২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
রাজধানীতে গণপরিবহনে চাঁদাবাজি

মালিক-চালক অসহায়

-


পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে ছোটখাটোসহ গুরুতর অনেক অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। ফলে কিছু অসাধু পুলিশ সদস্যের জন্য পুরো বাহিনীর দুর্নাম হচ্ছে। তবে দৃশ্যমান অপরাধের সাথেও জড়িয়ে পড়ছেন কিছু পুলিশ সদস্য। তার মধ্যে গণপরিবহন থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
রাজধানী ঢাকার মোড়ে মোড়ে যেমন- গাবতলী, খামারবাড়ি, মিরপুর-১, পোস্তগোলা, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়েসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সোর্সের নাম করে চাঁদাবাজি চলে। অভিযানের কথা বলে গণপরিবহন থামিয়ে পুলিশের নামে চাঁদা তোলা হয়। একবার ধরলে কমপক্ষে ২০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা দিতে হয়। এভাবে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে সোর্স ব্যবহার করে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করছে পুলিশ ও তাদের নিযুক্ত সোর্স। গণপরিবহন থেকে চাঁদা তোলার সাথে জড়িত অসাধু পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বাসচালক ও মালিকরা কিছুই করতে পারেন না। কারণ, অনেকের গাড়ির কাগজপত্র ঠিক নেই। কিংবা ড্রাইভিং লাইসেন্স হালনাগাদ নয়। মালিক ও চালকদের দুর্বলতার কারণে বাধ্য হয়ে তারা পুলিশকে টাকা দেন। একটি সহযোগী দৈনিকের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দিনে যাওয়া-আসায় দু’বার পুলিশের সোর্সকে চাঁদা দিতে হয়। পুলিশের বেতনভুক সোর্সদের একটি বড় দল আছে। তারা হাতে লাঠি নিয়ে ঘোরেন। টাকা দিতে না চাইলে চালক, হেলপারদের পেটান। পুলিশের নির্দেশেই এ কাজ করেন তারা। বাধ্য হয়ে চাঁদা দিতে হয় গাড়িচালক ও হেলপারদের। বিভিন্ন পরিবহনের গাড়িচালকদের অভিযোগ, যারা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানান, তাদের অনেককে তল্লাশির নামে ইয়াবা ও গাঁজা ধরিয়ে দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এরকম ঘটনা অহরহ ঘটছে।

প্রকাশ্যে এই অপকর্ম চললেও ভুক্তভোগীরা কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। এ বিষয়ে গণপরিবহনের চালকরা বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত পুলিশের চাঁদাবাজির শিকার হন তারা। তবে পুলিশ সরাসরি টাকা তোলে না। তাদের বেতনভুক সোর্সদের দিয়ে তোলে। চাঁদা আদায়কারীরা কাজের বিনিময়ে চাঁদার একটি ভাগ পান।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন্স) বিপ্লব কুমার সরকার ওই পত্রিকার সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে বলেন, পুলিশের সোর্স ব্যবহার করে টাকা তোলার অভিযোগ অস্বীকার করার সুযোগ নেই। প্রায়ই শুনে থাকি। তবে ভুক্তভোগী চালক-হেলপার বা অন্য কেউ যদি আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন সে ক্ষেত্রে আমরা বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
লক্ষণীয়, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ক্ষমতাসীনরা পুলিশ বাহিনীকে যথেচ্ছ ব্যবহার করায় তারা অনেকে অবৈধ সুবিধা নিতে অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়ছেন। অথচ তাদের শৃঙ্খলা বিধানের ওপর সমাজের নিরাপত্তা ও শান্তি নির্ভরশীল। তাই পুলিশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এ বাহিনীর যারা বেআইনি কাজে জড়িয়ে পড়বেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে অন্য কেউ এই পথে পা বাড়াতে সাহস না পান। সঙ্গত কারণে ঢাকায় গণপরিবহনে পুলিশের চাঁদাবাজির বিষয়টি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি।

 


আরো সংবাদ



premium cement