২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
কৃষি তথ্য সার্ভিসে অনিয়ম-দুর্নীতি

বেড়ায় ক্ষেত খাচ্ছে

-

দেশে সরকারি অফিসে অনিয়ম-দুর্নীতি মরণব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। যারা দুর্নীতি করছেন তাদের লাজলজ্জার বালাই নেই। অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনে মরিয়া। ওই অর্থে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি তথ্য সার্ভিস দফতরে (এআইএস) যে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে; তা অতি নগণ্য। তবু এর মাধ্যমে এখানকার কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্বৃত্তায়নের মানসিকতা পরিমাপ করা যায়। এটি করতে গিয়ে ওই চক্র এআইএস থেকে কূটকৌশলে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিয়ে নতুন কর্মকর্তাদের পাশ কাটিয়ে একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কেনাকাটাসহ সব কিছু পরিচালনা করছে। এতে সরকারি অর্থ হাতিয়ে নেয়া তাদের পক্ষে সহজ হচ্ছে। আসলে যেখানে ক্ষেতের ফসল রক্ষায় কাজ করবে বেড়া, সেখানে বেড়াই ফসল খাচ্ছে।
কৃষি খাতের সামগ্রিক উন্নয়ন অগ্রগতি, সমস্যা সমাধানে করণীয়সহ কৃষিসংক্রান্ত খবরাখবর সব ধরনের গণমাধ্যমের মাধ্যমে তৃণমূলে কৃষকের দোরগোড়ার পৌঁছে দেয়া কৃষি মন্ত্রণালয়ভুক্ত প্রতিষ্ঠান কৃষি তথ্য সার্ভিসের প্রধান কাজ। এজন্য এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গণমাধ্যমের সাথে নিবিড় সম্পর্ক থাকার কথা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষপর্যায় থেকে শুরু করে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পর্ক বিভিন্ন ঠিকাদার ও পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে। কৃষি খাতের প্রচারের চেয়ে বিভিন্ন কেনাকাটাতে মনোযোগী তারা। গুটিকয়েক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে দুষ্টচক্র।
নয়া দিগন্তে প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের খবর অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন প্রকাশনায় কাগজ-কালি কেনাকাটায় বাজারদরের চেয়ে বেশি দাম দেখানো হয়। ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এ ছাড়া কৃষি রিলেটেড বিভিন্ন সংস্থা-প্রকল্পের ডকুমেন্টারি করার নামে দক্ষ জনশক্তিসহ সব সামর্থ্য থাকার পরও বাইরে থেকে করা হয় ডকুমেন্টারি। মানহীন এসব ডকুমেন্টারি তৈরি করে কলাকুশলীসহ বিভিন্ন খাতে খরচ দেখিয়ে সবাই মিলে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন। শুধু ডকুমেন্টারি নয়, সাতটি বেসরকারি টিভিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরিষার তেলবিষয়ক টিভিসি প্রচার বাবদ অতিরিক্ত খরচ দেখিয়ে বরাদ্দকৃত অর্থের একটি অংশ হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। কৃষি তথ্য সার্ভিসের বিভিন্ন কার্যালয়ে মোট ৯০টি ডিজিটাল এলইডি সাইনবোর্ড তৈরিতে প্রায় ২৬ লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। উন্মুক্ত দরপত্র ছাড়াই ১০টি কোটেশনের মাধ্যমে (প্রতিটি কোটেশনে দুই লাখ ৯০ হাজার টাকা) এ সাইনবোর্ড সরবরাহ দেখিয়ে অর্থ লোপাট করা হয়েছে।

সরকারি বিধান অনুযায়ী, তিন লাখ টাকার উপরে কেনাকাটায় উন্মুক্ত দরপত্র দিতে হয়। কিন্তু এআইএসের কর্মকর্তা নিজেদের সুবিধার্থে তিন লাখ টাকার নিচে (দুুই লাখ ৯০ হাজার ৮৯০ টাকা ও দুই লাখ ৯০ হাজার ৪০০ টাকা করে) ছোট ছোট কোটেশনে ভাগ করে প্রায় ৫৪ লাখ টাকার মুদ্রণ খরচ দেখিয়েছেন। সরকারি এ সংস্থা থেকে নিয়মিত প্রকাশনা মাসিক কৃষি কথা, টেলিফোন নির্দেশিকা, কৃষি মন্ত্রণালয়ভুক্ত বিভিন্ন সংস্থার লিফলেট, পরিচিতিসহ চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু মুদ্রণ করা হয়। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয় প্রায় এক কোটি ৬৬ লাখ টাকা। সারা বছর ব্যবহারে বরাদ্দকৃত বাজেট থেকে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইতোমধ্যে এক কোটি ৫২ লাখ ৯৬ হাজার ৮৯৫ টাকার কাগজ ও কালি কেনা হয়েছে।
বিস্ময়কর হলো- করোনাকালে ও করোনা-পরবর্তী সময়ে কোনো ফলমেলা হয়নি। যত দিন ফলমেলা হয়েছে তত দিন ‘ফল সম্ভার’ নামে বই বের হয়েছে। প্রতি বছর জুনে জাতীয় ফলমেলা উপলক্ষে প্রকাশিত হয় ‘ফল সম্ভার’ বই। এ বই মুদ্রণের পর তা মেলায় আগতদের সরবরাহ করা হয়। ২০২৩ সালে ফলমেলা অনুষ্ঠিত না হলেও ‘ফল সম্ভার’ বই কাগজ-কলমে প্রকাশ করা হয়েছে দেখিয়ে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে প্রায় সাড়ে আট লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
আমরা মনে করি, দুর্নীতির এমন বাড়বাড়ন্ত হয়েছে দেশে সুশাসনের অভাবে। কোনো ক্ষেত্রে জবাবদিহি না থাকায় যে যেভাবে পারছেন তারা সেভাবে দুর্নীতি করে অবৈধ অর্থের মালিক বনে যাচ্ছেন। এ প্রবণতা রোধ করা না গেলে আমাদের আগামী দিনগুলো ঘোর অন্ধকারে ঢেকে যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement