২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ধরাছোঁয়ার বাইরে ওরা

হামলাকারীদের শাস্তি হয় না কেন?

-

দৈনিক নয়া দিগন্তের ভোলা প্রতিনিধি জানান, ভোলার মনপুরা উপজেলার মেঘনা নদীতে নিষিদ্ধ চাঁইজাল উচ্ছেদ অভিযানে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন মৎস্য অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী। এতে উপজেলা মৎস্য অফিসের ক্ষেত্র সহকারী মনিরুল ইসলাম, মেরিন ফিশারিজ অফিসার মাহমুদুল হাসানসহ অভিযানে পাঁচজন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত ক্ষেত্র সহকারী মনিরুল ইসলাম ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। মেরিন ফিশারিজ অফিসার মাহমুদুল হাসান ঢাকায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। হামলার পরদিন মেরিন ফিশারিজ অফিসার বাদি হয়ে সরকারি কাজে বাধা প্রদানের দায়ে আটজনের নামোল্লেখ করে মনপুরা থানায় মামলা করেন। ঘটনার তিন দিন অতিবাহিত হলেও আসামিরা চিহ্নিত হওয়া সত্ত্বেও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। হামলায় গুরুতর আহত উপজেলা মৎস্য অফিসের ক্ষেত্র সহকারী মনিরুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার ভোরে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার নির্দেশে উপজেলা মেরিন ফিশারিজ অফিসার মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে একটি দল মনপুরার মেঘনা নদীতে অবৈধ চাঁইজাল উচ্ছেদ অভিযানে যান। তাদের সাথে মনপুরা থানার একজন উপ-পরিদর্শকসহ তিনজন পুলিশ সদস্য ও ট্রলারে মাঝিসহ ছয়জন শ্রমিক ছিলেন। তারা মনপুরা উপজেলার তুলতুলি মাছঘাটসংলগ্ন মেঘনা নদী থেকে অবৈধ চাঁইজাল উচ্ছেদ শুরু করেন। জেলেরা সংবাদ পেয়ে ৩০-৩৫টি ট্রলার ও একটি স্পিডবোট নিয়ে অভিযানকারী দলের ওপর হামলা চালায়। হামলার নেতৃত্ব দেয়া স্পিডবোটে থাকা আরিফ মাঝি, জসিম মাঝি ও মাসুদ পাটওয়ারী মিলে অভিযানকারী দলের ট্রলার থেকে মৎস্য অফিসের ক্ষেত্র সহকারী মনিরুল ইসলাম ও মেরিন ফিশারিজ অফিসার মাহমুদুল হাসানকে স্পিডবোটে তুলে নিয়ে বেদম মারধর করে। একই সাথে জেলেদের অন্য ট্রলার থেকে তারা অভিযানকারী দলের ওপর ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। অতিরিক্ত পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ হামলায় ক্ষেত্র সহকারী মনিরুল ইসলাম, মেরিন ফিশারিজ অফিসার মাহমুদুল হাসান, মৎস্য অফিসের ট্রলার মাঝি রাকিব, শ্রমিক সৈকত ও রিয়াজসহ পাঁচজন আহত হন। মনিরুল ইসলামের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং মেরিন ফিশারিজ অফিসার মাহমুদুল হাসানকে ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মনিরুল ইসলাম আরো জানান, হামলার সময় জসিম মাঝি, আরিফ মাঝি ও মাসুদ পাটওয়ারীকে বারবার নিষেধ করলেও তারা কোনো কথা শোনেনি। তারা এলোপাতাড়ি মারধর করে তাকে মাথায় আঘাত করলে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। মনপুরা হাসপাতালে আনার পর তার জ্ঞান ফেরে। হামলার সময় মোবাইল ফোন, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও তার পকেটে থাকা সাড়ে ছয় হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় হামলাকারীরা।
মনপুরা মৎস্য অফিসের মেরিন ফিশারিজ অফিসার মাহমুদুল হাসান জানান, তিনি পরদিন মনপুরা থানায় একটি মামলা করেছেন। হামলার সময় পায়ে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছেন। বর্তমানে ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মনপুরা উপজেলা মৎস্য অফিসের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা চরফ্যাশন উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন জানান, নিষিদ্ধ চাঁইজাল দিয়ে প্রভাবশালী মৎস্য ব্যবসায়ীদের মদদে জেলেরা পাঙ্গাশ মাছের পোনাসহ ছোট মাছের পোনা নিধন করছে। নিষিদ্ধ জালের বিরুদ্ধে মেঘনায় অভিযানে গেলে অভিযানে দায়িত্বরত অফিসারদের ওপর জেলেরা হামলা করে। অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী আহত হন। মামলা করা হয়েছে এ ব্যাপারে।
মনপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম জানান, জেলেদের সাথে মেঘনায় অভিযান পরিচালনাকারী উপজেলা মৎস্য অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলা হয়েছে। এ ঘটনায় ৩ এপ্রিল ফিশারিজ অফিসার মাহমুদুল হাসান বাদি হয়ে আটজনের নামোল্লেখ করে মামলা করেছেন। হামলার সাথে জড়িতরা ‘পলাতক’ থাকায় গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। জেলেরা সঙ্ঘবদ্ধ। আসামিদের গ্রেফতার করতে হলে সতর্কতার সাথে করতে হবে। এর পরও আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। হামলাকারীদের শাস্তি না হওয়া অবধি এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি চলবেই।


আরো সংবাদ



premium cement