২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণদান

ব্যাংক খাতের সর্বনাশ

-

দেশের অর্থনীতি যে খাদের কিনারে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। চলমান অর্থনৈতিক মন্দায় সরকারের উন্নয়নের বয়ান প্রশ্নের মুখে পড়ছে। এক দিকে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে সাধারণ মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। অন্য দিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের অপারগতার দায় চাপছে সাধারণ নাগরিকের ওপর।
কার্যত অর্থনীতির কোনো খাতে এখন শৃঙ্খলা নেই; বিশেষ করে ব্যাংক খাতে। এর পেছনে মূলত দায়ী খেলাপি সংস্কৃতি। ঋণখেলাপির কারণে প্রতিটি ব্যাংক ধুঁকছে। বাস্তবে রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ দেয়ার কারণে দেশের ব্যাংকব্যবস্থা ফোকলা হয়ে গেছে। এ কাজে যারা লিপ্ত; তারা সবাই রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়েই বাধাহীনভাবে এমন অপকর্ম করছেন।
ব্যক্তি খাতের ব্যাংকগুলো যখন অনুমোদন দেয়া হয়, তখন সরকারের তরফ থেকে যুক্তি ছিল, ব্যাংক খাতে প্রতিযোগিতা বাড়বে। এ খাত ভালো ও সবল হবে। কিন্তু পরে দেখা গেল, সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি ব্যক্তি খাতের ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের হার বাড়ছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এক লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা এখন খেলাপি ঋণ। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য, এর পরিমাণ চার লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি। বিভিন্ন পরিসংখ্যান মতে, প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি; ১১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আওয়ামী লীগ সরকারের ১০ বছরে (২০০৯-১৯) ঋণ অবলোপন বেড়েছে ৩১৭ শতাংশের বেশি। ২০০৯ সালে অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ ছিল যেখানে ১৫ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা, ২০১৯ সালে ৪৯ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকায় উন্নীত হয়।
ঋণখেলাপির বিষয়ে সমাজ গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে গত রোববার ‘বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের রাজনৈতিক অর্থনীতি’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনায় অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহানের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, ‘দেশের একশ্রেণীর মানুষ রাষ্ট্রকে শুধু দখল করেননি, তারা নিজেরাই রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছেন। তাদের নিয়ে কিছু করাও কঠিন। কারণ আমলাতন্ত্রের সাথে হাত মিলিয়েছেন তারা।’
রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ঋণ দেয়ার প্রধান মাপকাঠি হয়ে উঠেছে মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত কোনো গোষ্ঠীকে ঋণ দেয়া হলে, সেটি তখন একটি রাজনৈতিক সম্পদে পরিণত হয়। ওই রাজনৈতিক সম্পদই তখন ঋণের অর্থ ফেরত না দেয়ার ব্যাপারে কাজ করে। একবার যখন ঘটনাটি ঘটে, সেই গোষ্ঠী তখন আরো ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠে।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘দেশে দুর্বল নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা চলছে। বৃহৎ ব্যবসায়ী গোষ্ঠী রাষ্ট্রকে আয়ত্তে নিয়েছে। রাজনীতিবিদদের শুভবুদ্ধির উদয় না হলে এ দুষ্টচক্র থেকে অর্থনীতি, এমনকি দেশ বাঁচানো যাবে না।’
অসৎ ব্যবসায়ী, আমলা ও দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ- এই তিনে মিলে গোটা রাষ্ট্রকে কবজা করে ফেলেছে। শাসকশ্রেণী ও ঋণগ্রহীতারা যদি ব্যবসায়ী হন, তাহলে ইচ্ছা থাকলেও প্রতিষ্ঠানগুলো দায়িত্বশীল হওয়ার ব্যাপারে সক্রিয় করতে পারবে না রাষ্ট্র। তাই অর্থনীতিবিদদের মতো আমরাও মনে করি, রাজনৈতিক নেতৃত্বকে উপলব্ধি করতে হবে যে, ব্যাংককে খাত আর অপব্যবহার করা যাবে না। যারা ঋণ লুণ্ঠন করেছেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। কেবল তখনই সম্ভব বেপথু অর্থনীতিকে পথে ফিরিয়ে আনা।


আরো সংবাদ



premium cement