২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক আন্দোলনে

স্বার্থে আঘাতই কারণ

-

দুর্নীতি অনিয়মের পাশাপাশি স্বার্থপরতাও আমাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে। চাচা আপন প্রাণ বাঁচা- এই নীতিতে চলছে দেশ। অন্যের প্রাণ চলে গেলেও নিজের প্রাপ্তি ঠিক থাকলে আমরা চুপ থাকাই শ্রেয় মনে করছি। এই নীতি কোনোভাবেই ন্যায্য নয়। দেশে এখন এমন অবস্থা বিরাজ করছে যখন সবাই কোনো না কোনোভাবে আক্রান্ত। যারা অবৈধভাবে বিপুল অর্থ কামিয়েছেন তারাও বিপদে পড়ছেন। আবার যারা দুর্নীতি না করলেও পাশ কাটিয়ে আত্মরক্ষার নীতি নিয়েছিলেন তারাও এখন এ থেকে বাঁচতে পারছেন না।
কথাগুলো বলতে হচ্ছে জাতির বিবেক বলে কথিত শিক্ষক বুদ্ধিজীবীদের স্বার্থপরতার কারণে। বর্তমান সরকারের সময়ে চোখের সামনে বড় বড় অন্যায় হলেও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা জাতির পক্ষ থেকে সোচ্চার হননি। অথচ জাতীয় যে কোনো সঙ্কটে, অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে শিক্ষক বুদ্ধিজীবীরা সবার আগে সোচ্চার হবেন এটাই ছিল আমাদের সংস্কৃতি। এর ফলে অনেক বিকার থেকে জাতি রক্ষা পেয়েছে। এবার দেখা গেল দেশে দুর্নীতি মহামারী আকারে ছড়িয়েছে। একই সাথে ভেঙে পড়েছে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো। অনিয়মের বাড়বাড়ন্ত এতটা হয়েছে যে, এসব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও এতে জড়িয়েছেন, পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচন কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠান কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলেছে। দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দূরে থাক কোনো ধরনের টুঁ শব্দ করেননি।
বিগত দেড় যুগের মধ্যে এই প্রথম দেখা গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রতিবাদ করছেন। তাদের আন্দোলনে ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অচল হয়ে গেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও শিক্ষকদের আন্দোলনে আছেন। শিক্ষকরা ঠিক তখনই সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিবাদ করার তাগিদ পেলেন যখন সরাসরি নিজেদের স্বার্থ ক্ষুণœ হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই লক্ষণও প্রকাশ পাচ্ছে যে, রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনাজনিত নৈরাজ্যের কারণে তারাও ভুক্তভোগী সম্প্রদায়ের মধ্যে পড়তে পারেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য চলমান পেনশন বদলে সরকার ‘প্রত্যয় স্কিম’ ঘোষণা করেছে। ১ জুলাই থেকে এটি চালু হয়ে গেছে। এর আওতায় মূল বেতন থেকে ১০ শতাংশ অর্থ কেটে নেয়া হবে। আগের ব্যবস্থায় ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পাওয়া যেত। নতুন নিয়মে তার উল্লেখ নেই। এ ছাড়া চাকরির বয়স ৬৫ থেকে কমিয়ে ৬০ বছর করার কথা আছে। তবে এটি কার্যকর হবে যারা নতুন নিয়োগ পাবেন তাদের ওপর। এদিকে সরকারি প্রশাসনের ক্ষেত্রে আগের পেনশন ব্যবস্থা থাকবে। কারণ সরকার তাদেরকে বেশি প্রয়োজনীয় মনে করছে। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের যে বিশেষ মর্যাদা তা ক্ষুণœ হবে। শিক্ষকরা আশঙ্কা করছেন ভবিষ্যতে সুযোগ সুবিধা আরো কমবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলনের অধিকার আছে। এমনকি তাদের বিশেষ মর্যাদা যাতে ক্ষুণœ না হয় সেই বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু শিক্ষার্থীদের ক্ষতির কারণ হলে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তবে লক্ষ রাখা উচিত দুর্নীতি অনিয়মের কারণে দেশের সব প্রতিষ্ঠান কার্যকারিতা হারালে বিশ্ববিদ্যালয়ও এ থেকে মুক্ত থাকতে পারবে না। তাই দেশে যেসব অনিয়ম বিশৃঙ্খলা চলছে সেসব বিষয়েও শিক্ষকদের কথা বলতে হবে। তারা যদি শুরু থেকে নৈরাজ্যকর ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতেন তাহলে অনেক অনিয়ম, অব্যবস্থা সম্ভবত ঘটতে পারতো না।


আরো সংবাদ



premium cement