২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
স্বাস্থ্য খাতে এসডিজির লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না

টার্গেট সামনে রেখে এগোতে হবে

-

স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের বরাদ্দ অনেক কম। বেশ কয়েক বছর ধরে এ ধারা চলে আসছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ খাতে সরকারের বরাদ্দ ছিল মাত্র ৫ শতাংশ। এদিক থেকে স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের বাজেট বরাদ্দ শুধু বৈশ্বিক পর্যায়ে নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের মধ্যেও সবচেয়ে কম। অথচ সবার জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ খাতে মোট বাজেটের অন্তত ১৫ শতাংশ বরাদ্দ করার তাগিদ দেয়।
ফলে স্বাস্থ্য খাতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন থেকে বাংলাদেশ অনেকটা পিছিয়ে আছে। স্বাভাবিকভাবে দেশে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে অসংক্রামক বিভিন্ন রোগে মৃত্যুর হার। অর্থনৈতিক অগ্রগতি নেতিবাচক হওয়ার সাথে এ অবনতির সম্পর্ক আছে। অত্যধিক মূল্যস্ফীতিতে আয়ের সাথে ব্যয়ের সামঞ্জস্য রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন বেশির ভাগ মানুষ। তারা নিয়মিত পুষ্টিকর খাবারের সংস্থান করতে পারেন না। এ ছাড়াও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত লবণ খাওয়া, তামাক সেবন, কায়িক শ্রমের অভাব এবং বায়ুদূষণের মতো বিভিন্ন কারণে দেশে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, কিডনি, শ্বাসতন্ত্রের রোগসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে, যা বর্তমানে দেশে মোট মৃত্যুর প্রায় ৭০ শতাংশ।
এদিকে স্বাস্থ্য খাতে এসডিজির লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর হার ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি হাজারে ২৫ জনে নামিয়ে আনা। আমাদের দেশে এখনো প্রতি হাজারে মারা যায় ৩৪ জন। একইভাবে বর্তমানে দেশে মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি ১০ হাজারে ১২১ জন। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে ২০২৩ সালের মধ্যে এটি ৪০-এ নামিয়ে আনতে হবে। এ ছাড়া বর্তমানে প্রতি হাজার জীবিত শিশু জন্মের পর মারা যায় ১৮ শিশু। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে এটি ১২ জনে নামিয়ে আনতে হবে। আর তা করতে হবে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে।
বর্তমান সরকারের অধীনে স্বাস্থ্য খাতের দুরবস্থার প্রতিফলন আমরা দেখেছি কোভিড-১৯ মহামারীর সময়। অতি সম্প্রতি সাধারণ ডেঙ্গুপ্রতিরোধেও একই দুর্বলতা সামনে এসেছে। সরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সেবাদানের নমুনা কেমন সেটি সবারই জানা। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণকারী জনগণের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা মোটে সুখকর নয়। গণমাধ্যমের খবরও একইরকম নেতিবাচক চিত্র উপস্থাপন করে। সব মিলিয়ে এসডিজির লক্ষ্য অর্জন থেকে দেশ যে কতটা পিছিয়ে সেটি স্পষ্ট।
এর পরও স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা: সামন্ত লাল সেন বলেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণের ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতে বিদ্যমান অনিয়ম-দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যস্থাপনা জিইয়ে রেখে এসডিজির লক্ষ্য অর্জন দূরের কথা ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা কোনোভাবে সম্ভব বলে মনে হয় না।
মানুষের স্বাস্থ্যগত সমস্যার ক্ষেত্রে পরিবেশের বড় ভূমিকা আছে। এ বিষয়ে সরকারের কোনো দফতর সক্রিয় নয়। বায়ুদূষণের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষে অবস্থান করছে দীর্ঘদিন ধরে। এমনও তথ্য উঠে এসেছে যে, অভ্যন্তরীণ ও বাইরের বায়ুদূষণে দেশে প্রতি বছর ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement