২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বাসযোগ্য নগরায়নের সমস্যা

রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি

-

দেশে অপরিকল্পিতভাবে অতি দ্রুত নগরায়ন হচ্ছে। দেশে নগরায়নের হার ১৯৭৪ সালের মাত্র ৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ থেকে ক্রমাগত বেড়ে বর্তমানে প্রায় ৪০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু কোনো একটি শহর বা নগরও প্রকৃত অর্থে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে পারছে না। এমনকি খোদ রাজধানী শহরটিকেও বাসযোগ্য করতে পারিনি আমরা।
বৈশ্বিক মানদণ্ডে বাসযোগ্য নগরীর বৈশিষ্ট্য থেকে ঢাকা এতটা পিছিয়ে যে, তুলনা করা বাতুলতা হয়ে যায়। আমরা এটিকে আদৌ বাসযোগ্য করতে পারিনি। নগরবাসীর আবাসন, যাতায়াতের সুষ্ঠু ব্যবস্থা, যানজট নিরসন, পরিবেশ দূষণ, সুপেয় পানি, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, পয়োনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা; শিক্ষা, বিনোদন, জনস্বাস্থ্যবিধি ইত্যাদি কোনো একটি বিষয়েও আমরা স্বস্তিকর অবস্থায় নেই।
বাসযোগ্য নগরীতে ১২ শতাংশ উন্মুক্ত স্থান ও ১৫ শতাংশ এলাকায় সবুজের আচ্ছাদন থাকার কথা। ঢাকায় আছে নামমাত্র। ঢাকা শহরের সাথে যুক্ত আটটি নদী ঘিরে সার্কুলার নৌপথ আমরা চালু করতে পারিনি। যানজটের ভারে ন্যুব্জ ঢাকা। এজন্য প্রতিদিন আমাদের বিপুল পরিমাণ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। ঢাকা বায়ুদূষণে বিশ্বে শীর্ষস্থানে। বায়ুদূষণে বাংলাদেশে সব মানুষের গড় আয়ু কমছে ছয় বছর আট মাস। এ এক ভয়াবহ পরিস্থিতি।
এক কথায় নগর ব্যবস্থাপনায় আমরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এখানে নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকারের প্রসঙ্গ উল্লেখ না করা বোধ হয় ভালো।
অথচ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে ঢাকায় একটি নগর কর্তৃপক্ষ ভেঙে দুটি করা হয়েছে। তাতে নাগরিকরা কতটা লাভবান হলেন সে বিষয়ে কোনো মূল্যায়ন হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। কিন্তু নগরায়নবিষয়ক সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা নানা সুপারিশ তুলে ধরছেন।
গত শনিবার ঢাকায় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্কের (বেন) সম্মেলনে অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়হীনতার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে নগরপ্রশাসন শক্তিশালী করার জন্য একটি একক কর্তৃপক্ষ গঠনের সুপারিশ করেন, যে কর্তৃপক্ষের অধীনে পুলিশসহ নগরীর সবকিছুই থাকবে। এ প্রসঙ্গে তিনি নিউ ইয়র্ক শহরের দৃষ্টান্ত দেন।
আবার কোনো আলোচক দেশে নগরায়নবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠনের পক্ষে মত দিয়েছেন। কেউবা নগরীর এ ক্রমবর্ধমান সমস্যা নিরসনে দেশের জেলা শহরকেন্দ্রিক পরিকল্পনার কথা বলেছেন। জেলা পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। বলেছেন, জেলার সাথে গ্রাম যুক্ত করে সুষম উন্নয়ন জরুরি। টেকসই নগরায়নে এর বিকল্প নেই।
তবে নগরজীবন সুষ্ঠু ও স্বস্তিকর করতে সম্মেলনে যেসব সুপারিশ করা হয় সেগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে বায়ুদূষণ রোধে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ, পরিবেশ ঝুঁকির বিষয়ে জনগণকে সচেতন করা, নগরীতে খোলা জায়গা ও খেলার মাঠ নিশ্চিত করা, বস্তিবাসীর সমস্যার সমাধান, যানজট নিরসনে ব্যবস্থা নেয়ার কথা আছে। এগুলো জরুরি।
কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। দেশের যেকোনো খাতে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় সবার আগে চাই রাজনৈতিক সদিচ্ছা। আমাদের সরকারগুলোর মধ্যে সেই রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই না। ফলে নগরায়ন নিয়েও আশাবাদী হওয়ার সুযোগ কম। তবু আলোচনার দরকার আছে। তাতে আশা থাকে, যদি কিছু কাজ হয়!


আরো সংবাদ



premium cement