কৃষি বিভাগ শুধু চেয়ে দেখে!
- ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:২৫
দৈনিক নয়া দিগন্তের বেড়া (পাবনা) সংবাদদাতা জানান, পাবনা জেলায় আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে তিন ফসলি জমি। ফসলের মাঠে গড়ে উঠছে বসতি, ইটভাটা, পুকুর ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। প্রশাসনের অনুমোদন না নিয়েই ফসলি জমি ব্যবহৃত হচ্ছে। অথচ প্রশাসন কিছুই করছে না বলে জনমনে ক্ষোভ বিরাজ করছে। কৃষিজমি সুরক্ষা আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই। ফসলি জমির অপব্যবহার হচ্ছে। প্রতি বছর বিপুুল কৃষিজমি চলে যাচ্ছে অকৃষি খাতে। প্রতি বছর কমে যাচ্ছে শস্য উৎপাদন।
মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০০ সাল-পরবর্তী ১২ বছরে দেশে প্রতি বছর ৬৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর অকৃষি খাতে চলে গেছে। অবকাঠামো নির্মাণকাজের কারণেই প্রতি বছর তিন হাজার হেক্টর বিলীন হচ্ছে। ভূমি ব্যবহার নীতি ২০১০ ও কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি জোনিং আইন-২০১০ অনুসারে, কৃষিজমি কৃষিকাজ ব্যতীত অন্য কাজে ব্যবহার করা যাবে না। ‘ভরাট করে বাড়িঘর, কারখানা, ইটভাটা বা অন্য কোনো অকৃষি কাজের জন্য স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না’ উল্লেখ করে একটি নামেমাত্র আইন আছে। প্রয়োগ নেই।
কৃষকের আয়ের উৎস এই কৃষিজমি হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে। তিন ফসলি জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে ইটভাটা। প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরের তথ্য মতে, পাবনা জেলার ৯টি উপজেলা ও ১১টি থানা মিলে বৈধ ও অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা ১৯৩। বৈধ ইটভাটা ৪০টি। আর অবৈধ ইটভাটা ১৫৩টি। বেড়া উপজলোয় ১৬টি ভাটার বৈধ মাত্র চারটি। সদর উপজেলায় ৭১টি ইটভাটার বৈধ ১৫টি। ঈশ্বরদীতে ৫০টি ভাটার মধ্যে বৈধ পাঁচটি। আটঘরিয়া উপজেলায় দু’টি ভাটার মধ্যে বৈধ একটি। চাটমোহরে ছয়টি ভাটার মধ্যে চারটি বৈধ। সুজানগরে ১৭টি ভাটার ৯টি বৈধ। ভাঙ্গুড়ায় সাতটির মধ্যে বৈধ দু’টি। ফরিদপুর ও সাঁথিয়া উপজেলাতে ১১টি করে ২২টি ইটভাটার একটিরও অনুমোদন নেই।
ইটভাটা মালিকদের তথ্য মতে, জেলায় ২৮০টি ইটভাটা চালু রয়েছে। প্রতিটি ইটভাটা স্থাপনে যদি ১০ বিঘা করে জমি ব্যবহৃত হয়, তা হলে ২৮০টি ইটভাটা স্থাপনে দুই হাজার ৮০০ বিঘা জমি অকৃষি কাজে চলে গেছে। আবাসিক এলাকা ও ফসলি জমিতে এসব ইটভাটা গড়ে ওঠায় হ্রাস পেয়েছে খাদ্যশস্য উৎপাদন। ইট তৈরির প্রধান উপকরণ মাটির জোগান দিতে হয় ফসলি জমি থেকে। প্রতি বছর ৩০০-৪০০ বিঘা তিন ফসলি জমি পুকুর হয়ে যাচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দুই হাজার ৩৭১ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের পাবনা জেলায় ৩১ লাখ মানুষের বাস। এক দশক আগেও এ জেলায় আবাদি জমি ছিল এক লাখ ৮৭ হাজার ৮৩৬ হেক্টর। কমে এক লাখ ৮৩ হাজার ৬৮৭ দশমিক ২৯ হেক্টরে এসে দাঁড়িয়েছে। কমেছে কৃষিজমি।
বনগ্রাম পৌর এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক মানিক হোসেন কিছু দূরের আলহেরানগর দেখিয়ে বলেন, ওখানে ছিল দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ। ফাঁকে ফাঁকে ছিল দু-চারটি গৃহস্থের বাড়ি। দৃশ্যপট বদলে গেছে। সড়কের দুই পাশে ক্লিনিক, স্কুল ও নানা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ওটি যেন বাণিজ্যিক এলাকা। কৃষিপ্রধান আলহেরানগর হারিয়ে ফেলেছে কৃষিজমি। সঙ্কুচিত হয়ে গেছে কৃষিকাজ।
পাবনা বারের সাবেক সভাপতি আব্দুল মতিন জানান, কৃষিজমি বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে বেশ কয়েকটি কারণে। তা হলোÑ দূরদর্শিতার অভাব, জনসংখ্যা বিস্ফোরণ ও ‘ভূমিখেকো’ অসাধু ইটভাটা মালিকদের আগ্রাসন। কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন অনুযায়ী, কৃষিজমি নষ্ট করে বাড়িঘর, শিল্পকারখানা, ইটভাটা ও অন্যান্য অকৃষি কাজের জন্য স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। এ আইন অমান্য করলে কারাদণ্ড; ৫০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা। যাদের তিন থেকে পাঁচ শতক কৃষিজমি আছে তারা অপরিহার্য ক্ষেত্রে বসতবাড়ি নির্মাণ করতে চাইলে বিধানে, ভূমি জোনিং মানচিত্র অনুযায়ী করতে পারবেন।
বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোরশেদুল ইসলাম জানান, দেশে প্রতিদিন প্রায় ১ শতাংশ হারে কৃষিজমি হ্রাস পাচ্ছে। জেলায় তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা, বসতবাড়ি ও কারখানা তৈরি হওয়ায় কৃষি আবাদ বিপর্যয়ের মুখে। ফসলি জমির টপসয়েল বিক্রি করে দেয়ায় ফসল উৎপাদনের হার কমে গেছে। এ কারণে জমির মাটি কাটার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা