আদর্শের জায়গায় পচন
- ৩১ মার্চ ২০২৪, ০০:০৫
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের কার্যকলাপ নিয়ে বিতর্ক থামছে না। তাদের কারো কারো দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতিসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের খবর প্রকাশ পেয়েছে গণমাধ্যমে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চলছে বহুমুখী আলোচনা-সমালোচনা। কেন ভিসিদের কর্মকাণ্ড এমন বিতর্কিত? সম্ভবত এর কারণ আমাদের সামগ্রিক মূল্যবোধের ধসের সাথে সম্পর্কিত। সমাজের সর্বত্রই মূল্যবোধের অবক্ষয় এখন নিরেট বাস্তবতা। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষকরা সমাজবিচ্ছিন্ন কোনো দ্বীপ নন; তাই তাদেরও মূল্যবোধের স্খলন হয়েছে। হয়তো একটু বেশিই। সে জন্য বেশি চোখে লাগে। শিক্ষক বা ভিসি নিয়োগের সময় যেসব মানদণ্ড অনুসরণের কথা রাজনৈতিক কারণে সেটি হচ্ছে না বহু বছর ধরে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিশূন্য নিয়োগ প্রক্রিয়ার কুফল এখন দৃশ্যমান হয়েছে।
আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বলতে সবার মধ্যে সমীহ জাগত। এখন সে অবস্থা নেই। কারণ, জ্ঞানী-গুণী, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন শিক্ষকদের নিয়মমাফিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় না। শুধু দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়। বর্তমানে সারা দেশে অর্ধশতাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এতগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ্যতাসম্পন্ন ভিসি, প্রোভিসি, ট্রেজারার, প্রক্টরের সঙ্কট রয়েছে। তদবিরবাজিতে পদ-পদবি বাগিয়ে নিচ্ছেন অনেকে। আবার অনেক ভিসি অযোগ্য হয়েও নিয়োগ পাচ্ছেন। আবার অনেকে যোগ্য হয়েও ওই জায়গায় যেতে পারছেন না। ফলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে যেমন যোগ্য ভিসি দেখা যেত, এখন ব্যাপক হারে অযোগ্যদের সমাহার হচ্ছে। অযোগ্যদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসালে যা হওয়ার তাই হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে এমন দৃশ্যের অবতারণা হচ্ছে, একটি বিশাল কক্ষে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ভিসি বসে আছেন। তার চারদিকে ফুলের তোড়া। রমজান মাসে ঢাকঢোল পিটিয়ে নেচে-গেয়ে স্বাগত জানানো হয় নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ভিসিকে। দৃষ্টিকটু দৃশ্যের অবতারণা হচ্ছে- ফুলের আসর থেকে নাচ-গান। তাদের কাজকর্মও একইরকম।
প্রতিনিয়ত স্বজনপ্রীতির সাথে নিয়োগ-বাণিজ্য চলছে। শেষ কর্মদিবসে নিয়োগ, ক্যাম্পাসে উপস্থিত না থাকাসহ নানা বিষয়ে সমালোচনা লেগে আছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নিয়ে। প্রায়ই ভিসিদের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। আবার অভিযুক্ত হওয়ার পরও ভিসিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। মনে হয়, তাদের যা ইচ্ছা করার অবাধ ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে কোথাও থেকে।
কিন্তু জাতির স্বার্থে আদর্শের জায়গাটা ঠিক রাখা জরুরি। একটি দেশ বিশ্বে তখন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে যখন ওই জাতির শিক্ষকসমাজ আদর্শিকভাবে নিজেদের শির উঁচু করে তুলে ধরে। কারণ, শিক্ষক হবেন আদর্শের বাতিঘর। তারা নতুন আশার আলো জাগাবেন। সেই তাদের যদি এমন দশা হয়; তবে সমাজে আশার আলো আসবে কোথা থেকে? সে কারণে শিক্ষকদের নৈতিক অবক্ষয় নিন্দনীয়। সঙ্গত কারণে শাস্তি হওয়া উচিত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া শিক্ষক অর্থাৎ ভিসিদের। কিন্তু বাস্তবতা হলো, দেশ অতিমাত্রায় রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়েছে। তাই রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত ভিসিদের বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণিত হওয়ার পরও তারা পার পেয়ে যাচ্ছেন। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে শিক্ষাব্যবস্থাতেও জেঁকে বসেছে অন্যায়-দুর্নীতি। আর এর জন্য দায়ী আদর্শের জায়গায় পচন ধরা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা