২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যু

নিরাপদ কর্মপরিবেশ দূরপরাহত

-

সেই সুদূর অতীতকাল থেকে বর্তমান সময়েও শ্রমিকদের শ্রমঘামে সভ্যতা গড়ে উঠেছে, সেই তাদের জীবন অতি তুচ্ছ হিসেবে গণ্য করা হয়। এর বড় দৃষ্টান্ত- তাদের কর্মক্ষেত্র এখনো অনিরাপদ রয়ে যাওয়া। উপরন্তু দেখা যায়, এদের জন্য নিরাপদ কর্মক্ষেত্র সৃষ্টিতে কারো তেমন আগ্রহ নেই। শুধু আইনে নিরাপদ কর্মক্ষেত্র তৈরির কথা সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। ফলে নানা দুর্ঘটনায় বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছেন শ্রমিকরা। কর্মক্ষেত্র অনিরাপদ হওয়ায় প্রতি বছর শত শত শ্রমিক মারা যাচ্ছেন। অবস্থার যে কোনো উন্নতি হয়নি; বরং আরো অবনতি হয়েছে তার নমুনা হলো গত বছরের তুলনায় শ্রমিক নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৬৫ এবং আহতের সংখ্যা বেড়ে ২৭৪ জন হওয়া।
বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ অকুপেশনাল সেফটি, হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (ওশি) ফাউন্ডেশনের গত শুক্রবার প্রকাশিত এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লিখিত তথ্যমতে, দেশে অনিরাপদ কর্মক্ষেত্রের কারণে ২০২৩ সালে বিভিন্ন খাতের এক হাজার ৪৩২ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো ৫০২ জন। ২০২২ সালে নিহত হয়েছিলেন ৯৬৭ জন। আহত হয়েছিলেন ২২৮ শ্রমিক। ২০২৩ সালে কর্মক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিহত শ্রমিকের সংখ্যা ৩২৯ জন ও আহত শ্রমিকের সংখ্যা ২৭৭ জন। এ ছাড়া অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিহত শ্রমিকের সংখ্যা এক হাজার ১০৩ জন ও আহত শ্রমিকের সংখ্যা ২২৫ জন।
লক্ষণীয়, কর্মস্থলে হতাহতের উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে- সড়ক দুর্ঘটনা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া, অগ্নিকাণ্ড, ভবন বা স্থাপনা থেকে পড়ে যাওয়া, বজ্রপাত, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, সহিংসতা, গৃহশ্রমিকদের ক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতন, দেয়াল-ভবন-ছাদ ও ভূমিধস ইত্যাদি।
এই যে শ্রমিকদের অনিরাপদ কর্মপরিবেশের জন্য প্রাণ হারানো, এর জন্য প্রয়োজন তাদের পরিবারের সুরক্ষা। এ ক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকের পরিবারকে এককালীন ১০ লাখ টাকা এবং আহত শ্রমিককে পাঁচ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তার বিষয়টি শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এ ছাড়া আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসনের বিষয়টি শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করা সময়ের দাবি। শিল্পের সব খাতে ইআইএস চালু করা। সরকারিভাবে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা সংক্রান্ত তথ্যের সঠিক ডাটাবেজ তৈরি করা। কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত বা আহত শ্রমিকদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা এবং তাদের মাসিক চাঁদা সরকারের পক্ষ থেকে প্রদান করা। শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড এলাকায় অবস্থিত মালিকপক্ষ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসা এবং এর আধুনিকায়ন করা। কর্মস্থলে শ্রমিকদের উপযোগী ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ ব্যবহার নিশ্চিত করা। শিল্প মালিক ও ব্যবস্থাপকদের জন্য জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা নীতিমালা-২০১৩ সম্পর্কে ওরিয়েন্টেশন প্রদান করা। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নয়নে বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ (সংশোধিত-২০১৮) এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা-২০১৫-এ উল্লিøখিত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিধানের যথাযথ প্রয়োগের লক্ষ্যে পরিবীক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করা সরকারের একান্ত কর্তব্য। তৈরি পোশাকের মতো অন্যান্য খাতেও শ্রমিক ও মালিকপক্ষের প্রতিনিধির সমন্বয়ে সেফটি কমিটি গঠন করা।
শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মক্ষেত্র সৃষ্টিতে সরকারের উদ্যোগে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ইউনিট চালু করা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পেশাগত রোগের চিকিৎসায় বিশেষায়িত চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো উচিত। এ ক্ষেত্রে যত দ্রুত এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নে সরকার উদ্যোগ নেবে, তত দ্রুততার সাথে শ্রমিকের কর্মক্ষেত্র নিরাপদ হবে। তখন কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যু অনেক কমে আসবে। কিন্তু একটি জবাবদিহিহীন সরকার এমন শ্রমিকবান্ধব কোনো উদ্যোগ নেবে, আপাতত সেই সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। কারণ এই সরকার যত না ব্যবসায়ীবান্ধব, ততটা জনবান্ধব নয়। তাই দেশে শ্রমিকের নিরাপদ কর্মক্ষেত্র দূরপরাহত বলে মনে হওয়ার শঙ্কা থেকেই যায়।


আরো সংবাদ



premium cement
সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে মোল্লা কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ : ৮ হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা ‘দেশ গড়তে প্রান্তিক কৃষকদের সাথে কাজে করতে হবে’ পটুয়াখালীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ভূমি কর্মকর্তা নিহত সাত কলেজের মঙ্গলবারের পরীক্ষা স্থগিত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে কেউ নিহত হয়নি, অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার অনুরোধ ডিএমপির সিলেটে কর্মবিরতিতে ১১ হাজার চা-শ্রমিক, ক্ষতি ৬০ কোটি টাকা সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় গ্রেফতার সোহরাওয়ার্দীর পর কবি নজরুল কলেজও বন্ধ ঘোষণা কুলাউড়া রাস্তা জবর দখলের চেষ্টা : প্রতিপক্ষের হামলায় আহত ৭ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অ্যাকশনে গেলে আরো রক্তপাত হতো : আসিফ মাহমুদ

সকল