আয় ৫ শতাংশ কমে গেছে। রোগী কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। নতুন রোগী আসছেন না।
স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর দেশের মানুষের মধ্যে এই যে পরিবর্তন; বিশেষ করে যারা এত দিন দেশীয় চিকিৎসাব্যবস্থা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, তাদের এই মানসিকতার বদলকে কাজে লাগাতে হবে। এর জন্য দরকার নিজেদের স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় দেশে সেবার মান সন্তোষজনক হলে রোগীরা আর বাইরে যাবেন না। চিকিৎসাসেবার মান বাড়ানোর এখনই সুবর্ণ সময়।


আরো সংবাদ



premium cement