১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩০, ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
ছাত্রছাত্রীদের ওপর নারকীয় হামলা

দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই

-

ফের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা বর্বর আক্রমণের শিকার হলেন। সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ মারাত্মক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পৈশাচিক কায়দায় তাদের মারধর করেছে। এ সময় ছাত্রীরা রেহাই পাননি। চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগরসহ দেশের বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ একই রকমের হামলা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সবসময় উন্মুক্ত দাবি দাওয়া পেশের জায়গা। কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এ সংস্কৃতি সাধারণ ঘটনা। এমনকি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রতিটি বাঁকবদলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। কোটার চেয়েও বাংলাদেশে গুরুতর রাজনৈতিক বিষয় রয়েছে। শিক্ষার্থীরা সেসব সম্পর্কে কিছু বলার সুযোগ পান না। কোটা একান্ত তাদের নিজস্ব স্বার্থের বিষয়। এমন একটি দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের কেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সন্ত্রাসী কায়দায় দমাতে চাইছেন সে প্রশ্নের উত্তর নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার ঘটনাটি গুরুতর অশনিসঙ্কেত। কারণ এ হামলায় বহিরাগত সন্ত্রাসী এবং ক্ষমতাসীন দলের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন। বাসে করে ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে ভাড়া করা সন্ত্রাসীদের আনা হয়। যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন, ছাত্রলীগের এমন বহু সদস্য এ সময় অস্ত্র হাতে মহড়া দেন। এ ছাড়া যুবলীগসহ সরকারদলীয় অন্যান্য সংগঠনের সদস্যদেরও ক্যাম্পাস দখলের নিয়ন্ত্রণ নিতে দেখা যায়। বহিরাগতরা এমন সময় ক্যাম্পাসে অবাধে ঢুকছেন যখন কর্তৃপক্ষের কড়াকড়ি রয়েছে। অছাত্রদের ক্যাম্পাসে ঢোকা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রক্টর এমনকি প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। সবচেয়ে লজ্জাকর বিষয় হচ্ছে অন্তত ৪০০ আহত শিক্ষার্থীর পক্ষে তাদের কিছু বলতে দেখা গেল না।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য কোনো ধরনের মানবিকতা প্রদর্শনে এগিয়ে আসেনি। এমনকি শিক্ষক সংগঠনকেও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে দাঁড়াতে দেখা গেল না। অথচ ছাত্রলীগ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ঢুকে চিকিৎসা নিতে যাওয়া ছাত্র-ছাত্রী ও তাদের সাথীদের বেধড়ক পিটিয়েছে। সোমবার দিনভর ক্যাম্পাসে বহিরাগতরা ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় তাণ্ডব চালিয়েছেন। এই দীর্ঘ সময়ে প্রশাসন চাইলে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারত। ক্যাম্পাসে বিপুল প্রস্তুতি নিয়ে পুলিশও প্রবেশ করেছে। তারাও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এর আগেও ছাত্র অধিকার পরিষদ ও বিরোধী দলের ছাত্র সংগঠনের ছাত্রদের দফায় দফায় হামলা চালিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করে ছাত্রলীগ। হামলাকারীরা চিহ্নিত হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
বিরোধী দলের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জায়গায় একই কৌশলে সরকারি দল ও পুলিশ একাকার হয়ে কাজ করেছে। হামলা বলপ্রয়োগ ভীতি প্রদর্শন করে গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। এই পরিস্থিতি কোনোভাবেই সুখকর নয়। কোটা সংস্কার ইস্যুর চেয়েও প্রতিবাদ করার অধিকার জারি থাকা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের যদি এভাবে স্তব্ধ করে দেয়া হয়, তার নেতিবাচক প্রভাব পুরো জাতির ওপর চেপে বসবে। ইতোমধ্যে মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সঙ্কোচিত হয়ে এসেছে। ভোটাধিকার হারিয়েছেন নাগরিকরা।
এখন সরকারের বিরোধিতা করা অপরাধ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। প্রথমে রাজনৈতিক দলগুলোকে নানা ট্যাগ দিয়ে দমানো হয়েছে। এর পরে অন্য যারা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে চেয়েছেন তাদের অগণতান্ত্রিক পন্থায় দমন করা হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের মনে রাখা জরুরি, অসহিষ্ণুতার সংস্কৃতি কারো জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না।
গত কয়েক দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে হামলার ঘটনাগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত দরকার। যারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের নির্দয়ভাবে মেরেছেন এবং যারা এর পেছনে ইন্ধন দিয়েছেন তাদের শণাক্ত করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা মনে করি, দাবি দাওয়া জানানোর অধিকার উন্মুক্ত রাখতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
গজারিয়ায় বজ্রপাতে স্ত্রীর মৃত্যু, স্বামী আহত ‘ক্ষমতায় থাকার জন্য হাসিনা এত মানুষ হত্যা করেছে, যা ইতিহাসে নেই’ আমি রেজাল্ট চাই না, আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই : শহিদ সবুজ মিয়ার মা ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে জয়খরা ঘুচাল পাকিস্তান যেভাবে শহিদ হন ইয়াহিয়া সিনওয়ার অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ হতে পারে নতুন মুখ! শুক্রবার ঢাকার বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’ ছাত্র অসন্তোষের জেরে পাঞ্জাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাশিয়াকে সমর্থন প্রশ্নে বেইজিংকে ‘চ্যালেঞ্জ’ করতে চীনে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেয়া মানে অপরাধকে প্রশ্রয় দেয়া : ভারতকে রিজভী রিপাবলিকান-সমর্থিত নির্বাচনী বিধি বাতিলের রায় জর্জিয়ার বিচারকের

সকল