২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
যৌনপীড়ন সীমা ছাড়িয়েছে

বিচারের গতি নির্ধারণ করে ক্ষমতা

-

উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জোরপূর্বক যৌনতার এক হিড়িক পড়েছে। শুধু ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন নয়, শিক্ষকরাও একই কাজে অভিযুক্ত হচ্ছেন। এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে বিচার করার এক আত্মঘাতী পথে হাঁটছি আমরা। অভিযুক্তরা পার পেয়ে যাচ্ছে স্রেফ তার কতটা শক্তি রয়েছে তার ভিত্তিতে। যৌন হয়রানি করে সহজে বেঁচে যাওয়া যাবে যদি ক্ষমতাসীন দলের পদপদবি থাকে। কেউ যদি দলীয় বলয়ের বাইরে থাকেন তিনিও ক্ষেত্রবিশেষে এই ক্ষমতাকে ব্যবহার করে কঠিন অপরাধ করে পার পেতে পারেন। এমন বহু উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে। জোরপূর্বক যৌনতা কিছু ক্ষেত্রে ধর্ষণ সারা দেশে একটি রোগ আকারে ছড়িয়েছে। সর্বশেষ খবর হচ্ছে চোখে মুখে আঠা লাগিয়ে এক গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে।
অপরাধ ছোঁয়াচে রোগের মতো। একে যদি আপনি উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে প্রতিরোধ করেন তাহলে বাঁচতে পারবেন। আর যদি গুরুত্ব না দিয়ে উপেক্ষা করেন তাহলে সেটা দ্রুত চার পাশে ছড়িয়ে পড়বে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অপরাধের বিচার হবে কিনা সেটা নির্ভর করে ব্যক্তির পরিচয়ের ওপর। শুধু ধর্ষণ নয়, দেশের সামগ্রিক বিচারব্যবস্থায় এই প্রবণতা উচ্চহারে দেখা গেছে। ক্ষমতাসীনদের জন্য সাত খুন মাফ। বিরোধীদের পান থেকে চুন খসলেই রক্ষা নেই।
এই আমলে আমরা দেখলাম সরকারি দলের ছাত্রসংগঠনের নামে কলেজের ছাত্রাবাসকে অপরাধীদের দুর্গ বানানো হয়েছে। সিলেটে একটি কলেজে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে তারা দলবদ্ধ ধর্ষণ করে। এ ধরনের বখাটেরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না পাওয়ার কারণে একই সংগঠনের ছাত্ররা আবারো ক্যাম্পাসে স্বামীকে আটকে রেখে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা সংঘটিত করার সাহস পেয়েছে। এর প্রভাব দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেখেছি। উলঙ্গ করে ছাত্রীর ভিডিও করা, যৌন হয়রানি করার ঘটনা ক্যাম্পাসগুলোতে বহু বেড়েছে। শিক্ষকদের মধ্যেও যৌন অপরাধ করার প্রবণতা বেড়েছে। এসব ক্ষেত্রেও শিক্ষকদের বেশির ভাগ ঘটনার কোনো বিচার হয় না। কোনো ছাত্রী পীড়নের শিকার হয়ে বিচার পেতে হলে ক্যাম্পাসে বড় ধরনের আন্দোলন হতে হয়। অন্যথায় ধামাচাপা দেয়াই একটা রেওয়াজ হয়ে গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী দীর্ঘদিন এক শিক্ষকের দ্বারা নানাভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ এনেছেন। এর পক্ষে তিনি তথ্যপ্রমাণ দিয়ে উপাচার্যের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এর মধ্যে ক্যাম্পাসে যৌন হয়রানির প্রতিকার চেয়ে বড় বিক্ষোভ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ওই শিক্ষককে সাময়িক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এর কিছু দিন আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ আনেন এক ছাত্রী। বিচারের দাবিতে ছাত্ররা সেখানে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। ছাত্র শিক্ষকরা যখন আশকারা পেয়ে ছাত্রীদের বিরুদ্ধে যৌন হামলা চালাচ্ছে অন্যরাও এমন কাজেই উৎসাহিত হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সিএনজিচালক এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করেছে। ছাত্রীরা ক্যাম্পাস ও এর বাইরে যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন একই ধরনের সংস্কৃতির কারণে। খুলনার পাইকগাছায় এক গৃহবধূকে চোখে মুখে আঠা লাগিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে। কানের দুল, গলার চেইনও লুটে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এই প্রবণতা বেশ কয়েক বছর ধরে সারা দেশে উচ্চহারে দেখা যাচ্ছে।
বলতে গেলে, সারা দেশে নারী নিপীড়নের একটি প্রবণতা ছড়িয়ে গেছে। এর মূল কারণ ক্ষমতার বিকৃত চর্চা। যারা স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ রয়েছে এমন অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা কেন। ক্ষমতার উৎস বিচারের গতি নির্ধারণ করছে। এতে ধর্ষক ও যৌন নিপীড়করা উৎসাহ পাচ্ছে। উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এমনকি সারা দেশ থেকে নারী নিপীড়ন উচ্ছেদ করতে হলে এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুতগতিতে বিচার হতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement