বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত দরকার
- ০৯ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
মিডিয়াকর্মীদের সামনে কাঁদছেন এক যুবক। চোখ মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে ভীতির লক্ষণ। চাহনি দেখে বোঝা যাচ্ছে তিনি নিরাপদ বোধ করছেন না। যুবকটির এ অসহায় আত্মসমর্পণের কারণ রাষ্ট্রে তার কোনো আশ্রয়স্থল অবশিষ্ট নেই। তার জীবনে যে আতঙ্ক নেমে এসেছে; সেজন্য তিনি তাদের দায়ী করছেন যারা নিরাপত্তা দিবেন। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে এ লক্ষণ বিগত ১৫ বছর ধরে দৃশ্যমান। যাদের কাছে নিরাপত্তায় নাগরিকরা ছুটে যাবেন তারা মানুষের জানমালের নিরাপত্তা কেড়ে নিচ্ছেন। এ অবস্থা ততদিন চলতে থাকবে; যতদিন দোষীদের আইনের আওতায় আনার তাগিদ প্রতিষ্ঠিত না হবে।
আলোচিত ঘটনার যুবক আবু বকর সিদ্দিক চট্টগ্রাম মহানগরীর অক্সিজেনের বাসিন্দা। তিনি সরকার অনুমোদিত একজন ফ্রিল্যান্সার। নিজের যোগ্যতা বলে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করেন। সকালে একটি রেস্তোরাঁয় চা পানের সময় গোয়েন্দা পুলিশের এক পরিদর্শক দলবল নিয়ে তাকে আটক করে। রাতে নগরের মনসুরাবাদে ডিবি হেফাজতে রাখা হয়। কেড়ে নেয়া হয় মোবাইল ও নগদ অর্থকড়ি। আঙুলের ছাপ নিয়ে তার মোবাইলের লক খোলেন পুলিশ সদস্যরা। আবু বকর অভিযোগ করেন, মোবাইল ব্যবহার করে তার উপস্থিতিতে দুটো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে পাঁচ লাখ করে মোট দশ লাখ টাকা তুলে নেন তারা। এরপর ওই মোবাইল নিজেদের কব্জায় রেখে দেন। মামলা দিয়ে পরের দিন তাকে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ।
এদিকে পুলিশের হাতে থাকা মোবাইলে একটি ডলার অ্যাকাউন্টে আবু বকরের দুই লাখ ৮২ হাজার ডলার ছিল। পুলিশের পাকড়াও থেকে বের হয়ে তিনি নতুন মোবাইল কিনেন। অ্যাকাউন্ট চেক করে দেখতে পান ওই অ্যাকাউন্ট থেকে দুই লাখ ৭৭ হাজার ডলার সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশী মুদ্রায় সেটা তিন কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এ অর্থ তিনি ফ্রিল্যান্সিং করে উপার্জন করেছিলেন। তিনি জানান, তার অভিযোগের পক্ষে সব তথ্য প্রমাণ তিনি দিতে পারবেন। এ ব্যাপারে পুলিশ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকাণ্ডে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অগোচরে যাতে কেউ কোনো অপকর্মে জড়িত হতে না পারেন সেজন্য নজরদারি কঠোর করা হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, বেশ কয়েক বছর ধরে পুলিশের বিরুদ্ধে জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার বহু অভিযোগ পাওয়া গেছে। হয়রানি হুমকি ছিনতাই ডাকাতি ঘরবাড়ি জমি দখল চাঁদবাজি এমন কোনো অপরাধ নেই; যাতে পুলিশের সদস্যদের পাওয়া যায়নি। এমনকি বিশেষ বাহিনীগুলো বিশেষ সুবিধা নিয়ে তুলনামূলক অপরাধ আরো বেশি করেছেন। আবু বকরের সৌভাগ্য হচ্ছে তিনি মিডিয়ার সামনে এসে কেঁদে অভিযোগ জাতির সামনে উত্থাপন করতে পেরেছেন। বহু ভুক্তভোগীর ক্ষেত্রে এমন সুযোগ হয়নি। তারা পীড়নের শিকার হয়ে নীরবে চোখের পানি ফেলেছেন। এ ধরনের একটি অসুস্থ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো পথ দেড় দশক ধরে দেখা যায়নি।
জবরদস্তি করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর সিএমপি কঠোর নজরদারি করেছে। এমনটা আমরা বহু ক্ষেত্রে দেখেছি, ঘটনা ঘটার পর সতর্কতা প্রদর্শন। যে সতর্কতা দরকার ছিল ঘটনা ঘটার আগে। সাধারণ মানুষকে অসহায় করে অর্থ ছিনিয়ে নিবে ডাকাতরা। এর প্রতিকার করে দিবে পুলিশ। দুর্ভাগ্য, ডাকাতরা যা করে সেই কাজের জন্য পুলিশ সদস্যরা অভিযুক্ত হচ্ছেন। এ ধরনের ঘটনা একটি-দু’টি হলে এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে এড়িয়ে যাওয়া যেত। এটা একটা সাধারণ প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সিএমপির উচিত আবু বকরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এরপর তার উত্থাপিত অভিযোগের বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করে অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনা। পুলিশের অপরাধ দূর করতে হলে এই বাহিনীর ভেতরে থাকা অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। বর্তমান সরকারের সময় আমরা এ ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার কোনো তাগিদ দেখিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা