২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
মিউনিখ সম্মেলনে বিশ্বের এক সুর

স্বাধীন ফিলিস্তিনই সমাধান

-

ফিলিস্তিন ইস্যু ৭৫ বছর ধরে বিশ্বশান্তির জন্য গুরুতর সঙ্কট হিসেবে রয়ে গেছে। অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের প্রতিষ্ঠার পর সেটি হয়ে ওঠে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য এক দুঃসহ বিষফোঁড়া। এই বিষফোঁড়া সর্বতোভাবে টিকিয়ে রেখেছে ওই দু’টি রাষ্ট্র- যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য এবং তাদের অনুসারী গোটা পাশ্চাত্য সভ্যতা। গণতন্ত্র, সর্বজনীন মানবাধিকার, ন্যায়বিচার ও নীতি-নৈতিকতাসহ যেসব মৌলিক আদর্শ চলমান বিশ্ব ব্যবস্থার কথিত ভিত্তি বরা হয়, তার সব কিছু সমূলে নস্যাৎ করেছে ইসরাইল ও তার অন্ধ সমর্থক পাশ্চাত্য। বস্তুত যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক স্বার্থের বলি হয়েছে ফিলিস্তিনিরা। পশ্চিমাদের বিশেষ করে ওয়াশিংটনের মদদে গোটা ফিলিস্তিনি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার অব্যাহত প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে পারছে ইসরাইল। গত ৭৫ বছর ধরে ফিলিস্তিন পৃথিবীর বৃহত্তম কারাগারে পরিণত হয়েছে, সেখানে সার্বক্ষণিকভাবে চলমান রয়েছে ইসরাইলি রাষ্ট্রের যাবতীয় পীড়নযন্ত্র।
ফিলিস্তিন-ইসরাইল ইস্যুর একটি স্থায়ী সমাধানের তাগিদ বোধ করেন সারাবিশ্বের মানুষ। সমাধানের সূত্রও তাদের জানা। সেটি হলো ইসরাইলের মতোই ফিলিস্তিনিদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র গঠন। সেই তাগিদের সর্বশেষ প্রতিফলন ঘটেছে জার্মানির মিউনিখে সদ্য সমাপ্ত নিরাপত্তা সম্মেলনে।
এ সম্মেলন ছিল গত কয়েক দশকের মধ্যে এ ধরনের সবচেয়ে বড় আয়োজন। এতে সমবেত হন বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারকরা। সম্মেলনে আলোচনা হয় ফিলিস্তিন সঙ্কট নিয়ে। সেখানে একমাত্র ইসরাইল ছাড়া প্রায় সবাই ইসরাইল-ফিলিস্তিন সঙ্ঘাতের স্থায়ী সমাধানের আহ্বান জানান। তারা বলেছেন, দু’টি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হতে পারে এ সঙ্কটের একমাত্র সমাধান। এর আগে শুক্রবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব সঙ্কটের দুই-রাষ্ট্র সমাধানের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিশ্বশান্তি ও উন্নত বৈশ্বিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, শুধু দুই রাষ্ট্রের সমাধানের মাধ্যমে অঞ্চলটি দীর্ঘস্থায়ী নিরাপত্তা অর্জন করতে পারে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র-বিষয়ক প্রতিনিধি জোসেপ বোরেল দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদারের আহ্বান জানান। জার্মান চ্যান্সেলর দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানকে ইসরাইল ও ফিলিস্তিন উভয়ের জন্য সঙ্ঘাত থেকে বেরিয়ে আসার এবং একটি শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ অর্জনের চাবিকাঠি বলে উল্লেখ করেন। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদসহ মধ্যপ্রাচ্যের সব নেতা বলেছেন, এ অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার একমাত্র পথ জেরুসালেমকে রাজধানী করে সার্বভৌম স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ফিলিস্তিনি জনগণ উদ্বাস্তু অবস্থায় দিনযাপন করছেন। তারা আজো নিজ মাতৃভূমিতে ফিরতে পারেননি। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী অবিচার।
অনেক নেতা গাজায় চলমান গণহত্যার নিন্দা করে তা অবিলম্বে বন্ধের কথা বলেন। কিন্তু এসব আহ্বান কতটা কার্যকর হবে তা নিশ্চিত নয়। হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী কাতারের নেতা হতাশা প্রকাশ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র বিপুল অস্ত্রশস্ত্র দিচ্ছে ইসরাইলকে। আর ইসরাইল আন্তর্জাতিক চাপ প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়ে বলেছে, শুধু পক্ষগুলোর মধ্যে কোনো ধরনের পূর্বশর্ত ছাড়া আলোচনায় শুধুমাত্র সমাধান অর্জিত হতে পারে।
এটি একটি কৌশল। পিএলওর মতো মার্কিন তাঁবেদারদের সাথে আলোচনা করলে ইসরাইলের জন্য বেশি ফায়দা পাওয়া যাবে। হামাসের ক্ষেত্রে সেটি সম্ভব হবে না। তবে হামাসের ৭ অক্টোবরের অভিযানের পর পরিস্থিতি সম্ভবত ইসরাইলের জন্য অতটা অনুকূল নয়।


আরো সংবাদ



premium cement