আজগুবি ভোট দর্শন
- ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০৫
বিগত কয়েক দশকে বৈশ্বিক গণতন্ত্র ক্ষয়ের মুখে পড়েছে। দেশে দেশে উত্থান হচ্ছে স্বৈরতান্ত্রিক ও একনায়ক শাসনের। এ ধরনের পীড়নমূলক শাসকরা আবার গণতন্ত্রের হাত ধরে ক্ষমতায় আসছেন। তারা ভোটব্যবস্থাকে মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন। বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থায় একই লক্ষণ স্পষ্ট। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে সরকার যা চেয়েছেন, সেটাই হয়েছে। এর কোনো ব্যতিক্রম ঘটেনি। কেন্দ্রে ভোটারের দেখা মেলেনি। কিছু কিছু কেন্দ্র সারাদিনই ছিল একেবারে ফাঁকা। এই দেশে সরকারের ইচ্ছার ওপর প্রার্থীর বিজয় নির্ভর করে। সবাই সেটা ভালো করে জানেন। ক্রমাগত প্রতারিত হয়ে ভোটাররা কেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এ অবস্থায় একদল বিদেশী পর্যবেক্ষক পাওয়া গেল। তারা মন্তব্য করছেন, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও আন্তর্জাতিক মানের হয়েছে।
এই নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে খোদ নির্বাচন কমিশন দ্বিধায় রয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার একবার বলছেন, ২৮ শতাংশ ভোট পড়েছে, আবার বলছেন ৪০ শতাংশ পড়েছে। সর্বশেষ অনেক প্রস্তুতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানান দিয়েছেন ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। তিনি যেন নিজের কথাই বিশ্বাস করছেন না। সেজন্য সাথে সাথে এ কথাও বলছেন, আপনাদের বিশ্বাস না হলে চ্যালেঞ্জ করুন। এই নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য বিরোধীরা কোনো সুযোগ পায়নি। তাদের কঠোরভাবে দমন করা হয়েছে।
সরকারি দলের লোকদের মধ্যে কে নৌকা প্রতীক পাবে আবার কে হবেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সেটাও নির্ধারণ করা হয়েছে কূটকৌশলে। ঘোষণা দিয়ে ডামি প্রার্থীর আয়োজন করা হয়েছে। বিরোধী দল হিসেবে পুতুল জাতীয় পার্টিকেও সরকারের ইচ্ছামতো কাজে লাগানো হয়েছে। সব মিলিয়ে জনগণের ভোটের এখানে কোনো প্রয়োজন ছিল না। যেমনটা এর আগের দুটো জাতীয় নির্বাচন এবং এই সরকারের অধীনে আয়োজিত বেশির ভাগ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দেখা গেছে। নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের অনেকে বলছেন, দুই থেকে তিন শতাংশ ভোটার কেন্দ্রে উপস্থিত হতে পারেন। তবে কেন্দ্রের বাইরে দলীয় লোকদের জটলা সবসময় লেগে ছিল। পর্যবেক্ষকদের দেখানোর জন্য কৃত্রিমভাবে লাইন করা হয়েছে। আবার তারা চলে গেলে লাইন আর থাকেনি।
এ অবস্থায় সরকারি তত্ত্বাবধানে আসা পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, তারা কেন্দ্রে উৎসাহ নিয়ে আসা ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখেছেন। তাদের অনেকের মতে, এই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর হয়েছে। তাদের এমন মন্তব্য বিগত ১৫ বছর ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারা বাংলাদেশীদের প্রতি এক ধরনের অবজ্ঞা। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, এই পর্যবেক্ষক দলে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও জাপানের মতো দেশের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। এর মধ্যে জিম বেটস নামের যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এক কংগ্রেসম্যান রয়েছেন। তিনি হতাশার এই নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। তবে এই ব্যক্তির বিষয়ে অনুসন্ধান করে জানা গেল, তার বিরুদ্ধে নিজ দেশে গুরুতর অসৎ কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। ব্যাংকের টাকা নয়ছয় করেছেন। যৌন হয়রানির প্রমাণিত অভিযোগও রয়েছে।
আমেরিকান অন্য একজন পর্যবেক্ষক ছিলেন আলেকজেন্ডার গ্রে যিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শীর্ষ পরামর্শকদের একজন। বাংলাদেশের এক ফ্যাক্টচেকার তাদের কৃত অনিয়মের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে তা সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশে আসা ২১ দেশের পর্যবেক্ষকদের নিয়ে যাচাই-বাছাই করলে তাদের আরো অসাধুতার খবর নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে তাদের দেশের নাগরিক পর্যবেক্ষকদের দেয়া মন্তব্য ওই ব্যক্তিদের নিজস্ব বলে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে। এর সাথে সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই। জানা যাচ্ছে, বিদেশী পর্যবেক্ষকদের জন্য সরকার স্পেশাল আয়োজন করেছে। পাঁচতারকা হোটেলে রেখে সরকারের একান্ত মেহমানদারিতে পর্যবেক্ষণের কাজ তারা করেছেন। ভোটব্যবস্থা নিয়ে সরকার যখন চরম প্রশ্নের মুখোমুখি রয়েছে, তখন সরকারের আনুকূল্যে এভাবে পর্যবেক্ষণ করা কতটা নৈতিক? তারা তো গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে লড়াইরত মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছেন। গণতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষক দেশগুলোকে তাদের দেশের এ ধরনের অসৎ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। কমপক্ষে দেশগুলোরই এমন ব্যবস্থা নেয়া উচিত যাতে জনগণের অধিকার হরণকারী কর্তৃপক্ষের সমর্থনে তারা কাজ করতে না পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা