২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বান্দরবানে দিন-দুপুরে ব্যাংক ডাকাতি

জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

-

নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধান রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সবার বাধাহীন স্বাভাবিক জীবনযাপন নিশ্চিত করতে রয়েছে একাধিক রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাবাহিনী। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত দুর্বলতার কারণে কখনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে। এতে নাগরিকদের জান-মালের ক্ষতি হয়। তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। সর্বশেষ এমন ঘটনা ঘটেছে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে।
বান্দরবান জেলার দুই উপজেলায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দু’টি ব্যাংকের তিন শাখায় ডাকাতি, লুটপাট ও তাণ্ডব চালিয়েছে সশস্ত্র পাহাড়ি গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠনটি ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে তৎপর রয়েছে। কেএনএফ সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার নেতৃত্বে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা’ কমিটি গঠন করা হয় গত বছর মে মাসে। কমিটির সাথে কেএনএফের দ্বিতীয় দফা বৈঠক হয় গত ৫ মার্চ বেথেলপাড়ায়।
ওই বৈঠকের পরও মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সোনালী ব্যাংকের দু’টি ও কৃষি ব্যাংকের একটি শাখায় হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটায় কেএনএফ। বান্দরবানে ডাকাতি ছাড়াও কুষ্টিয়ার কুমারখালীর আলাউদ্দিন নগরে গত মঙ্গলবার রাতে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট শাখায় চুরি হয়েছে।
নয়া দিগন্তসহ গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকের শাখায় গত মঙ্গলবার রাত সোয়া ৮টায় হামলা চালায় অস্ত্রধারীরা। আর গত বুধবার দুপুরে থানচিতে সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের শাখায় হামলা করে। হামলাকারীরা ভল্টের চাবি না পেয়ে সোনালী ব্যাংক রুমা শাখার ম্যানেজার নিজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাকে উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সন্ত্রাসীরা ডাকাতিকালে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ১৪টি অস্ত্র, ৪১৫টি গুলি ও ১৭ লক্ষাধিক টাকা লুট করে। মানুষের মুঠোফোনও ছিনিয়ে নেয়। মারধর করে পাশের মসজিদের মসুল্লিদের। তাণ্ডব চালায় আশপাশের দোকানে। লুটপাটের পর ফাঁকা গুলি ছুড়ে গাড়িতে করে পালিয়ে যায়।
থানচিতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে থানার কাছে দিন-দুপুরে। ঘটনায় স্থানীয় লোকজন হতভম্ব। পার্বত্য এলাকার সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, ব্যাংক ডাকাতি ও সরকারি অস্ত্র লুট এবং ব্যাংক ম্যানেজার অপহরণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ। গত বুধবার সকালে বান্দরবান মুক্তমঞ্চে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে অপহৃত ম্যানেজারকে অক্ষত উদ্ধার ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তার দাবিতে মানববন্ধন করে রুমা উপজেলা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদ। উপজেলা পরিষদ এলাকায় এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সংগঠনের সভাপতি সুকান্ত দেব বলেন, ‘আমরা চরম আতঙ্কে রয়েছি’।
দিন-দুপুরে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় শুধু বান্দরবানে নয়, সারা দেশের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তা শঙ্কা দেখা দেয়া স্বাভাবিক। ক’দিন পর পবিত্র ঈদুল ফিতর। এ সময় দেশব্যাপী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বহুগুণে বেড়ে যায়। ব্যাংকে লেনদেন হয় যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। এ সময় বান্দরবানে ব্যাংক ডাকাতিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে এড়িয়ে যাওয়ার অবকাশ নেই। কুষ্টিয়ার কুমারখালীতেও ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট শাখায় চুরি হয়েছে। ব্যাপারটি ভেবে দেখার মতো। আশা করি, সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।


আরো সংবাদ



premium cement