২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে অবনতি

কোণঠাসা সাংবাদমাধ্যম

-


দেশে গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ পুরনো। সাংবাদিকদের হয়রানি, গ্রেফতার, নির্যাতন ও আইনগত নানা প্রতিবন্ধকতার সাথে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে একাধিক সরকারি দফতরে গণমাধ্যমের প্রবেশ কিংবা তথ্য সংগ্রহে নানান বিধিনিষেধ।
এমন প্রেক্ষাপটে গত শুক্রবার দেশে পালিত হলো ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম’ দিবস। ওই দিন বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকের ২০২৪ সংস্করণ প্রকাশ করে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স। এবার বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ১০০ পয়েন্টের মধ্যে ২৭ দশমিক ৬৪ পেয়ে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৫তম। গত বছর যা ছিল ১৬৩তম। প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শুধু আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া তথ্য ও মতপ্রকাশের অধিকার নিয়ে কাজ করা বৈশ্বিক সংগঠন আর্টিকেল নাইনটিনও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাংলাদেশকে রেখেছে ‘সঙ্কটজনক’ ক্যাটাগরিতে।

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের সাংবাদিকরা কতটুকু স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন, তা যাচাই করা হয়। এ সূচকে পাঁচটি বিষয় আমলে নেয়া হয়। এগুলো হলো- রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, আইনি অবকাঠামো, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট, আর্থসামাজিক অবস্থা ও নিরাপত্তা।
২১ বছরের ইতিহাসে গত বছর বাংলাদেশ সবচেয়ে কম স্কোর পেয়ে ১৬২তম অবস্থানে পৌঁছে। এ বছর আরো অবনতি হয়ে পৌঁছেছে ১৬৩তম অবস্থানে। ২০০৯ সালের পর থেকে ২০১৬ সাল ছাড়া বাংলাদেশ কখনো গণমাধ্যম সূচকে উন্নতি করতে পারেনি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সূচক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে কখনো দেশগুলোর উন্নতি হয়েছে, আবার কখনো অবনতি। একমাত্র বাংলাদেশের ২০১৬ সাল ছাড়া এ সূচকে ধারাবাহিকভাবে প্রতি বছর অবনতি হয়েছে।

নানা মহল থেকে প্রশ্ন উঠছে, আমাদের দেশে মুক্ত গণমাধ্যম কতদূর? দেশে এখন গণমাধ্যমে ঠিক কী ধরনের চাপ দৃশ্যমান? বাস্তবতা হলো- দেশে সাংবাদিকদের নির্যাতন ও হুমকি থেকে শুরু করে খুনের ঘটনাও আছে। তবে এ ধরনের পরিস্থিতি যে সবখানে বা সবাই এর মুখোমুখি হচ্ছেন; তেমন অবশ্য নয়। কিন্তু যেখানে এই পরিস্থিতি নেই, সেখানে আবার আছে তথ্য পাওয়া কিংবা সংগ্রহে নানা জটিলতা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারি দফতরগুলোতে এমন প্রতিবন্ধকতা দৃষ্টিকটুভাবে দৃশ্যমান হয়েছে। যেমন- কেন্দ্রীয় ব্যাংক, পরিকল্পনা কমিশনের মতো সরকারি দফতরে সাংবাদিকদের প্রবেশে কখনো নিষেধাজ্ঞা, কখনো কড়াকড়ি আলোচিত বিষয়। এসব ঘটনায় সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহে বাধার মুখে পড়ছেন।
কৌতূহলোদ্দীপক হলো- এখন পর্যন্ত যেসব জায়গায় সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা আসছে, সেখানে কোথাও কিন্তু ভুল সংবাদ পরিবেশনের অভিযোগ করা হচ্ছে না। বরং সরকারি দফতরগুলো একটা কিছু গোপন রাখতে চেয়েছে, তা সাংবাদিকরা প্রকাশ করে দিয়েছেন। সে কারণে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বা হচ্ছে।

নানা কারণে সরকার বা রাষ্ট্রসংশ্লিষ্ট কোনো কোনো তথ্য প্রকাশে চাপের মুখোমুখি হচ্ছেন অনেক সাংবাদিক। তবে ইদানীং সরাসরি সরকারসংশ্লিষ্ট নয়, এমন বিষয়েও চাপে পড়তে হচ্ছে। যেমন বিভিন্ন ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর দিক থেকেও এই চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। দেশের অনেক ব্যবসায়ী গ্রুপ আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তালিকায় ঋণখেলাপি। কিংবা নানা অনিয়ম করে অনেক ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে ঋণের নামে টাকা বের করে নিচ্ছেন। এসব নিয়ে সংবাদ করতে গেলেও রাষ্ট্রীয় অনেক সংস্থার চাপের মুখোমুখি হতে হচ্ছে সাংবাদিকদের।
আসলে দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জবাবদিহির সঙ্কট তৈরি হওয়ায় সংবাদমাধ্যমকে এমন চাপে পড়তে হচ্ছে। কারণ বিষয়টিকে রাজনৈতিক চেহারা দেয়া হচ্ছে। অপরাধকে অপরাধ হিসেবে দেখা হচ্ছে না। সামগ্রিকভাবে অসহিষ্ণুতা তৈরি হয়েছে, যেটি দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসার কুফল। এতে আরো রসদ জুগিয়েছে নিবর্তনমূলক আইন।
আমরা মনে করি, মুক্ত গণমাধ্যমের পরিবেশ বজায় রাখতে না পারলে দেশে টেকসই উন্নয়ন খুব কঠিন। বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণও দুরূহ, যা দেশী-বিদেশী প্রায় প্রতিটি সূচকে ফুটে উঠেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement