২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
পানির দাম বাড়ানোর উদ্যোগ

আগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করুন

-

ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা পানির দাম আবারো বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। এবার কথা হচ্ছে ধনী ও গরিবের জন্য আলাদা দাম নির্ধারণের। এ জন্য ২০২২ সালে একটি কারিগরি সমীক্ষাও সম্পন্ন করেছে ওয়াসা। তাতে মানুষের আয়ের পার্থক্য অনুযায়ী পানির দাম ২৪ থেকে ১৪৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর বিস্ময়কর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে সব শ্রেণীর গ্রাহকের বিপুল ব্যয় বাড়বে।
ওয়াসা কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয়। মুনাফা করা এর লক্ষ্য নয়। এটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। ন্যূনতম দামে পানি সরবরাহ করা সংস্থাটির কাজ। কিন্তু সেটি কখনো হয়নি। নগরবাসীর কাছ থেকে অতিরিক্ত দাম আদায় করে প্রতিষ্ঠানটি এখনো লাভজনক অবস্থানে আছে। এবার যে দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তারও লক্ষ্য কেবল মুনাফা অর্জন। সংস্থাটিকে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করতে চান এর বহুল আলোচিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
বছরের পর বছর ধরে সংস্থার এমডি পদে বহাল এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজিরবিহীন বেশি বেতনভাতা পান। কিন্তু তার সময়ে সংস্থাটি মানুষের আস্থা হারিয়েছে সবচেয়ে বেশি। তার সময়ে দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা এমনকি অত্যধিক ব্যয়ে অকার্যকর নানা প্রকল্প নেয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। তিনি না পেরেছেন সুপেয় পানি সরবরাহ করতে, না পেরেছেন পানির দাম যৌক্তিক পর্যায়ে সীমিত রাখতে। চট্টগ্রাম, খুলনার চেয়েও ঢাকা ওয়াসার পানি উৎপাদন ব্যয় বেশি। খুলনা ওয়াসার ৬০ শতাংশ পানি শোধন করা হয়; আর ঢাকা ওয়াসার পানির ৭৫ শতাংশ ভূগর্ভস্থ যা সরাসরি সরবরাহ করা যায়। তার পরও ঢাকা ওয়াসার পানির উৎপাদন ব্যয় খুলনার চেয়ে বেশি।
ঢাকা ওয়াসার অনেক ব্যর্থতা ও দুর্বলতা স্পষ্ট হয়েছে নানা প্রকল্প বাস্তবায়নে।
যেমন, দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্প, পদ্মা পানি শোধনাগার প্রকল্প। বড় বড় এসব ব্যর্থতা ঢাকতে বারবার পানির দাম বাড়িয়েছে ঢাকা ওয়াসা।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, পানির দাম ধনী ও গরিবের জন্য আলাদা করার কোনো সুযোগ আছে কিনা। করা হলে সেটি আর সেবার পর্যায়ে থাকে কিনা। আবাসিক ও বাণিজ্যিক ব্যবহারকারীর জন্য আগে থেকে ভিন্ন ভিন্ন দর চালু আছে। এর যৌক্তিকতা কেউ অস্বীকার করেননি। ওয়াসা যদি পানির দাম ধনীর জন্য বেশি এবং গরিবের জন্য কম রাখে তাহলে তার প্রভাব কী হতে পারে? টেলি ও ডাক যোগাযোগ, ইন্টারনেট সেবাদানকারী, ক্যাবল অপারেটর, হাসপাতাল এবং রেল ও গণপরিবহনের মতো সেবাও কি সামর্থ্য অনুযায়ী সেবার দর নির্ধারণ করতে পারবে?
সেবা সর্বজনীন বিষয়, যা ধনী-গরিব, সুস্থ-দুস্থ সবার ক্ষেত্রে সমান হতে হবে। এটি প্রাকৃতিক সত্য। আল্লাহ ধনী-গরিব বেছে রোদ বৃষ্টির সুবিধা দেন না। হাসপাতালে টিকিটের দর দু’রকম হতে পারে না। তবে সামর্থ্য অনুযায়ী কেবিন বা সাধারণ শয্যা বেছে নেয়ার সুযোগ থাকে। পরিষেবার ক্ষেত্রে সেটি যুক্তি ও আইনসিদ্ধ হতে পারে না।
পানির দাম বাড়ানোর আগে ঢাকা ওয়াসার সার্বিক কর্মকাণ্ডের মূল্যায়ন করা হোক। স্বচ্ছতা ও যথাযথ সেবা তথা সুপেয় পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা হোক। তারপর যৌক্তিকভাবে দাম বাড়ানোর প্রশ্ন আসতে পারে।
দেশের মানুষ যখন দ্রব্যমূল্যের চাপে দিশেহারা তখন পানির দাম বাড়িয়ে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা না দেয়া প্রত্যাশিত।


আরো সংবাদ



premium cement