২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বিদেশী শিক্ষার্থী কমছে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সুনাম হারিয়েছে

-

একটি জাতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তার শিক্ষা। বিগত এক যুগ ধরে শিক্ষা নিয়ে চেষ্টা-প্রচেষ্টা দেখলে সহজে অনুমেয়, সরকার দিশা হারিয়েছে। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা কোথাও পরিকল্পনা ও আন্তরিকতার ছাপ নেই। শিশুদের কী পড়ানো হচ্ছে; এ নিয়ে আমরা উদাসীন। উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চোখে পড়ার মতো খবর হচ্ছে- সরকারি দলের ছাত্রসংগঠনের সন্ত্রাস, রক্তারক্তি, চাঁদাবাজি ও যৌন পীড়নের ঘটনা। জাতীয় স্বার্থ রক্ষার বদলে এখানে দলীয় স্বার্থ ক্ষেত্রবিশেষে কিছু ব্যক্তির স্বার্থ সর্বাধিক গুরুত্ব পাচ্ছে। এ অবস্থায় অভিভাবকরা নিজেদের সন্তানের শিক্ষা নিয়ে শঙ্কিত। এর প্রভাব পড়েছে বিদেশ থেকে আগত শিক্ষার্থীদের ওপর। একসময় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিছু দেশের শিক্ষার্থীর জন্য আগ্রহের তালিকায় থাকলেও সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখা যায়নি।
সহযোগী একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, ২০১০ সালে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থী এসেছেন ৩৫৯ জন। এক যুগের ব্যবধানে ২০২২ সালে যখন দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে, তখন বাইরের শিক্ষার্থী সংখ্যা হয়েছে ৬৭০ জন। গত এক দশকে অন্যান্য বিষয়ের মতো শিক্ষার বিপুল বৈশ্বিকায়ন ঘটেছে। যেখানে মানসম্পন্ন শিক্ষা পাওয়া যাচ্ছে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে, সেখানে শিক্ষার্থীরা ভিড় করছেন। আমরা উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেকটা ব্যাঙের ছাতার মতো বাড়িয়েছি। এখন দেশে সরকারি ৫৩ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা এর দ্বিগুণ- ১০০টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের ২০২২ সালের প্রতিবেদনে জানা যায়, সব মিলিয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে এক হাজার ৯৫৭ জন বিদেশী শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এর মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক হাজার ২৮৭ জন।
মঞ্জুরি কমিশনের পূর্বাপর তথ্য পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বিগত শতকের ’৭০ ও ’৮০ দশকে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা যখন হাতেগোনা ছিল; তখন বিদেশী শিক্ষার্থীরা তুলনামূলকভাবে বেশি আকৃষ্ট হয়েছেন। বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, প্রতিবেশী ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও আফ্রিকা থেকে শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে আগ্রহ নিয়ে পড়তে আসতেন। এর মূল কারণ, উন্নত মানের শিক্ষাদান ও শিক্ষার উন্নত পরিবেশ। এ দুটোর তীব্র ঘাটতি এখন বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে লক্ষ করা যাচ্ছে। দেশে এখন দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় হলেও দেশ থেকে বিদ্যা শিক্ষায় সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী বিদেশে চলে যাচ্ছেন। কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার বৈশ্বিক সূচকে তলানিতে অবস্থান করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের ১০০টির মধ্যে দূরে থাক এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নেই। বাংলাদেশে পড়তে আসা মালয়েশিয়া, ভারত, পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্রমাগত উন্নতি করছে। পুরোনো পাঠদান পদ্ধতি, গবেষণার অভাব আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে তীব্রভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে।
বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিমাত্রায় রাজনীতিকরণ হয়েছে। শিক্ষার মান উন্নয়নের চেয়ে সরকার কিসে তুষ্ট হবে সেদিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। এমনকি শিক্ষাপ্রশাসনে নিয়োগ পাচ্ছেন যোগ্য মেধাবী ও দক্ষ লোকের বদলে চাটুকার সঙ্কীর্ণমনারা। রয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। ক্যাম্পাসে সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন সীমাহীন অপকর্ম করছে। দেশপ্রেমিক ছাত্রকে রাতভর পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে। স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। এ ধরনের জঘন্য অপরাধ পুনঃপুন ঘটছে। যার প্রভাবে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ হয়েছে। বিদেশীরা এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়তে আগ্রহ হারাচ্ছেন। পরিস্থিতির এতটা অবনতি হলেও সরকারি কর্তৃপক্ষ তা স্বীকার করতে নারাজ। এ কারণে এ দেশে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অচিরেই উন্নত শিক্ষার মূল্যবোধ ফিরে আসবে সেই সম্ভাবনাও ক্ষীণ।


আরো সংবাদ



premium cement