২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
জাতীয় নিরাপত্তা রেড জোনে

সংস্থাগুলো ঢেলে সাজান

-

গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর আচরণ দেখে মনে হয়েছে তারা কোনো শত্রু দেশের বাহিনী। তাদের বন্দুকের নল দেশের জনগণের দিকেই তাক করা ছিল। অন্য দিকে, সীমান্তে শত্রুদের বিরুদ্ধে তারা ছিল বন্ধুভাবাপন্ন। শত্রুর গুলিতে একর পর এক নাগরিকদের জীবনহানি ঘটলেও তারা ছিল নিশ্চুপ। ভারত ও মিয়ানমার- উভয় সীমান্তে আমরা একই ধরনের নীতি দেখেছি। এই সময়ে নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর একটিই লক্ষ্য ছিল- যেকোনো মূলে হাসিনা ও তার দোসরদের স্বার্থ রক্ষা করা। ফলে আয়নাঘর, গুপ্ত কারাগার ও ব্যাংক দখলের মতো কাজেও তাদের সরাসরি সম্পৃক্ততা দেখা গেছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশের নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিয়ে পর্যালোচনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে এখনো তেমন কোনো সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ আয়োজিত এক ওয়েবিনারে বক্তারা বলেছেন, বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা প্রতিটি ক্ষেত্রে রেড জোনে রয়েছে। তারা বলেছেন, বিগত সরকারের আমলে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ক্ষমতাসীনদের স্বার্থরক্ষার সংস্থায় পরিণত হয়। বিরোধীদের শুধু গুম, খুন ও পীড়নের হাতিয়ার হয়ে ক্ষান্ত হয়নি সংস্থাগুলো বরং এমন অপরাধের সাথেও তারা জড়িত হয়েছে যার সূত্র ধরে জাতীয় অর্থনীতি ধ্বংস হওয়ার পথে চালিত হয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের অপহরণ করে এক দুর্বৃত্তের হাতে ব্যাংকটি তুলে দিতে নেতৃত্ব দেন সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান। ওই দুর্বৃত্ত একাই ব্যাংকটি থেকে হাতিয়ে নেয় ৭৫ হাজার কোটি টাকা। প্রথমে দেশের ইসলামী ধারার ব্যাংক এবং পরে অন্য সাধারণ বাংকও লুটে নেয়ার পথ তারা তৈরি করে দেয় গোয়েন্দা সংস্থা। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থাকে তারা জড়িয়ে ফেলে পতিত সরকার। জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই নেতৃত্ব দিয়েছে জাতীয় নির্বাচন নিয়ন্ত্রণে। ফলে বিগত সরকারের সময় পুরো জাতি ভোটাধিকার বঞ্চিত হয়। একতরফা নির্বাচন করতে গুম, খুন, অপহরণের মতো কাজে জড়িত হয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। একই সাথে সীমান্তে বহিঃশত্রুর উৎপাত বেড়ে যায়।
এনএসআই, ডিজিএফআইয়ের কাজ ছিল রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা-তথ্য সংগ্রহ করা। যাতে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিরাপদ হয়। এগুলোর কিছুই তারা করেনি। আরো দেখা গেছে, যারাই জনগণের স্বার্থহানি করেছে সরকারে তাদের কদর বেড়েছে। তাদের অবৈধ সুযোগ-সুবিধা, পদ-পদবি দেয়া হয়েছে। এই সূত্রে জন্ম নিয়েছে জিয়াউল হাসানের মতো দানবরা। পুলিশ ও বিজিবির মধ্যেও এ ধরনের দাগী অপরাধীদের দেখা গেছে।
দেশে ডজনখানেকের বেশি গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে। এগুলোর কোনোটি জনস্বার্থে কাজে আসেনি। পুলিশের বিশেষ বিভাগ দেশের ভেতর বিরোধীদের দমন-পীড়নে ব্যবহৃত হয়েছে।
জাতীয় নিরাপত্তা বিধানে গোয়েন্দা সংস্থা লালন-পালনে দেশের বিপুল অর্থ খরচ হয়। এখন দেশের সব গোয়েন্দা সংস্থা নাজুক অবস্থায় রয়েছে। সংস্থাগুলোর প্রধান পদে পরিবর্তন এসেছে কিন্তু ফ্যাসিবাদের আগের কাঠামো রয়ে গেছে। এ জন্য রাষ্ট্র্রের নিরাপত্তা এখনো বড় ধরনের হুমকির মুখে। এ ব্যাপারে সংস্কার সংশোধন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করব, অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গোয়েন্দা ব্যবস্থা পরিপূর্ণ ফ্যাসিবাদমুক্ত করার উদ্যোগ নেবে।


আরো সংবাদ



premium cement