তীব্র গ্যাসসঙ্কট
- ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০৫
‘বেলা সাড়ে ১১টা। ...কারখানার ডাইং ইউনিটের বেশির ভাগ বৈদ্যুতিক বাতিই বন্ধ। ফলে তৈরি হয়েছে কিছুটা আলো-আঁধারি পরিবেশ। দৈত্যাকার যন্ত্রগুলোও চুপচাপ। শ্রমিকরা আসেন, তবে কাজ নেই। অলস সময় কাটান তারা। অথচ দিনের এই সময়ে টনে টনে নিট কাপড় রঙ করতে যন্ত্রগুলোর সাথে শ্রমিকরা সাধারণত মহাব্যস্ত সময় পার করেন।’
এটি একটি প্রধান জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত গ্যাসসঙ্কট-সম্পর্কিত খবরের ইন্ট্রো বা সূচনা। চিত্রটি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বিসিক শিল্পনগরীর একটি প্রিন্টিং অ্যান্ড ফিনিশিং কারখানার। গ্যাস না থাকায় কারখানাটি ৯ দিন ধরে পুরোপুরি নিস্তব্ধ। শুধু নারায়ণগঞ্জ নয়, সাভার ও গাজীপুরের শ্রীপুর শিল্প এলাকায়ও একই অবস্থা। গ্যাসের অভাবে ডাইং কারখানা, সুতার কল বা স্পিনিং মিল, খাদ্যপণ্য, কাগজকলসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্পকারখানায় উৎপাদন গুরুতরভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
অনেক কারখানার উৎপাদন ৭৫ শতাংশ বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিটি কারখানায় এখনো যেটুকু উৎপাদন হচ্ছে সেটুকু তারা করছেন সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করে। দিনে ৪০ টন কাপড় রঙ করতে সক্ষম একটি কারখানায় বিকল্প জ্বালানি দিয়ে দিনে ২৮ টন পর্যন্ত কাপড় রঙ করতে পারছে। এতে তাদের প্রতিদিন বাড়তি ব্যয় ১৫ লাখ টাকা। এ বিপুল ব্যয় কত দিন বহন করা সম্ভব কে জানে? একটি কারখানা গত ছয় মাসে ৫০০ কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছে শুধু কাজ না থাকায়। একটি কাগজ শিল্পের কারখানায় উৎপাদন কমেছে ৮০ শতাংশ। এসব চিত্র থেকে স্পষ্ট, গ্যাসসঙ্কটে শিল্পোৎপাদন কার্যত বন্ধের উপক্রম হয়েছে।
শিল্পে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। কিন্তু সরবরাহ ২৫০ কোটির নিচে। সঙ্কট শুধু শিল্পে নয়, প্রতিটি ক্ষেত্রে। বাসাবাড়ি, সিএনজি স্টেশন, পেট্রলপাম্প- সর্বত্র একই অবস্থা। রাজধানী ঢাকার অনেক এলাকায় সকাল ৭টার পর থেকে দিনভর চুলা জ্বলে না। অনেক গৃহিণী রাত জেগে রান্না করছেন। অনেকে বাড়তি ব্যয় করে এলপিজি সংযোগ নিতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ তিতাসের বিল ঠিকই দিতে হচ্ছে। পেট্রলপাম্প বা সিএনজি স্টেশনে গ্যাসের চাপ না থাকায় যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়ছে।
এ পরিস্থিতির জন্য সরকার দায়ী। কিন্তু তারা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার মতো অবস্থায় নেই। সুশাসনের অভাবজনিত বিশৃঙ্খলার কারণে অর্থনীতি গত ৫২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। এখন ডলারের অভাবে গ্যাস আমদানি করা যাচ্ছে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্যও ব্যবসায়ীদের ডলার দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো।
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, দেশে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের কাজ চলছে। তাতে দুই বছর সময় লাগবে। ততদিনে শিল্প টিকে থাকবে কি-না একমাত্র আলেমুল গায়েব জানেন।
গ্যাসসঙ্কটের আসল কারণ দেশে গ্যাস অনুসন্ধান বন্ধ রাখা। সিএনজি আমদানিতে ব্যক্তিবিশেষের পকেট ভারীর সুযোগ থাকে। তাই সম্ভবত পেট্রোবাংলা বাপেক্সকে বসিয়ে রেখে আমদানির ওপর পুরো নজর দেয়া হয়। তারই কুফল এখন ফলছে। নিকট-ভবিষ্যতে সঙ্কট উত্তরণের পথ দেখছেন না পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া জরুরি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা