২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ঢাকায় চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য

সাধারণ মানুষ অসহায়

-

ঢাকা শহরে ব্যবসায় কিংবা কোনো নতুন ভবন নির্মাণ করতে গেলে চাঁদাবাজির শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। যেমন- ইন্টারনেট ব্যবসায়ী, কেবল টেলিভিশনের সংযোগদাতা (ডিশ ব্যবসায়ী), দোকানদারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়। কেউ মুখ খুলতে পারেন না। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে তার পক্ষে নিরাপদ থাকা কষ্টসাধ্য। অনেক সময় হামলা ও মারধরের শিকার হতে হয়। দুর্ভাবনার বিষয় হলো- রাজধানীর কিছু এলাকায় চাঁদাবাজির ঘটনা এখন সাধারণ দৃশ্যে পরিণত হয়েছে। একটি সহযোগী দৈনিক এ নিয়ে প্রধান প্রতিবেদন ছেপেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র বলছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি হয় পলাতক ও কারাবন্দী শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে। চাঁদাবাজদের তালিকায় ক্ষমতাসীন দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদেরও নাম রয়েছে। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গত ১৪ অক্টোবর রাতে দারুস সালাম থানার সহকারী কমিশনার ভূমি কার্যালয়ের (বর্ধনবাড়ী) সামনে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী শাহ আলম (৩৫)। পুলিশ সূত্রমতে, গত সাত মাসে রাজধানীতে চাঁদাবাজদের হাতে একজন নিহত ও নয়জন আহত হয়েছেন।
সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ব্যবসায়ী, ভবন নির্মাতা ও পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, রাজধানীর কোনো কোনো এলাকায় নতুন ব্যবসায় খুললে বা কেউ ব্যবসায় ভালো করলে চাঁদাবাজরা চাঁদা চায়। ব্যবসা নিয়ে কারো সাথে বিরোধ টের পেলে সুযোগ নেয়, আবার কেউ যদি নিরীহ হন, তাকে পেয়ে বসে। চাঁদা দিতে হয় নিয়মিত, কখনো মাঝে মাঝে।

যদিও ডিএমপি পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যাবে, ঢাকায় চাঁদাবাজির মামলা তত বেশি নয়। ২০২১ সালে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় চাঁদাবাজির ঘটনায় মামলা হয়েছিল ২২টি। পরের বছর এ সংখ্যা বেড়ে হয় ৫৯টি। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। চাঁদা না দেয়ায় রাজধানীতে অতীতে একাধিক ব্যবসায়ী খুন হয়েছেন। এ কারণে চাঁদাবাজির ঘটনায় এখন কেউ থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করতে চান না। কেউ জিডি করলে সন্ত্রাসীরা দ্রুত খবর পেয়ে যায়। তাই ব্যবসায়ীরা নীরবে চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। পুলিশ কর্মকর্তা কারো কারো মতে, ছিনতাইয়ের ঘটনায় যেমন সাধারণ মানুষ মামলা করেন না, তেমনি চাঁদাবাজির ঘটনায়ও ভুক্তভোগীরা পুলিশের কাছে যেতে চান না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে থানা-পুলিশও মামলা নিতে চায় না। তাই প্রকৃত চিত্র ডিএমপির পরিসংখ্যানে আসে না।
চাঁদাবাজি নিয়ে সহযোগী এক দৈনিকের প্রতিবেদককে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, চাঁদাবাজি ঠেকাতে জিরো টলারেন্স (শূন্য সহিষ্ণুতা) নেয়া হয়েছে। কিন্তু ভুক্তভোগীদের অনেকে বলছেন, তাদের নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়। অভিযোগ করলে উল্টো মারধর ও হামলার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
লক্ষণীয়, সাধারণ মানুষ চাঁদাবাজির ভুক্তভোগী হন দু’ভাবে। প্রথমত, অনেক মানুষকে সরাসরি চাঁদা দিতে হয়। দ্বিতীয়ত, চাঁদাবাজির কারণে পণ্য ও সেবার দাম বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীরা চাঁদা দেয়াকে তাদের ব্যবসায়িক খরচ হিসেবে ধরছেন। ফলে পণ্যের দাম বাড়াতে হচ্ছে তাদের।
সচেতন নাগরিকদের মতো আমরাও মনে করি, ধর্তব্য অপরাধ হিসেবে চাঁদাবাজির ঘটনায় থানা-পুলিশকে মামলা নিতে হবে। প্রতিটি অভিযোগ যথাযথভাবে তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। শুধুমাত্র তখনই সম্ভব হবে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করা। তা না হলে চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য কমানো যাবে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement