বেড়ায় ক্ষেত খেলে রক্ষা করবে কে
- ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
সুস্থ ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশের জন্য পর্যাপ্ত জলাধার প্রয়োজন। এক সময় বাংলাদেশ পুকুর-খাল, বিল, নদী-নালায় পূর্ণ একটি দেশ ছিল। যে দিকে তাকানো যেত সেখানে জলাধার ছিল। স্বচ্ছ স্ফটিকের মতো পানি আঁজলা ভরে খাওয়া যেত। গত কয়েক দশকের ব্যবধানে চিত্র একেবারে বদলে গেল। সারা দেশে যেন জলাশয় ভরাটের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। শহরাঞ্চলে আবাসনে এলোপাতাড়ি জলাশয় ভরাট করা হয়েছে। একই ধরনের আগ্রাসী কাণ্ড দেশব্যাপী দেখা গেছে। ২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব জলাভূমি দিবস উপলক্ষে সহযোগী একটি দৈনিকে বড় দু’টি শহরে জলাভূমি কমার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। অন্য একটি দৈনিকে নদী দখলের খবর দিয়েছে। উভয় খবর অনুযায়ী, খোদ সরকারি সংস্থার লোকজন রক্ষার বদলে নিজেরা জলাভূমি ভরাট ও দখল করছেন।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) শহরের জালাশয় ভরাট করেছে । নগরীর চান্দগাঁও ও কুয়াইশে জলাশয় ভরাট করে আবাসিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। ‘অনন্যা’ নামের ওই আবাসন প্রকল্পে ৬২ একর জমি। বাকলিয়ায় একই আকারের আরেকটি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সীতাকুণ্ডের গ্রামীণ এলাকায় জলাশয় ভরাট করে সেখানেও আবাসন প্রকল্প বানিয়েছে সিডিএ।
ঢাকায় ২৮ বছরের ব্যবধানে ৮৫ শতাংশ জলাধার বিলুপ্ত হয়েছে। ১৯৯৫ সালে শহরটির ২০ দশমিক ৫৭ শতাংশ জায়গাজুড়ে জলাধার ছিল। এক দশকের ব্যবধানে ২০০৫ সালে সেটি কমে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ হয়। ২০২৩ সালে এসে রাজধানীতে জলাধারের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৯১ শতাংশ। এ শহরে বড় বড় ভূমিদস্যু রয়েছে। মোটা দাগে তারা এ জন্য দায়ী হলেও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও ক্রমাগত জলাশয় ভরাট করছে।
ঢাকার সর্বত্র নালা, ঝিল, পুকুর ও জলাশয়ে পূর্ণ ছিল। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের প্রয়োজনে, ব্যক্তিবিশেষের আকাক্সক্ষায় এগুলো ভরাট করেছে, পরিবেশের ভারসাম্যের কথা মাথায় রাখেনি। এগুলো ভরাট করে ভবন কিংবা অন্য কোনো স্থাপনা নির্মাণের সময় রাজউক ও সিটি করপোরেশনও যথাসময়ে বাধা দেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মতো অভিজাত একটি প্রতিষ্ঠানও রাজধানীতে জলাশয় ভরাট করে ভবন নির্মাণ করেছে। পরিবেশ রক্ষা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে চলো নীতি নেয়। অনেক সময় দেখা যায়, কাজ সম্পন্নের পর আদালতের রায় আসে। সে সব ক্ষেত্রে জলাধার রক্ষায় বিকল্প পথ খোলা থাকে না। বড় শহরগুলোতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের এভাবে জলাধার ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণের বহু প্রকল্প ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আরো প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন।
এ দিকে উত্তরাঞ্চলের চারটি জেলায় পদ্মা, মহানন্দা, আত্রাই, বারনই নদী ও নরোদ নদ দখল করে নানা স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। এগুলোকে বসতবাড়ি ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী দখলকারীদের শনাক্ত করেছে। এদের মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ কর্মকর্তারাও রয়েছেন। তারা সরকারি সম্পত্তি বিনষ্ট ও পরিবেশ ধ্বংস করে নিজেদের আখের গোছাচ্ছেন। মূলত রাজনীতির ছত্রছায়ায় এ অপকর্ম ছড়িয়ে পড়েছে পদ্মা ও এর শাখা নদী ঘিরে। পানির অভাবে ধু ধু চরে পরিণত হওয়া জায়গাগুলো নতুন করে পানির প্রবাহ হবে সেই সুযোগ চিরতরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
পরিবেশের ভারসাম্যে জলাভূমি রক্ষা করতে হবে। এ জন্য আমাদের দেশে আইনের অভাব নেই। রয়েছে নদীরক্ষা কমিশন। বাস্তবতা হলো, আমাদের আইন ও এর বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান জলাভূমি রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারেনি। ক্ষেত্রবিশেষে নিজেরা জলাভূমি ভরাট করেছে। বেড়ায় যদি ক্ষেত খায় তা হলে সেটি রক্ষার কেউ থাকে না। আগে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিক করতে হবে। তাহলে দখলকারীদের হাত থেকে জলাশয় রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে আমরা সক্ষম হবো।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা