কর্তাদের ঘুম ভাঙুক
- ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০৫
মাঝে মধ্যে নানা ধরনের চমক আমাদের সচকিত করে। সব শেষ চমক সৃষ্টি হয়েছে দেশীয় তাঁতীদের হাতে বোনা ও তাদের উদ্ভাবিত টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে। এ শাড়ির জিআই স্বত্ব দাবি করেছে ভারত। এ নিয়ে চলছে মহা শোরগোল। গত ২ জানুয়ারি ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় টাঙ্গাইল শাড়িকে সে দেশের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এরপর দেশটির সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় টাঙ্গাইল শাড়িকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে উদ্ভূত বলে প্রচার করে। এতে বিস্ময় প্রকাশ করেন বাংলাদেশের মানুষ। সামাজিক মাধ্যমে তৈরি হয় ব্যাপক আলোড়ন। প্রতিবাদ বিক্ষোভও হয়েছে অনেক জায়গায়।
কিন্তু এ বিষয়ে আমাদের সংশ্লিষ্ট কর্তারা ঘুমিয়ে ছিলেন। ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যে টাঙ্গাইল শাড়িকে নিজেদের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সে তথ্য জানতেন না আমাদের প্যাটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদফতরের (ডিপিডিটি) মহাপরিচালকও। অথচ ভারত টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বত্ব হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে সেই ২০২০ সাল থেকে। কিন্তু আমাদের কর্তাদের ঘুম ভাঙেনি। ভারত স্বীকৃতি দেয়ার পর এখন কী ব্যবস্থা নেয়া হবে সেটিও স্পষ্ট করতে পারেননি তারা। এ অবহেলা ও গাফিলতি গ্রহণযোগ্য নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।
ইন্টারন্যাশনাল প্রোপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) সংজ্ঞা অনুযায়ী, কোনো পণ্যের নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অবস্থান, নাম বা চিহ্নকে জিআই বলা হয়। ভৌগোলিক কারণে সে পণ্যের আলাদা গুণ ও খ্যাতি থাকতে হয়। যেহেতু এর গুণাগুণ ভৌগোলিক অবস্থানের ওপর নির্ভর করে, তাই পণ্য ও এর উৎপত্তিস্থলের মধ্যে সুস্পষ্ট সম্পর্ক থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারে জিআই পণ্যের চাহিদা বেশি। তাই সব দেশ ভৌগোলিক অবস্থানের সাথে সম্পৃক্ত নিজেদের পণ্যের স্বত্ব চায়।
বাংলাদেশে ২০১৩ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন হয়। আর ২০১৫ সালে আইনের বিধিমালা তৈরির পর জিআই পণ্যের নিবন্ধন নিতে আহ্বান জানায় পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদফতর (ডিপিডিটি)। এরপর আবেদনের ভিত্তিতে গত ১১ বছরে মাত্র ১৭টি পণ্যকে বাংলাদেশের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। এতে আমাদের পণ্য উৎপাদনকারীদের গা-ছাড়া মনোভাবও স্পষ্ট। ডিপিডিটি নিবন্ধনের জন্য আহ্বান জানানোর মধ্যে দায়িত্ব শেষ করেছে। উদ্যোগ আয়োজন নিয়েছে সামান্য। টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃত নয়। ঢাকাই জামদানি, রংপুরের শতরঞ্জি ও শীতলপাটির মতো পণ্যগুলো স্বীকৃতি পেয়েছে। এমন অনেক পণ্য আছে যেগুলোর স্বীকৃতি দেয়া ছিল জরুরি কিন্তু তা হয়নি। এমনকি সুন্দরবনের মধুর স্বত্বও আমাদের নয়, ওটা ভারতের। এমন অনেক পণ্য আছে, যেগুলো বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশে উৎপাদিত হয়, যেমন সিলেটের সাতকরার আচার, দিনাজপুরের লিচু, বাঘাবাড়ির ঘি ইত্যাদি। এ ধরনের সব পণ্যের জিআই স্বত্বের জন্য সবার আগে আবেদন করতে হবে।
বাংলাদেশী পণ্যের জিআই স্বীকৃতি হাতছাড়া হয়ে যাওয়া সরকারের নীতিগত দুর্বলতা ও তৎপরতার অভাব। তারপরও টাঙ্গাইল শাড়ির স্বত্ব প্রতিষ্ঠার সুযোগ আছে। এখন কাঠখড় যত পোড়াতে হোক টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই সনদ আদায়ে সক্রিয় হতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা