২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
নিজেরা নিজেদের প্রাণ নিচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা

গুরুতর অপরাধের বিচার নেই

-

আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান বৈশিষ্ট্য বিরোধী দলকে মাঠ থেকে বিতাড়িত করা। এ জন্য চরমপন্থা অবলম্বনেও তারা পিছপা হয় না। দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বেপরোয়া সহিংস কর্মকাণ্ড দেশবাসী দেখছেন। জাতীয় রাজনীতিতে প্রধান প্রধান বিরোধী দলকে নিষ্ঠুরভাবে অকার্যকর করা হয়েছে। যেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগ অন্য সব ছাত্র সংগঠন বিতাড়িত করেছে। এ জন্য ভয়ভীতি প্রদর্শন ও পীড়নের নীতি প্রয়োগ করা হয়। এখন কোথাও বিরোধীরা মাঠে নেয়। তাই বলে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ হয়েছে এমন নয়; বরং সহিংসতা থেকে প্রাণহানি আগের মতো হ্েচছ। ক্ষমতার দ্বন্দ্বে ফাঁকা মাঠে তারা নিজেরা নিজেদের খুন করছেন।
হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ে প্রকাশিত তথ্য, সরকারি দলের লোকজন মাঠ দখলে ব্যাপকভাবে একে অপরের ওপর চড়াও হচ্ছেন। বিগত ছয় মাসে ক্ষমতাসীন দলের ৭১ নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। এ সময়ে এক হাজার চারটি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এতে ৯১ জন নিহত ও চার হাজার ২৬ জন আহত হন। এর মূল কারণ নির্বাচনী সহিংসতা, অধিপত্য বিস্তার এবং আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ।
রাজনৈতিক সহিংসতার অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে দ্বাদশ সংসদ ও ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচন। এ নির্বাচন বিরোধীরা একজোট হয়ে বর্জন করেছেন। অথচ দেখা গেল, এসব নির্বাচন ঘিরে ৭৮১টি সহিংসতা হয়েছে। প্রাণ গেছে সরকারি দলের ৪৩ নেতাকর্মীর, আহত হন দুই হাজার ৫৩৮ জন। আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক মাঠ দখলে নিতে নিজের মধ্যে যখন খুনোখুনি করছেন; তখন বিরোধীরা মিছিল সমাবেশ করতে গিয়ে সরকারি দল ও পুলিশের পীড়নের মুখে পড়ছেন। এ সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা বিরোধীদের ৯৯টি সভা-সমাবেশ আয়োজনে বাধা দিয়েছে। আবার এসব সহিংসতার জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিরোধীদের দায়ী করে মামলা দেয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশি কঠোর অভিযানও অব্যাহত রয়েছে। সাত শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে; যার বেশির ভাগ বিরোধী দলের। ১২ জন বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। কারা হেফাজতে মারা গেছেন ৫৮ জন। নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে নির্যাতন ও যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে। সাংবাদিক হত্যা নির্যাতন ও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনাও এ সময়ে ঘটেছে। হামলায় দু’জন সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন ও ১২৮ জন আহত হয়েছেন। লাঞ্ছিত হয়েছেন ৩৯ জন, হুমকি পেয়েছেন ৩০ জন ও গ্রেফতার হয়েছেন তিনজন। গত ছয় মাসে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর ২৬টি হামলা হয়েছে, আহত হয়েছেন ২২ জন। একই সময়ে ৯১৭ নারী ও মেয়ে শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ১৮৯ জন ধর্ষণের শিকার। মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র দেশে আগের মতো রয়েছে।
বিগত ছয় মাসের মানবাধিকারসংক্রান্ত প্রতিবেদনে মূল দিকটি রাজনৈতিক সহিংসতা। এতে প্রধানত জড়িত সরকারি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন। লক্ষণীয় ব্যাপার, তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিতে ততটা উদ্যোগী নয়। বিচারব্যবস্থা সেভাবে কার্যকর নয়। অপরাধীদের নির্বিঘেœ তৎপরতা চালাতে দিয়ে বিরোধীদের ওপর পীড়নের নীতি অব্যাহত রাখলে মানবাধিকার পরিস্থিতি কখনো উন্নতি হবে না।


আরো সংবাদ



premium cement