কারণ অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নিন
- ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০১:৫৯
গড়ে প্রতি বছর বিশ্বে সাত লাখ মানুষ আত্মহত্যা করেন। সে হিসাবে বিশ্বে ৪০ সেকেন্ডে একজন মানুষ আত্মহত্যা করছেন। বৈশ্বিক আত্মহত্যার মূল কারণ দারিদ্র্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুসারে, প্রতি বছর যত মানুষ আত্মহত্যা করেন তার ৭৭ শতাংশ কম আয় ও মধ্য-আয়ের দেশগুলোতে। বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে এর প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে। বিশ্বে সার্বিকভাবে মৃত্যুর ১৭তম কারণ আত্মহত্যা। আমাদের দেশে ১৫-১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে মৃত্যুর চতুর্থ কারণ এটি। বিগত বছরগুলোতে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার উচ্চমুখী হার বিবেচনায় নিলে এর বিশেষ কারণ থাকার বিষয়টি সামনে আসে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপে দেখা যাচ্ছে, ২০২৩ সালে দেশে ৫১৩ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। তাদের মধ্যে স্কুলের ২২৭, কলেজের ১৪০,বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৮ ও মাদরাসার ৪৮ শিক্ষার্থী রয়েছেন। তার আগের বছর ২০২২ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আরো বেশি ৫৩২ জন আত্মহত্যা করেন। আঁচল ফাউন্ডেশন আত্মহত্যার কারণ নিয়ে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছে। সংস্থাটি দেখিয়েছে, ৩২ দশমিক ২ শতাংশ ক্ষেত্রে এর কারণ অভিমান। এ ছাড়া প্রেমঘটিত ১৪ দশমিক ৮, মানসিক সমস্যা ৯ দশমিক ৯, পারিবারিক কলহ ৬ দশমিক ২, পারিবাকি নির্যাতন ১ দশমিক ৪, পড়াশোনার চাপ ৪ দশমিক ৫, পরীক্ষায় অকৃতকার্য ৩ দশমিক ৫, কাক্সিক্ষত ফল না পাওয়া ১ দশমিক ৮, যৌন হয়রানি ২ দশমিক ৫ ও অপমানবোধ শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ ক্ষেত্রে আত্মহননের কারণ হয়েছে।
বয়সজনিত উচ্চ আবেগ এর পেছনে কাজ করছে সেটি বোঝা যাচ্ছে। ২০২৩ সালে আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে ২০৪ পুরুষ ও ৩০৯ নারী। ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীর হার বেশি হওয়ার পেছনে আমাদের সামাজিক ও পারিবারিক পরিস্থিতি একটি নিয়ামক ভূমিকা রেখেছে বলে প্রতীয়মান হয়। প্রেম, যৌন হয়রানি ও অপমান-লাঞ্ছনার ঘটনাগুলোতে প্রধানত মেয়েরা আত্মহত্যার পথ বেশি বেছে নেন। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, হতাশা, যন্ত্রণা, কষ্ট ও ব্যর্থতা, প্রেমে বিচ্ছেদ, পরকীয়া, মাদকাসক্তের কারণে শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যা করছেন। এগুলোর সাথে যুক্ত হয়েছে আমাদের অস্থির সামাজিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি। বর্তমান বাস্তবতায় মানুষের কাছে প্রধান বিষয় হচ্ছে বৈষয়িক উন্নতি।
অর্থবিত্ত উপার্জন হয়ে উঠেছে জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য। বিপুল সম্পদের মালিক হতে পারা সফলতা হিসেবে চিত্রিত করা হচ্ছে। তাই বিত্তবৈভবের মালিক হওয়ার প্রতিযোগিতার উৎকট প্রভাব চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে কোনো ধরনের নীতি-নৈতিকতার স্থান নেই। এদিকে রাষ্ট্রব্যবস্থাও দুর্নীতির দরজা উন্মুক্ত করে দিয়েছে। চার দিকে শত আর হাজার কোটি টাকার গল্প। এটি তৈরি করেছে অস্থির অসুস্থ সমাজ। এ প্রতিযোগিতায় ব্যর্থতার নেতিবাচক প্রভাব শিক্ষার্থী এবং কম বয়সীদের মধ্যে পড়ছে। অভাব, দারিদ্র্য, হতাশা ও মাদকাসক্তের মতো বিকৃতির সূত্র ধরে চূড়ান্ত পরিণতি আত্মহত্যা ঘটছে।
একজন মানুষ চূড়ান্তভাবে হতাশ হলে আত্মহত্যা করেন। এ সময় তার কাছে বিকল্প কোনো পথ বাকি থাকে না। বাংলাদেশে বছরে ১৩ হাজারের মতো আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। এ প্রবণতা রোধে আমূল সংস্কার সংশোধন প্রয়োজন। আমাদের রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও পারিবারিক পর্যায়ে এটি চালাতে হবে। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়পর্যায়ে সংশোধন হওয়ার পথ এখন সেভাবে নেই। তবে পারিবারিক শিক্ষা মজবুত করে আত্মহত্যার প্রবণতা রোধের প্রাথমিক ভিত্তি রচনা করা যায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা