শ্রমিকের অধিকার রক্ষা করুন
- ০১ মে ২০২৪, ০০:০৫
মানুষকে কর্মপ্রচেষ্টা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি মানুষ একজন শ্রমিক। তবে মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি হয় একদল যখন হয়ে যায় দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। তারা শোষণ করতে শুরু করে অন্যদের। সাধারণত নিয়ন্ত্রণের ভূমিকায় থাকা মানুষেরা চেপে বসে বৃহত্তর শ্রমিক শ্রেণীর ওপর। নিজেদের অধিকার রক্ষায় তাই বিদ্রোহ করতে হয়েছে। রক্ত দিতে হয়েছে, প্রাণ গেছে বহু শ্রমিকের।
১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের হত্যাকাণ্ডে নিহত শ্রমজীবীদের আত্মত্যাগের সেই ঘটনার স্মরণে প্রতি বছর সারা বিশ্বে পালন করা হয় ঐতিহাসিক ‘মে দিবস’। এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য- শ্রমিকের দৈনিক আট কর্মঘণ্টার অধিকার প্রতিষ্ঠা। এ দাবিতে সেদিন শ্রমিকরা হে মার্কেটে জমায়েত হলে তাদের ঘিরে থাকা পুলিশের প্রতি এক অজ্ঞাত ব্যক্তি বোমা নিক্ষেপ করে। এর পরই পুলিশ শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। ফলে ১০-১২ জন নিহত হন। ১৮৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে প্যারিসের ‘দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক’ প্রথম কংগ্রেসে প্রস্তাব করা হয়- ১৮৯০ সাল থেকে শিকাগোর ঘটনার প্রতিবাদবার্ষিকী দেশে দেশে পালন করা হবে। ১৮৯১ সালের আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় কংগ্রেসে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। এরপর অনেক দেশেই মেহনতি মানুষের দাবির ফলে মে মাসের ১ তারিখ সরকারি ছুটির দিন হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানসহ ৮০টি দেশে দিনটি যথাযথভাবে পালন করা হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাতে ‘শ্রম দিবস’ পালন করা হয় সেপ্টেম্বর মাসে।
বাংলাদেশে বিভিন্ন দিবস পালন যেভাবে আনুষ্ঠানিকতায় পর্যবসিত হয়েছে, তেমন অবস্থা মে দিবসেরও। ঈদ পার হয়ে গেলেও বোনাস পাননি বহু শ্রমিক। বকেয়া বেতনের জন্য আন্দোলন এখনো থেমে যায়নি। দেশের প্রধান শিল্প পোশাক খাত, ইস্পাত, ভারী লোহা ভাঙা শিল্প, সিমেন্ট, তামাক ও সাবান তৈরির কারখানা এর মধ্যে রয়েছে। এ ছাড়া অনানুষ্ঠানিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের অবস্থা মন্দার কারণে আরো খারাপ। অন্যদিকে কৃষি খাতে জড়িত রয়েছে দেশের সবচেয়ে বৃহৎ শ্রমিক শ্রেণী। এই খাতের অবস্থা আরো খারাপ। আমরা কৃষি শ্রমিকের মর্যাদা দিতে পারিনি, পারিনি কৃষকের মর্যাদা দিতে। তারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপাদন করে কিন্তু এর উপযুক্ত মূল্য পায় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগীরা লুটে নিচ্ছে সব। সিন্ডিকেটের হাতে বন্দী হয়ে আছে বাজার। সেখান থেকে কৃষকের উদ্ধার পাওয়ার কোনো পথ দেখা যায় না।
দেশের বাইরে বিশেষত মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ার মতো দেশে বাংলাদেশের দরিদ্র ও বেকার তরুণ শ্রম বিক্রি করতে দলে দলে যাচ্ছেন নিজেদের শেষ সম্বল বিক্রি করে। কিন্তু সেখানে বৈরী পরিবেশে কাজ করার পরও তারা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত। যে অর্থ খরচ করে প্রবাসে শ্রমিকরা যাচ্ছেন, তাদের একটা অংশ সে পরিমাণ টাকা ভিসার মেয়াদে আয় করবেন, তা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাদের জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা বিধানে তবুও রাষ্ট্রকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে এ পর্যন্ত দেখা যায়নি। আমাদের সরকার তাদের স্বার্থরক্ষায় সামনেও যে সতর্ক পদক্ষেপ নেবে না, সেটি বোঝা যাচ্ছে।
বাংলাদেশে প্রতি বছর ২৫ থেকে ৩০ লাখ লোক নতুন করে শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি তো হয় না। ক্ষেত্রবিশেষে বরং বাজার সঙ্কুচিত হয়েছে। এতে করে অনানুষ্ঠানিক খাতের লাখ লাখ শ্রমজীবী বেকার হয়ে পড়েছেন। তাদের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। এ অবস্থায় দেশে বেকার ও আধা বেকারের সংখ্যা যেমন দ্রুত বাড়ছে, তেমনি নৈরাশ্য আর সামাজিক ও রাজনৈতিক অবক্ষয়ে মাদকের আসক্তি বাড়ছে যুবসমাজের মধ্যে। এতে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় শ্রমশক্তির হচ্ছে বিপুল অপচয়।
দেশকে এগিয়ে নিতে হলে শ্রমজীবীদের প্রকৃত কল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে। তাদের কর্মসংস্থান ও ন্যায্য মজুরি প্রাপ্তির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এজন্য সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন রয়েছে। একই সাথে ঘুষ, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দেশে কর্মরত শ্রমজীবীদের পাশাপাশি প্রবাসীদের অধিকার ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা