সুনাম সত্ত্বেও স্থায়ী ঠিকানা নেই
- ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০৫
নয়া দিগন্তের পটুয়াখালীর কলাপাড়া সংবাদদাতা জানান, কেমিক্যাল ছাড়াই লবণে প্রক্রিয়াজাত করা হয় বিষমুক্ত শুঁটকি। সমুদ্রপাড়ে কুয়াকাটায় রোদ আর বাতাসে কাঁচা মাছ শুকিয়ে তৈরি করা শুঁটকি বিক্রি হয়। উন্মুক্ত পরিবেশে প্রাকৃতিকভাবে শুকানো শুঁটকি কিনতে ছুটে আসছেন লোকজন।
কুয়াকাটার শুঁটকির ব্যাপক চাহিদা। নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় সৈকতের যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অস্থায়ী পল্লী। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় স্থায়ী শুঁটকিপল্লীর দাবি ব্যবসায়ী ও পরিবেশকর্মীদের। কুয়াকাটার শুঁটকি সুস্বাদু হওয়ায় দেশে ও বিদেশে এর আলাদা চাহিদা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রতি বছরই শুঁটকি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। স্থায়ীপল্লী না থাকায় দুর্ভোগে ব্যবসায়ী ও শুঁটকি শ্রমিকরা। বিপুল আয়ের সম্ভাবনা মৌসুমনির্ভর এ ব্যবসায় স্থায়িত্বের জন্য পাশাপাশি স্থায়ীপল্লী নির্মাণ এবং এ শিল্পের পরিধি বাড়াতে আরো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন সবাই।
সামুদ্রিক মাছের সহজলভ্যতায় এবারো কুয়াকাটার বেশ কয়েকটি পয়েন্টে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী শুঁটকিপল্লী। প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু হয় প্রক্রিয়াজাতকরণ কার্যক্রম। অংশ নেয় নারী-পুরুষ ও শিশুসহ পরিবারের সব সদস্য। কীটনাশক ছাড়া শুধু লবণ মেখে প্রক্রিয়াজাত করায় এর আলাদা স্বাদ ও চাহিদা রয়েছে। নির্দিষ্ট কোনো পল্লী না থাকায় বছরে ছয় মাস চলে এ ব্যবসায়। বাকি ছয় মাস কর্মহীন থাকেন শ্রমিকরা। তারা সরকারের কাছে স্থায়ী পল্লী নির্মাণসহ আর্থিক প্রণোদনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুঁটকি উৎপাদনের নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় চাহিদানুযায়ী সরবরাহ করতে পারছেন না দোকানিরা। কুয়াকাটার ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে স্থায়ী শুঁটকিপল্লী নির্মাণের দাবি ব্যবসায়ীদের। চলতি মৌসুমেও ভ্রাম্যমাণ অবস্থায় লেম্বুর বন, নিজামপুর গঙ্গামতি, ধুলাসার ঢোসসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে শুধু লবণ মেখে সৈকতে বাঁশের মাচা বানিয়ে রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হচ্ছে পর্যটকদের পছন্দের শুঁটকি। দেখা মেলে পোয়া, সোনাপাতা, মধুফাইস্যা, রূপচাঁদা, শাপলাপাতা, চাপিলা, ফাইঞ্জা, লইট্যা, চিংড়ি, ছুরি, হাঙ্গর, ভোল ও কোরালসহ ৫০ প্রজাতির সুস্বাদু মাছের শুঁটকি।
রংপুর থেকে আসা পর্যটক আ: রহিম বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকার শুঁটকি খেয়েছি। কুয়াকাটার শুঁটকির কথা শুনে এসেছি। বেশ কিছু শুঁটকি নিয়েছি। অসাধারণ, কারণ মেডিসিন ছাড়াই এটি রোদে শুকানো হয়। তেমন গন্ধও নেই।
ঢাকা থেকে আসা জিন্নাত-জাহানারা দম্পতি জানান, বহুদিন অফিস কলিগদের কাছে কুয়াকাটার শুঁটকির কথা শুনেছি। এসে দেখলাম, প্রাকৃতিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। লইট্টাসহ কয়েক ধরনের শুঁটকি কিনেছি। পরিবারের পাশাপাশি স্বজনদেরও গিফট করব।
লেম্বুর বন সৈকতে ৩০ বছর ধরে শুঁটকি উৎপাদনকারী হানিফ জানান, প্রতি বছরই স্থান পরিবর্তন করতে হচ্ছে। অনেকসময় লোকসানও গুনতে হয়। চাহিদানুযায়ী মাছ শুকাতে পারি না, দোকানিরাও ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে পারেন না।
রংপুর থেকে আসা পর্যটক আ: করিম বলেন, নিজ চোখে শুঁটকি করা দেখেছি। তারা কোনো কেমিক্যাল ব্যবহার করেন না। আমাদের এলাকার চেয়ে দাম অনেক কম। মানও ভালো।
শ্রমিক আবদুর রহমান বলেন, শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করার নির্ধারিত জায়গা না থাকায় আমরা সৈকতের পাশেই মাছ শুকাই। অনেকসময় উচ্ছেদ অভিযানে সবকিছু ভেঙে ফেলে। আবার ব্যবসায় আসা কষ্টের হয়ে যায়। শুঁটকি ব্যবসার আলাদা করে লোন ও প্রণোদনা পাই না।
ঝাউবাগান এলাকায় শুঁটকিপল্লীর ব্যবসায়ী নজির হাওলাদার জানান, নির্দিষ্ট স্থান থাকলে আমরা বর্ষা মৌসুমেও শুঁটকির ব্যবসায় চালিয়ে যেতে পারতাম; কিন্তু এখন আমাদের ছয় মাস অলস সময় কাটাতে হয়।
পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কলাপাড়ার সদস্যসচিব জানান, শুঁটকি তৈরি করতে নির্দিষ্ট জায়গা সরকারের নির্ধারণ করে দেয়া উচিত। কুয়াকাটায় আসা পর্যটকরা দুর্গন্ধে বিভ্রান্ত হন। পরিবেশও দূষিত হয়।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, কুয়াকাটার শুঁটকির সুনাম রয়েছে। স্বাস্থ্যসম্মতভাবে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণে শ্রমিকদের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দিতে এবং স্থায়ী শুঁটকিপল্লীর জন্য আলোচনা করা হবে। উন্নতমানের শুঁটকি উৎপাদনে সংশ্লিষ্টদের মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, স্থায়ী শুঁটকিপল্লী নির্মাণের লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হবে। যারা শুঁটকি তৈরি করেন, তারা আমাদের কাছে বললেই হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা