২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
জরুরি সেবা কার্যক্রম ৯৯৯

আরো কার্যকর হোক

-

কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি আমাদের অনন্য কিছু সুবিধা দিয়েছে। বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে জাতীয় জরুরি সেবায় ফোন এমন একটি সুবিধা। অগ্নিকাণ্ড, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং যেকোনো দুর্ঘটনা এড়াতে এর সুবিধা কিছু মানুষ পাচ্ছেন। সরকারি সেবার যে ভোগান্তি তার কিছু প্রভাব থাকলেও জরুরি সেবায় এটি একটি কার্যকর ব্যবস্থা। বিগত কয়েক বছরে জরুরি নম্বরে উচ্চহারে মানুষের ফোনকল এর প্রমাণ।
জরুরি সেবা কার্যক্রম উন্নত দেশগুলোতে বহু আগে চালু হয়েছে। বিপদের হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে এটি অত্যন্ত কার্যকর ব্যবহার হচ্ছে দেশগুলোতে। বাংলাদেশে এটি যাত্রা শুরু করে ২০১৭ সালে ১২ ডিসেম্বর। ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে তাৎক্ষণিক সাহায্য নেয়া যায়। এর আওতায় পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ২৪ ঘণ্টা প্রস্তুত থাকে। দরিদ্র দেশ হিসেবে আমাদের যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে তা সত্ত্বেও এতে অনেকে উপকৃত হচ্ছেন। সহযোগী একটি পত্রিকার প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, শুরু থেকে গত বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত জরুরি নম্বরটিতে ফোন এসেছে চার কোটি ৮৪ লাখ আট হাজার ৭৬৪টি। পত্রিকাটির খবর, এ সেবায় যুক্ত করা হবে প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি আলাদা কর্মসূচি। বাক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীরাও এর আওতায় আসবে।
পত্রিকাটি গত বছরের প্রথম ছয় মাসে ফোনকলের একটি পরিসংখ্যান দিয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়ে তিন হাজার ৫২৬ জন, ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়ে এক হাজার ৭৪১ জন, যৌন পীড়নের শিকার সাত হাজার ৩৪০ জন, মা-বাবার নির্যাতনের শিকার ৬২৭ জন, যৌতুকের শিকার এক হাজার ১৯১ জন, হত্যার শিকার এক হাজার ৯৮৯ জন, গৃহনির্যাতনের শিকার ১৬ হাজার ২৮২ জন, এসিড সন্ত্রাসের শিকার ৭১ জন ও অন্যান্য নির্যাতনের শিকার ২০ হাজার ১১৫ নারীর সমস্যা নিয়ে ফোন এসেছে। নারীরা সহায়তা পেতে বেশি ফোন দিয়ে থাকেন। গত বছরে নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়ে ৬৭ হাজার ৯৬২ নারী পুলিশের সহায়তা চেয়েছেন এ নম্বরে। তবে সব মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২২ থেকে ২৩ হাজার কল আসে বিভিন্ন ধরনের সাহায্য পেতে সারা দেশ থেকে।
উদ্দেশ্যমূলকভাবে এর ব্যবহার হওয়ার লক্ষণও আছে। পাঁচ বছর আট মাস ২৯ দিনে বাল্যবিয়ে বন্ধে কল এসেছে ২৫ হাজার ১৮০টি। এ কলগুলো অনেক সময় হিংসা-বিদ্বেষে উচ্চহারে হতে পারে। বাল্যবিয়ে বন্ধের চেয়ে এর লক্ষ্য থাকে বিয়ে ভেঙে দেয়া। বাঙালির মধ্যে আগে থেকে এ প্রবণতা রয়েছে। বাল্যবিয়ে বন্ধের নামে আসা কলগুলো পর্যালোচনা করা দরকার। একইভাবে জরুরি সেবা নম্বরে ভুয়া ও ভুতুড়ে কল আসে; যা সেবাকার্যক্রম বিঘিœত করে। জরুরি সেবাকে আরো কার্যকর করতে হলে এর উদ্দেশ্যমূলক ব্যবহার রুখতে হবে।
জরুরি নম্বরে তিন পালায় ২৪ ঘণ্টা ৪০০ কর্মী এ সেবা দিচ্ছেন। একসাথে ১০০ ফোন তারা গ্রহণ করতে পারেন। বাংলাদেশ জনসংখ্যায় বিশাল একটি দেশ। সে তুলনায় এ প্রস্তুতি যৎসামান্য। এ সেবা আরো কার্যকরী করতে হলে এর অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়াতে হবে। লোকবল উপায়-উপকরণ এবং পর্যাপ্ত বাজেট থাকতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, দেশে চলা বিস্তৃত দুর্নীতি এ জরুরি সেবা কার্যক্রমে যেন জেঁকে না বসে। জনসেবা আরো সম্প্রসারিত করতে হলে একদল নিবেদিতপ্রাণ কর্মী এতে যুক্ত রাখতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement