২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সরকারি তথ্য-উপাত্তের অসঙ্গতি

ক্ষতি হচ্ছে দেশের

-

দেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য-উপাত্তের অসঙ্গতি দূর হচ্ছে না। অনেক বিষয়ে একেক প্রতিষ্ঠান একেক রকম হিসাব দিচ্ছে। সম্প্রতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের রফতানি সম্পর্কিত তথ্য নিয়ে গরমিল দেখা গেছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে বড় অসঙ্গতি লক্ষণীয়। শতকরা হিসাবে এই গরমিলের পরিমাণ ২১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ইপিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের রফতানি পরিসংখ্যানগত পার্থক্য ধারাবাহিকভাবে বড় হচ্ছে। ২০২০-২১ অর্থবছরেও দুই সংস্থার পরিসংখ্যানের পার্থক্য ছিল ৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। সেটি ২০২১-২২ অর্থবছরে ৮ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে। বিস্ময়কর হলেও সত্য, পরিসংখ্যানগত তথ্যের এ অসঙ্গতির দায় সংশ্লিষ্ট কেউ নিতে চায় না। পরিসংখ্যানগত অসঙ্গতি সৃষ্টির জন্য প্রকৃত দায় কার, সেটিও চিহ্নিত করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও অংশীজনরা।
এর আগে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার সম্পর্কিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য নিয়ে প্রচুর কথাবার্তা হয়েছে। কথা হয়েছে, মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির আজগুবি তথ্য নিয়ে, জনসংখ্যা কমে যাওয়ার হিসাব নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে কৌতুককর পরিস্থিতি। এমনকি সরকারের মোট অভ্যন্তরীণ ঋণ কত, তা নিয়েও গরমিল দেখা যায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ বিভাগের তথ্যের মধ্যে। প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই)-সংক্রান্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানের তথ্যের সাথে অনেক ক্ষেত্রে অমিল দেখা গেছে আঙ্কটাডের তথ্যের। আর মহামারীর নানামুখী প্রভাব সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্তে অসঙ্গতির কথা না বলাই ভালো।
আসলে এক ব্যক্তির খেয়ালখুশি আর নির্দেশনায় আর্থসামাজিক পরিসংখ্যান তৈরি করা হলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। বিবিএস বা বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব সরকারি প্রতিষ্ঠান নিজেদের স্বায়ত্তশাসন হারিয়েছে অনেক আগে। প্রকৃত তথ্য আড়াল করা ও ফরমায়েশি তথ্য প্রকাশের মারাত্মক চাপ তো আছেই, দলীয়করণের আওতায় নিয়োগ পাওয়া অনেক কর্তাব্যক্তিও নিজ দায়িত্বে তথ্য আড়াল করতে উদগ্রীব থাকেন। এমনও জানা গেছে, প্রবৃদ্ধি কত দেখানো হবে- সেটি আগে ঠিক করে দেয়া হয় ঊর্ধ্বতন ক্ষমতাবলয় থেকে। তারপর সেই হার দেখানোর জন্য সংশ্লিষ্ট তথ্যাবলি সাজিয়ে নেয়া হয়।
এভাবে তৈরি করা পরিসংখ্যান নিয়ে দেশের বিশেষজ্ঞরাও একাধিকবার সংশয় প্রকাশ করেছেন। আর সরকারি সংস্থার তথ্যের যথার্থতা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে। কিন্তু ক্ষতিটা হচ্ছে দেশের। তথ্যের গরমিল বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করছে। জিডিপির হিসাবে যেমন ভুল হচ্ছে, তেমনি লেনদেন ভারসাম্যে (বিওপি) ও ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টেও সমস্যা হচ্ছে।
ভুল পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে নেয়া যেকোনো পরিকল্পনাও ভুল হতে বাধ্য। তাই হচ্ছে। কিন্তু এসব বিষয়ে ক্ষমতাসীন সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তারা সাফল্যের প্রচারণা চালিয়ে পরিতুষ্ট।
তথ্যের অসঙ্গতি বা গরমিল হওয়া অপরাধ নয়। সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা, প্রাতিষ্ঠানিক বা পদ্ধতিগত দুর্বলতাসহ নানা কারণে অসঙ্গতি ঘটতে পারে। কিন্তু কাজটি যখন সরকারের সাফল্যের চিত্র তুলে ধরার হীন উদ্দেশ্যে সচেতনভাবে করা হয়, তখন তা গুরুতর অপরাধ। এ দায় সরকারের। একই সাথে বাংলাদেশের পরিসংখ্যানবিদরা পেশাগত দায় ভুলে এ অপরাধ করে চলেছেন বছরের পর বছর।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল