২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
অনলাইন জুয়ার ভয়াবহ বিস্তার

নামকাওয়াস্তে ব্যবস্থা

-

এ দেশে যেকোনো ধরনের জুয়া খেলা আইনত নিষিদ্ধ। সামাজিকভাবে নিন্দনীয়। তবু নানা কৌশলে অনলাইন জুয়ার বিস্তার থেমে নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মূল ধারার সম্প্রচার মাধ্যমে, বিশেষ করে খেলাধুলার চ্যানেলসহ ডিজিটাল ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বাজি ও জুয়ার বিজ্ঞাপনের রমরমা প্রচারণা চলছে। ইদানীং শহরের বিভিন্ন বিলবোর্ডেও অনলাইন জুয়ার সাইটের বিজ্ঞাপন দেখা যাচ্ছে।
এসব বিজ্ঞাপন আইনত গ্রহণযোগ্য নয়। তবুও দেশে অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি। শুধু ফেসবুকে বাংলাদেশীদের লক্ষ্য করে জুয়ার বিজ্ঞাপনে বছরে ব্যয় করা হয় ১৫ কোটি টাকা।
দেশে যে অনলইন জুয়ার ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে তার প্রমাণ মেলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের বক্তব্যে। বাংলাদেশ সচিবালয়ে গত সোমবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, দেশের প্রায় ৫০ লাখ মানুষ অনলাইন জুয়ায় জড়িয়ে পড়েছেন, যা উদ্বেগজনক। বিভিন্ন বয়সের মানুষ জুয়ায় জড়িয়েছেন, চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্তরাও রয়েছেন এ তালিকায়।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দেশে অনলাইন জুয়ার বিস্তারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। দেশের তরুণ সমাজকে এর কবল থেকে রক্ষা করতে অবিলম্বে অনলাইনে জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধের দাবি জানায় সংস্থাটি।
অনলাইন জুয়ায় নানা ধরনের সামাজিক সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে। এতে আসক্ত হয়ে সর্বস্ব খুইয়ে আত্মহত্যার ঘটনা প্রায়ই খবরে আসছে। এ ছাড়া পারিবারিক অশান্তি, কলহ, বিষণœতার পাশাপাশি অবৈধ উপায়ে বিপুল বিত্তবৈভব অর্জনের ঘটনাও ঘটছে। একই সাথে অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের টাকা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, ই-ব্যাংকিং, ক্রেডিট কার্ড, ক্রিপ্টোকারেন্সিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে পাচার হয়। এ পাচার রোধে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটসহ (বিএফআইইউ) দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সংবিধানের ১৮ (২) অনুচ্ছেদ ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের জুয়া প্রতিরোধে সরকার বাধ্য। তবে দেশে এখনো জুয়া খেলা রুখতে ব্যবহার হচ্ছে ১৫৭ বছরের পুরনো আইন। সরকার জুয়া প্রতিরোধ আইন, ২০২৩ প্রণয়নের উদ্যোগ নিলেও এখনো তা খসড়া পর্যায়ে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে জুয়া প্রতিরোধে কঠোর ও যুগোপযোগী আইন আরো আগে প্রণীত ও প্রয়োগ হওয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তা হয়নি।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) গত বছরের জুলাইয়ে নিউজ পোর্টাল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, টেলিভিশনসহ জুয়ার বিজ্ঞাপন দৃশ্যমান হয়, এমন সব ওয়েবসাইট ব্লক করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনার পরও অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর পদক্ষেপ বড়ই দুর্বল।
সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, অনলাইন জুয়া খেলা হয় এমন দুই হাজার ৬০০টি সাইট এর মধ্যে বন্ধ করা হয়েছে। এসব সাইট পুনরায় চালু হওয়া ঠেকাতে প্রযুক্তি সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে বলেও সরকার দাবি করেছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আইনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে শুধু মুনাফার লোভে কিছু গণমাধ্যম দেশকে চরম বিপদে ঠেলে দিচ্ছে; যা কোনোভাবে দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক নয়।
আমরা মনে করি, দেশব্যাপী ভয়াবহভাবে প্রসারিত অনলাইন জুয়া রুখতে যেমন এসব সাইট বন্ধ করতে হবে, পামাপাশি চালাতে হবে সাঁড়াশি অভিযান।


আরো সংবাদ



premium cement