২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বিপুল অঙ্কের দায় শোধে অপারগতা

অর্থনৈতিক সঙ্কট কি আরো ঘনীভূত

-

দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি যে ভালো নেই তা এখন না বললেও চলে। কিন্তু সঙ্কট উত্তরণে সরকারের নীতিনির্ধারকরা যে পথে হাঁটছেন, তার সাথে একমত নন স্বাধীনভাবে কাজ করা অর্থনীতিবিদরা। দেশের অর্থনীতিতে আবার কবে সুবাতাস বইবে তা অনিশ্চিত। বাস্তবে দেশে সরকারঘনিষ্ঠ মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ছাড়া বাদ বাকি মানুষ কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। তাদের জীবন চালানোই দায় হয়ে পড়েছে।
আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতি যে কত নাজুক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের বক্তব্যে স্পষ্ট। গত মঙ্গলবার রাজধানীতে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘মোয়াজ্জেম হোসেন স্মারক বক্তৃতা’ অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এত দিন গর্বের সাথে দাবি করত যে, দেনা পরিশোধে কখনো খেলাপি হয়নি। সে দাবি এখন আর থাকছে না। ঋণ পরিশোধ করতে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। জ্বালানির বিল, বৈদেশিক কোম্পানির মুনাফা, বিদেশী এয়ারলাইন্সের পাওনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাঁচ বিলিয়ন (৫০০ কোটি) ডলার যথাসময়ে পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে তেল আমদানি করে আমরা মূল্য পরিশোধ করতে পারছি না। দেশে ব্যবসায় করা বিদেশীরা মুনাফা নিতে পারছে না। এয়ারলাইন্স ব্যবসায়ীরা অর্থ পাচ্ছে না। তার মানে, গর্বের জায়গায় ফাটল ধরেছে।
অর্থনীতির অবস্থা নাজুক হওয়ার আলামত স্পষ্ট হয়, যখন বিদেশী ঋণপত্র খুলতে ব্যাংকগুলো ডলার সংস্থান করতে পারছিল না। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ডলার সঙ্কটে যথাসময়ে আমদানি দায় পরিশোধ করতে পারছে না দেশীয় ব্যাংকগুলো। সরকারি ব্যাংকগুলোতে এ সঙ্কট প্রকট। সরকারের প্রয়োজনীয় কেনাকাটায় পণ্য আমদানিতে এলসি খুলেছে এসব ব্যাংক। অতি প্রয়োজনীয় পণ্য যেমন- ডিজেল, সার, ভোগ্যপণ্যসহ শিল্প-কারখানার যন্ত্রাংশ আমদানিতে এলসি খোলা হয়। পণ্য আমদানিও করা হয়। কিন্তু দায় পরিশোধের সময় দেখা দেয় বিপত্তি। ব্যাংকে ডলার নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতা করার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক আগের মতো রিজার্ভ থেকে ডলার দিতে পারছে না। প্রয়োজনীয় ডলারের সংস্থান করতে না পারায় সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেনা পরিশোধের তারিখ বারবার পেছাতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। এতে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাদের ব্যাংক ব্যবস্থার সুনাম ক্ষুণœ হচ্ছে। পাশাপাশি যথাসময়ে এলসির দায় পরিশোধ করতে না পারায় ব্যাংকগুলোর বাড়তি চার্জ গুনতে হচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে পণ্যের আমদানি ব্যয়। বাড়ছে মূল্যস্ফীতি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য অভিযোগ করেন, জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকরা তথ্য পাচ্ছেন না, কিন্তু ব্যবসায়ীরা পাচ্ছেন। ব্যবসায়ীদের তথ্য দেয়া হলে বাজারে প্রভাব পড়ে, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। তিনি বলেন, দেশের নীতি নেতৃত্ব দুর্বল হয়ে গেছে। নীতি ব্যাখ্যা করতে কাউকে পাওয়া যায় না। দেশে নীতি সমন্বয়ের অভাব আছে। সমন্বয়হীনতা মোকাবেলায় রাজনৈতিক শক্তির দুর্বলতা আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দেশনা দেয়ার পরও একটি ব্যাংকের মালিকানা বদল হয়ে গেল কেন- প্রশ্ন রাখেন দেবপ্রিয়।
অর্থনীতিবিদদের মতো আমরাও মনে করি, মুদ্রানীতি ও আর্থিকনীতি সমন্বয়ে বিদ্যমান ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা দূর করতে হবে। কিন্তু সুশাসনের এই আকালে এ আশা দুরাশারই নামান্তর।


আরো সংবাদ



premium cement