২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল

দক্ষিণ এশিয়ার গণতন্ত্রের সুবাতাস

-

ভারতের পার্লামেন্ট অর্থাৎ লোকসভা নির্বাচনের ঘোষিত ফলাফলে ইতোমধ্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে, কোনো দল এবার এককভাবে সরকার গঠন করতে পারবে না। সরকার গঠনে জোট সঙ্গীদের সমর্থন অপরিহার্য। এতে জোটের শরিক দলগুলোর গুরুত্ব বাড়বে। এনডিএ জোটের শরিকদের সমর্থন নিয়ে বিজেপি সরকার গঠন করলেও কতদিন টিকবে বলা কঠিন। বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, জোট সরকার মেয়াদ পূর্তির আগে ভেঙে গেছে। তাই বলা অসঙ্গত হবে না যে, একদশক ধরে ক্ষমতায় বিজেপির যে একচ্ছত্র প্রাধান্য ছিল, তার অবসান ঘটল। আসলে এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটাই যে, জিত হয়েছে ভারতীয় জনগণের। সব পূর্বাভাস ভুল প্রমাণ করে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন বিরোধী ইন্ডিয়া জোট আশাতীত ফল করেছে। এতে শক্তিশালী বিরোধী দলের লোকসভায় সরব উপস্থিতি দেশটির গণতান্ত্রিক-ব্যবস্থা অবনমিত অবস্থা থেকে বলবান হবে।
নির্বাচনের ফলাফলে স্পষ্ট, নাটকীয় কিছু না ঘটলে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করবে।
লক্ষণীয়, গত দেড় দশক ধরে সারা বিশ্বে গণতন্ত্রের অবনমন ঘটেছে। দেশে দেশে স্বৈরাচারী শাসকের উত্থান ঘটেছে। এ রকম একটি প্রেক্ষাপটে ২০২৪ সালকে বলা হচ্ছে গণতন্ত্রের পরীক্ষার বছর। এর কারণ, চলতি বছর বিশ্বব্যাপী যত নির্বাচন হবে, আগে কখনো এক বছরে এত নির্বাচন হয়নি। ইতোমধ্যে বাংলাদেশসহ অনেক দেশে নির্বাচন হয়েছে। দুঃখজনক হলো, আমাদের দেশের নির্বাচনে দেশের প্রধান বিরোধী দলসহ বেশির ভাগ দল অংশ নেয়নি। বাংলাদেশে নির্বাচনী-ব্যবস্থাই উধাও হয়ে গেছে। অভিযোগ আছে, ক্ষমতাসীনদের মর্জিমাফিক এখন বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণ করে থাকে। নির্বাচন গণতন্ত্রের অন্যতম উপাদান হলেও নির্বাচনই যে গণতন্ত্র নয়, তা এখন সবার জানা। যে কারণে সারা বিশ্বের এ বছরের নির্বাচনগুলো নিয়ে প্রশ্ন ছিল, গণতন্ত্র রক্ষায় এগুলো ভূমিকা রাখতে পারবে কি না? কিন্তু এতগুলো নির্বাচনের মধ্যে যেসব দেশের দিকে সবার নজর ছিল এবং আছে, তার মধ্যে অন্যতম ভারত। কারণ, ভারতে সর্বাধিক ভোটার।
শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্বের যারা স্বৈরাচারবিরোধী লড়াইয়ে মাঠে ময়দানের কর্মী, তারা দেশটির সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে গভীর দৃষ্টি রেখেছেন। তাই ভারতের নির্বাচনী ফল বৈশ্বিকভাবে গণতন্ত্রকামীদের সামান্য হলেও আশার সঞ্চার করেছে। দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ভারতের এবারের নির্বাচন ভূমিকা রাখে। তবে এ কথা স্মরণে রাখতে হবে, গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রাম প্রতিদিনের।
যেকোনো দেশে পার্লামেন্টে বড় আকারের বিরোধী দলের উপস্থিতি সরকারের কর্মকাণ্ডের জবাবদিহির পরিবেশ জোরালো করে। এবারের নির্বাচনে ভারতে যেহেতু হিন্দুত্ববাদী প্রভাব কমেছে, তা বাংলাদেশের জন্য নিঃসন্দেহে ইতিবাচক হবে। সাথে সাথে নির্বাচনী এ ফলের একটি বৈশ্বিক গুরুত্ব আছে, বৈশ্বিক রাজনীতিতে এর প্রভাব পড়বে, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে। এ কথা বলা যায়, ভারতে গণতন্ত্রের চর্চা বলিষ্ঠ হলে তা দক্ষিণ এশিয়ার গণতন্ত্রকামী মানুষের জন্য প্রেরণাদায়ক বিবেচিত হবে।


আরো সংবাদ



premium cement