২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ডেঙ্গু রোধে ব্যর্থতার জবাব নেই

মশার যন্ত্রণা বাড়ছে

-

রাজধানী ঢাকায় আবার বাড়ছে মশা। নগরীর প্রায় আড়াই কোটি মানুষ প্রতিনিয়ত মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। বিপুল অর্থ ব্যয়ের পরও মশা নির্মূল করা যায়নি। ফলে বাড়ছে মশাবাহিত নানা রোগের প্রকোপ। আক্রান্ত মানুষের ভিড় বেড়েছে হাসপাতালে। চলতি মৌসুমে ডেঙ্গুতে হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অথচ ডেঙ্গু রোগের জন্য দায়ী এডিস মশা নির্মূলে গত অর্থবছরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) খরচ করেছে ১২০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বাজেট করেছে প্রায় ২০০ কোটি টাকার। স্বাভাবিকভাবে গণমাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে, মশা নিধনের এত বিপুল অর্থ কোথায় যায়।

নাগরিক সেবা বাড়ানোর যুক্তিতে ২০১২ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন দুই ভাগ করা হয়। কিন্তু তাতে পরিষেবার কতটা উন্নতি হয়েছে সে হিসাব কোথাও নেই। তবে গত প্রায় এক যুগ সময়ে মশানিধনে দুই সিটির সার্বিক ব্যর্থতার তথ্যপ্রমাণসহ গণমাধ্যমে অসংখ্য রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে।
দু’টি করপোরেশন মশা মারতে প্রতি বছর যে অর্থ ব্যয় করে তা আদৌ কার্যকরভাবে ব্যবহার করা হয়নি বলে অনেকের ধারণা। তারা মনে করেন, বরাদ্দের বেশির ভাগ অর্থ সংশ্লিষ্টদের পকেটে ঢুকেছে। বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য মনে করার কারণ নগরজুড়ে মশার বাড়বাড়ন্ত। মশা মারতে কীটনাশক কেনায় যেসব কেলেঙ্কারির খবর গণমাধ্যমে এসেছে সেগুলোর যৌক্তিক ব্যাখ্যা সংশ্লিষ্টরা দিতে পারেননি। একইভাবে ড্রেনে তেলাপিয়া মাছ, গাপ্পি মাছ, হাঁস, ব্যাঙ ছেড়ে মশক নিধনের যেসব বৈজ্ঞানিক ভিত্তিহীন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেগুলোরও জবাবদিহির প্রশ্ন কখনো ওঠেনি। মূলত কীটনাশক কেনাবেচার সিন্ডিকেটের বিস্তার ঘটেছে এবং মশকনিধনে নিয়োজিত হাজারের বেশি জনবলের ব্যক্তিগতভাবে হৃষ্টপুষ্ট হওয়ার পথ তৈরি করা হয়েছে। ফল হয়েছে গুরুতর। মশাবাহিত রোগব্যাধির বিস্তার ঘটেছে। বিশেষ করে ডেঙ্গু এখন হয়ে উঠেছে মারাত্মক প্রাণঘাতী। চলতি ডেঙ্গু মৌসুমে সহস্র্রাধিক মানুষকে জীবন দিয়ে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার দায় শোধ করতে হয়েছে। প্রতি বছর এ সংখ্যা বাড়তে থাকবে। কারণ ডেঙ্গু এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী। সাম্প্রতিক এক গবেষণার তথ্য দিয়ে একটি দৈনিকে গতকাল প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, আগামী মার্চে ঢাকায় মশার উপদ্রব চরমে পৌঁছতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকার খাল ভরাট ও বেদখলের ফলে পানি জমে থাকছে এবং পরিবেশ দূষণ বাড়ছে। খাল পরিষ্কারের দায়িত্ব ওয়াসার কাছ থেকে বুঝে নিয়েছে সিটি করপোরেশন। কিন্তু খালগুলোর একটিও পরিচ্ছন্ন নয়। সবগুলো ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় হয়ে আছে এবং মশার বিস্তার ঘটাচ্ছে।
নগরবাসীর সমস্যার কোনো শেষ নেই। এক ঢাকায় দু’টি নগর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এটি বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত ও বসবাসের সবচেয়ে অযোগ্য নগরীগুলোর অন্যতম। এর সাথে স্বাস্থ্যঝুঁকির দিক থেকেও ঢাকা বিশ্বের সব নগরকে ছাড়িয়ে গেছে কি না সেটি গবেষণার বিষয়।
দুই সিটি কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে সব সময় করব, করছি- ধরনের কথা বলে থাকে। কিন্তু যুগ পেরিয়ে যায়, কিছু করে উঠতে পারে না। আমরা শুধু এ পরিস্থিতির অবসান চাই। দেখতে চাই, সঙ্কট দেখা দেয়ার আগে তারা করণীয় সম্পন্ন করেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement