২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশ

তথ্যের প্রবাহ উন্মুক্ত রাখুন

-


একটি প্রতিষ্ঠানের সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ওপর। প্রতিষ্ঠানে কোনো ধরনের দুর্নীতি কিংবা অনিয়ম হলে সেটি প্রকাশ হওয়া সবচেয়ে নিরাপদ। এতে প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ মিলে, প্রতিষ্ঠানটি পুনরায় ক্ষতির শিকার হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যায়। বাংলাদেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন দুর্নীতি-অনিয়ম তুঙ্গে। দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা কাঁধে তুলে নিয়েছেন এসব ধামাচাপা দেয়ার কাজ। এ অবস্থা একটি-দু’টিতে নয়, প্রায় সব প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ কাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে সেখানে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে হাতেগোনা যে কয়টি প্রতিষ্ঠান সত্যিকার অর্থে বিকশিত হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক এর মধ্যে অন্যতম। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় সফলতা অর্জন করে। প্রতিষ্ঠানটির দক্ষ পরিচালনায় দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনাও ভালো ভিত্তি পেয়েছিল। এখন প্রতিষ্ঠানটি নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও নিজেদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন না করায় জাতির সামনে বিচারের কাঠগড়ায়। যেখানে সব ধরনের আর্থিক অনিয়ম রোধে কার্যকর ভূমিকা নেবে; সেখানে নিজেদের ভাণ্ডারে থাকা অর্থ চুরি যাওয়া রোধ করতে পারেনি। সে সময়ে ব্যাংকের গভর্নর নিজে রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আট কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির ঘটনা জাতিকে জানতে হয়েছে দেরিতে, ফিলিপাইন থেকে। সে দেশে এটিকে দুর্নীতি হিসেবে শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার পর। কেন্দ্রীয় ব্যাংক চোর ধরার চেয়ে ঘটনা ফাঁস বন্ধ করতে চেয়েছে।

বিগত দেড় দশকে ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এখন গ্রাহক ব্যাংকে গিয়ে গচ্ছিত অর্থ তুলতে পারছেন না। এ ভয়াবহ আর্থিক অনিয়ম রোধে বিগত বছরগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো ভূমিকা পালন করতে পারেনি। বরং নিজেদের ভাণ্ডারে থাকা জাতীয় সম্পদও রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এখন আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে মজুদ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার খবর প্রকাশ হয়েছে ভারতীয় মিডিয়ায়। কাছাকাছি সময়ে কর্তৃপক্ষ ব্যাংকের আঙ্গিনায় সাংবাদিক প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। এটি এমন এক সময় ঘটল যখন বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ হুহু করে কমার খবর পাওয়া যাচ্ছে। সরকারের হিসাবে নিট ১৩ বিলিয়ন ডলার, যা তিন মাসের দেনা পরিশোধে যথেষ্ট নয়। প্রকৃত মজুদ নিয়ে নানা কানাঘুষা রয়েছে।

সংবাদমাধ্যম সমকালীন শাসনব্যবস্থার চতুর্থ স্তম্ভ। একে অগ্রাহ্য করে দেশ পরিচালনা করা দুরূহ। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্ট থেকে সোনা চুরি, নগদ অর্থ চুরির ঘটনাও ঘটেছে। প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠেছে। একটি অনিয়ম ধামাচাপা দেয়ার পর সেখানে আরেকটি অনিয়ম ঘটার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। অথচ প্রথম অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সময় সেটি যদি বিস্তারিত জাতিকে জানানো হতো এবং সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হতো; তাহলে পরের অপরাধগুলো ঘটার সুযোগ থাকত না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশ কেন নিষেধ করা হচ্ছে- এ নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে শঙ্কা বাড়ছে। বড় বড় কেলেঙ্কারি এ সন্দেহকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। তারা কি কোনো কিছু আড়াল করতে চাচ্ছে? গোপন করে কোনো সমস্যার সমাধান মিলে না। তাই ব্যাংকের আঙ্গিনা সাংবাদিকদের জন্য উন্মুক্ত রাখা উত্তম। যাতে সেখানে অবাধ তথ্যপ্রবাহ থাকে, যা জাতির সম্পদ নিরাপদ রাখতে অধিকতর কাজে দেবে।


আরো সংবাদ



premium cement