২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ভূমধ্যসাগরে বাংলাদেশীদের প্রাণহানি

অবৈধপথে ইউরোপযাত্রা থামান

-

বাংলাদেশী তরুণরা ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে উন্নত দেশে পাড়ি দিতে মরিয়া। বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকায় যেতে তারা সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিচ্ছেন। দীর্ঘ বিপদসঙ্কুল পথ পাড়ি দিতে গিয়ে প্রায়ই প্রাণহানি ও নানা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। সর্বশেষ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী তরুণ। দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেকারত্বের হার কমার যে দাবি সরকার করছে; উত্তরোত্তর তরুণদের বেপরোয়া বিদেশযাত্রা তার সমর্থন করছে না। অবৈধপথে দালালের মাধ্যমে এভাবে বিদেশ যাওয়া বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। এ অবস্থায় মানবপাচারকারীরা বাংলাদেশকে তাদের নিশানা বানিয়েছে।
নতুন করে বাংলাদেশীদের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে ১৫ ফেব্রুয়ারি। লিবিয়া থেকে নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে তারা ইউরোপে পাড়ি দিচ্ছিলেন। ৫২ যাত্রী নিয়ে তিউনিসিয়া উপকূল পাড়ি দেয়ার সময় নৌকাটিতে আগুন ধরে যায়। তিউনিসিয়া নৌবাহিনী যখন তাদের উদ্ধার করছিল তাতে অগ্নিকাণ্ডে ৯ জন প্রাণ হারান। তাদের মধ্যে কয়জন বাংলাদেশী তা নিশ্চিত করা না গেলেও বেশির ভাগ বাংলাদেশী বলে জানা যাচ্ছে। ৪৩ জনকে তারা জীবিত উদ্ধার করেছে। তাদের মধ্যে ২৬ বাংলাদেশী। এদের একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
জাতিসঙ্ঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের হিসেবে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে পরবর্তী বছরের এপ্রিলের মধ্যে বিপদসঙ্কুল ভূমধ্যসাগর ও আফ্রিকার দুর্যোগপূর্ণ পথ পেরিয়ে পাঁচ হাজার ৩৬০ বাংলাদেশী ইউরোপের দেশগুলোতে প্রবেশ করেছে। যুবকদের বেপরোয়া ইউরোপযাত্রা আরো আগে থেকে শুরু হয়েছে। এটি ঠিক যে, তরুণদের একটি অংশ নিয়মিত ইউরোপে পৌঁছাচ্ছে। এর আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে আরেকটি শ্রেণী। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে প্রাণ যাচ্ছে তাদের। গহিন জঙ্গলে আটকা পড়ে, খাদ্যাভাবে, ভূমধ্যসাগরে সলিল সমাধি ও দালালের নির্যাতনে এমনটি ঘটছে। এ ছাড়া নিখোঁজ হয়ে গেছে অনেকে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইএমওর প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, প্রতিনিয়ত অবৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশীরা ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে বিপদে পড়ছেন। এ ছাড়া একটি বড় অংশ প্রতারকদের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন। লিবিয়াসহ আফ্রিকার কিছু দেশে গড়ে উঠেছে দালালদের একটি নেটওয়ার্ক। অনেক সময় তারা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আটকিয়ে মুক্তিপণও আদায় করে। এ জন্য তারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে তুলেছে নির্যাতনকেন্দ্র। বাংলাদেশেও রয়েছে ওই চক্রের সদস্য। আটকে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে অর্থ আদায় করা হয়। ওই চক্রের সদস্যদের প্রায় পাওয়া যায়। আটকও করা হয়। কিন্তু এ চক্র ভাঙা যায় না কিংবা তাদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজও বন্ধ হয় না।
ভূমধ্যসাগারে অগ্নিকাণ্ডে কবলে পড়া বাংলাদেশীদের সহায়তায় লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস সক্রিয় হওয়ার খবর পাওয়া ড়েছে। চিকিৎসাসেবা পেতে তিউনিসিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও আইওএমের সাথে তারা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছেন। তাদের এমন তৎপরতাকে সাধুবাদ জানাই। তবে ইউরোপে মানবপাচারের অন্যতম রুট হিসেবে লিবিয়াকে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেখানে কিছু বাহিনী গড়ে উঠেছে তারা প্রায়ই বাংলাদেশীদের আটক করছে। এমনকি বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক ব্যক্তিকে আটকের ঘটনাও তারা ঘটিয়েছে। তাদের হাত থেকে বাংলাদেশীদের বাঁচাতে সচেতনতামূলক তৎপরতা বাড়াতে হবে।
সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশে বড় কিছু অবকাঠামো নির্মাণ হলেও আমরা দরিদ্র অবস্থায় রয়েছি। এখানকার বেকার যুবকদের কাছে ইউরোপ স্বপ্নরাজ্য। তাই তারা উন্নত এসব দেশে যেতে ঝুঁকি নিচ্ছেন। এমন মৃত্যুর মিছিল থামাতে অবৈধপথে যাত্রা বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি কার্যকরভাবে গতিশীল করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement