আত্মশুদ্ধি অর্জন হোক লক্ষ্য
- ১২ মার্চ ২০২৪, ০০:০৫
শুরু হয়েছে মুসলিমের সংযম সাধনার বিশেষ মাস রমজান। এ মাসে এমন এক চর্চা হবে যাতে তার প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রিত হয়। বিশেষ করে আহারে রাশ টানার মাধ্যমে এটি হবে। এর ফলশ্রুতিতে লোভ লালসা যৌনতায় পরিশুদ্ধি আসবে। আমাদের জাতীয় জীবনে চলছে চরম বিশৃঙ্খলা। এর প্রধান কারণ অতিমাত্রায় ভোগের প্রবণতা। রমজান তাতে রাশ টেনে ধরে জীবনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে এমন প্রত্যাশা জাগালেও কার্যত সেটা হচ্ছে না।
সিয়াম মুসলিমদের অবশ্য পালনীয় একটি বিধান। সূরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘হে বিশ্বাসীরা, তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল; যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।’ একজন মানুষ কিভাবে আল্লাহভীরু হবেন তার বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে কুরআনে। এ মাসের একটি বিশেষ মর্যাদা হচ্ছে এ মাসে অবতীর্ণ হয়েছে সেই কুরআন। একই সূরার ১৮৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,‘রমজান মাস যাতে অবতীর্ণ হয়েছে কুরআন, এতে মানুষের জন্য রয়েছে হেদায়েত আর পথ পরিচালনার স্পষ্ট বর্ণনা এবং সেটা সত্য-মিথ্যার মানদণ্ড (ফোরকান)।’
রমজান মাসের আরো একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে- এ মাসে এমন একটি রাত রয়েছে সেটা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলা হয়েছে সূরা কদরে। সেই রাতে ফেরেস্তারা এবং রূহ নেমে আসে ধরার পৃথিবীতে। তারা প্রতিপালকের আদেশ নিয়ে মানুষের কাছে আসেন। মূলত এই কুরআন বোঝার কৌশল তারা মানুষের কাছে এদিন পৌঁছে দেন। দিনের বেলায় অভুক্ত থাকার পাশাপাশি তাই এই মাসের প্রতিটি রাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেউ যদি এই মাসে কুরআনের প্রকৃত বুঝ পেয়ে যান তিনি হয়ে যাবেন ধন্য।
এই ধরনের একটি উচ্চ ফজিলতের মাসে ধনী-গরিব সব একাকার হয়ে যাবেন। সবাই আগের চেয়ে পরিমাণে কম খাবেন। যাতে তারা ক্ষুধার কষ্ট বুঝতে পারেন। আবার এটা তাদের প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে মোক্ষম ভূমিকা পালন করবে। এমনটা অনুশীলন করলে দেশে খাদ্যচাহিদা কমে যাওয়ার কথা। দেশের ১০ কোটি মানুষও যদি রমজান উপলক্ষে এক মাসে একবেলা কম খায় তাহলে তিন কোটির চেয়ে বেশি মানুষের এক মাসের খাদ্য বেঁচে যাবে। চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে এ মাসে পণ্যমূল্য কমে যাওয়ার কথা। বিগত বছরগুলোতে আমরা দেখেছি এর উল্টো চিত্র। সব জায়গায় যেন একটা খাই খাই ভাব। মজুদদাররা পণ্যের দাম বাড়িয়ে বেশি লাভ করে নিতে চায়। সরকার অধিক মাত্রায় বসিয়ে দেয় কর। দোকানিরা করে নিতে চায় সারা বছরের আয়। এদিকে পণ্যমূল্যের চাপে পিষ্ট সাধারণ মানুষের ত্রাহি অবস্থা। এদেশে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টানসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ বসবাস করে। সংযম প্রদর্শনের পরিবর্তে রমজানের লোভের এই লকলকে জিহবার কারণে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মুসলিম হিসেবে আমরা মানবতার কল্যাণের পরিবর্তে ক্ষতি করে বসছি।
প্রকৃত সিয়াম সাধনা মানুষের ফিতরাতে যে পাশবিক শক্তির উপস্থিতি আছে তা অবদমিত করে। ক্ষুধা ও পিপাসায় মানুষের জৈবিক চাহিদা খর্ব হয় এবং মনুষ্যত্ব জাগ্রত হয়। যেকোনো পরিস্থিতিতে ধৈর্য অবলম্বন, সহনশীলতা, পারস্পরিক সম্ভ্রমবোধ ও সৌজন্য প্রদর্শন, সর্বোপরি সব কাজে বুদ্ধি-বিবেচনাপ্রসূত মাত্রা ও মূল্যবোধের অনুসরণ ব্যক্তি তথা সমাজজীবনের অনিবার্য অবলম্বন হওয়া আবশ্যক। সিয়াম সাধনায় এ শিক্ষা মানুষ অর্জন করার কথা হলেও আমাদের মধ্যে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ মুসলিমপ্রধান হওয়া সত্ত্বেও বাস্তবতা ভিন্ন। রমজানে যেন সংযমের পরিবর্তে ভোগের বাঁধভাঙা জোয়ারে ভাসে জনজীবন। সংযম ও ত্যাগের মানসিকতার পরিবর্তে দেখা যায় বল্গাহীন ভোগের উদগ্র বাসনা। সবাই খাদ্য উৎসবে মেতে ওঠে। যে যার মতো স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার বানিয়ে নিই।
প্রকৃত রোজাদার হওয়ার মাধ্যমে নৈতিক এ অবক্ষয় মোকাবেলা করতে হবে। রমজান মাসে মুসলিমদের অঙ্গীকার করা উচিত, আমরা সত্যিকার উপলব্ধির সাথে রোজা পালন করব। এর শিক্ষা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রতিফলন ঘটাব। মানুষে মানুষে বৈষম্য, শোষণ ও অন্যায়ের অবসান ঘটাতে যথাসাধ্য কার্যকর ভূমিকা রাখব।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা