২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
মানবাধিকার সংগঠনের নামে প্রতারণা

দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা দরকার

-

বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের মানবাধিকার সর্বোচ্চ আলোচিত। অসংখ্য মানুষের অধিকার হরণের অভিযোগ উঠেছে। বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, গুম হয়েছেন অনেকে। দেশীয় মানবাধিকার সংগঠন মানুষের অধিকার রক্ষায় ভূমিকা পালন করতে পারেনি। গুটিকতক মানবাধিকার সংগঠন মানুষের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করতে চেয়ে সফল হতে পারেনি। মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ কিছুটা স্বাধীন ও সাহসী ভূমিকা পালন করার পর এর সাথে যুক্ত ব্যক্তিরা হয়রানির শিকার হয়েছেন। সংগঠনটির নিবন্ধন অনিশ্চিত হয়ে গেছে। এসব ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও বৈশ্বিক মানবাধিকার সংগঠন সরকারের কাছে আপত্তি জানিয়েও কোনো প্রতিকার মেলেনি। মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা দেশে এখন অনেকটা অসম্ভব হয়ে গেছে। এ সময়ে জানা যাচ্ছে, মানবাধিকার সংগঠনের নামে প্রতারণা চলছে দেশে।
রাজধানীতে ২৮টি এবং সারা দেশে ৩০৫টি সরকার নিবন্ধিত মানবাধিকার সংগঠন রয়েছে। সহযোগী একটি দৈনিকের তথ্যমতে, এসব সংগঠনের বড় একটি অংশ প্রতারণামূলক কাজে লিপ্ত। ঢাকাতে পঞ্চাশের বেশি সংগঠনের সদস্য মানবাধিকারের নামে ধোঁকা দিচ্ছে। একশ্রেণীর লোক মানবাধিকার সংগঠনকে সাইন বোর্ড হিসেবে ব্যবহার করছে। এসব ব্যক্তি মূলত বিভিন্ন জায়গায় মধ্যস্বত্বভোগীর কাজ করছেন। তারা সংগঠনের বিভিন্ন পদবি এবং কর্মী হিসেবে কার্ড ছাপিয়ে প্রতারণায় নামেন। যে কোনো ধরনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আবির্ভূত হন। বিরোধ নিষ্পত্তি করে দেয়া কিংবা কাউকে বিপদ থেকে উদ্ধারে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। পারিবারিক বিরোধ ও জমিসংক্রান্ত মামলায় সহযোগিতার নামে টাকা হাতিয়ে নেন। এরাই সরকারি অফিসে তদবিরের কাজ করেন। তারা সংগঠনের মনোগ্রাম ও পতাকা ব্যবহার করেন। প্রশাসন ও পুলিশের লোকেরাও তাদের ভাবসাব দেখে প্রতারিত হচ্ছেন। মূলত মানবাধিকারের নামে আড়ালে তারা এর মাধ্যমে চাঁদাবাজি করছেন। পত্রিকাটি অভিযুক্ত মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম উল্লেখ করেছে।
সমাজসেবা অধিদফতর, জয়েন্ট স্টক কোম্পানি ও এনজিও ব্যুরোর কাছ থেকে নিবন্ধন নেয়ার সময় মানবাধিকার সংগঠনকে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে বিনা ফিতে মানুষের জন্য কাজ করার শর্ত থাকে। বিষয়টি নিশ্চিত করতে নিবন্ধন পাওয়ার আগে দীর্ঘ একটি যাচাই বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ২০১১ সালে বিষয়টিকে সরকার আরো পোক্ত করে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন ছাড়া কাউকে নিবন্ধন দেয়ার নিয়ম আর অবশিষ্ট নেই। লক্ষণীয়, এ সময় সরকার বহু এনজিওর নিবন্ধন বাতিল করেছে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এ সময়েও মানবাধিকারের নামে দেশে জালিয়াতি ও ভুয়া কাজ-কারবার চালু আছে। সম্প্রতি মানবাধিকার সংগঠন কিংবা এর সদস্যদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা আগে ছিল না। প্রশ্ন হচ্ছে, মানবাধিকার-বিষয়ক কড়াকড়ি পন্থা অবলম্বন করার ফল কী হলো? আরো জানা যাচ্ছে, শুধু নিবন্ধিত সংগঠনের নামে নয়, এর বাইরেও অনেকে মানবাধিকারের নামে জালিয়াতি করছেন। সব মিলিয়ে মানবাধিকারেও দেশে মানবাধিকার লুণ্ঠনের উপাদান যুক্ত হয়েছে।
সরকারের বিরুদ্ধে যখন মানবাধিকার সংগঠনের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত হওয়ার অভিযোগ জানা যাচ্ছে; তখন একদল প্রতারক মানবাধিকারকে জালিয়াতির হাতিয়ার বানিয়েছেন। আমরা মনে করি, সরকারের মানবাধিকারসংক্রান্ত নীতিতে বড় গলদ রয়েছে। যারা একেও প্রতারণার কাজে ব্যবহার করছেন তাদের বিরুদ্ধে নিতে হবে কঠোর ব্যবস্থা। অন্য দিকে, মানুষের অধিকার রক্ষায় মানবাধিকার সংগঠনকে কাজ করতে দিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement