উন্নয়নের সুফলভোগী কারা
- ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০৫
একটি দেশের আয়বৈষম্য পরিমাপে বহুল প্রচলিত একটি পদ্ধতি হচ্ছে গিনি সহগ বা গিনি সূচক। এর মান শূন্য থেকে ১-এর মধ্যে ধরা হয়। সবার আয় সমান হলে গিনি সহগের মান হবে শূন্য, এর অর্থ সমাজে বা দেশে চরম সাম্য অবস্থা বিরাজ করছে, অর্থাৎ অর্থনীতিতে সব সম্পদের বণ্টনে সম্পূর্ণ সমতা রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, গিনি সহগের মান বৃদ্ধিতে বাংলাদেশে আয়বৈষম্য ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
গত বুধবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত জরিপে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে আয় গিনি সহগ অনুযায়ী জাতীয়পর্যায়ে আয়বৈষম্য ০.৪৯৯, পল্লী এলাকায় ০.৪৪৬ এবং শহর এলাকায় ০.৫৩৯, যা ২০১৬ সালে জাতীয়পর্যায়ে ছিল ০.৪৮২, পল্লী এলাকায় ০.৪৫৪ এবং শহর এলাকায় ০.৪৯৮। ২০১০ সালে জাতীয়পর্যায়ে গিনি সহগ ছিল ০.৪৫৮, পল্লী এলাকায় ০.৪৩১ এবং শহর এলাকায় ০.৪৫২। এ তথ্য স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে, উচ্চ আয়বিশিষ্ট শ্রেণীর আয় ক্রমাগত বাড়ছে। একাধিক পরিসংখ্যান বলছে, দেশের ১০ শতাংশ শীর্ষ ধনীর কাছে জমা বেড়ে হয়েছে মোট আয়ের ৪০ দশমিক ৯২ শতাংশ। সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশ মানুষের আয় এখন দেশের মোট আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ, দেশের ৩ ভাগের ২ ভাগ আয় যাচ্ছে ধনী ৩০ শতাংশ মানুষের হাতে। বাকি ৭০ শতাংশ মানুষের আয় মোট আয়ের অবশিষ্ট ১০ শতাংশ।
প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ এখন উচ্চ আয়বৈষম্যের দেশের দ্বারপ্রান্তে। কেননা, গিনি সহগের মান শূন্য ৫০ পয়েন্ট পেরোলে একটি দেশকে উচ্চবৈষম্যের দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, সেখানে বাংলাদেশে গিনি সহগের মান শূন্য দশমিক ৪৯৯। ফলে দেখা যাচ্ছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের প্রায় ৩৭ শতাংশ মানুষকে ঋণ করে সংসার চালাতে হচ্ছে। বর্তমানে জাতীয়পর্যায়ে একটি পরিবারের গড় ঋণ ৭৩ হাজার ৯৮০ টাকা। মাথাপিছু গড় ঋণ ১৭ হাজার ৩৬৬ টাকা। ঋণগ্রস্ত পরিবার হিসেবে এই অঙ্ক আরো অনেক বেশি। ২০২২ সালে জাতীয়ভাবে প্রতিটি পরিবারের গড় ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ৯৮০ টাকা। গড়ে পরিবারের সদস্যসংখ্যা ৪.২৬ ধরে মাথাপিছু ঋণ বেড়েছে ১৭ হাজার ৩৬৬ টাকা।
একটি দেশের মোট আয় বৃদ্ধির মানে ওই দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বোঝায়। প্রশ্ন হচ্ছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলে আয় যে বাড়ে সেটি গরিব-ধনী উভয়ের বাড়ছে কি না। অথবা ধনী-গরিবের আয় বৃদ্ধির অনুপাত সমান কি না। মূলত এই যে একক আয় সমানভাবে বৃদ্ধি না পাওয়া বা আয় বৃদ্ধির অনুপাতের তারতম্য পাওয়াকে সাধারণত আয়বৈষম্য বলা হয়। যদি কোনো দেশের মূলধনলব্ধ বা পুঁজিলব্ধ আয়ের প্রবৃদ্ধির হার দেশের জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে আয়বৈষম্য বাড়বে।
বিবিএসের তথ্য, ১৯৭৩ সালে দেশের গিনি সহগের মান ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ৩৬ এবং দেশের সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশ মানুষ ওই সময়ে দেশের মোট আয়ের ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ আয় করত। গত দেড় যুগে জিডিপি প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ছে দেশের আয়বৈষম্য। পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে আয়বৈষম্য থাকবে। তবে তা সহনীয় মাত্রায় কমিয়ে আনা সম্ভব রাষ্ট্রীয় নীতির মাধ্যমে। একটি দেশের টেকসই উন্নয়নে প্রয়োজন একটি বৈষম্যহীন সুষম অর্থনৈতিক সমাজকাঠামো প্রতিষ্ঠা করা। একটি বৈষম্যহীন সুষম অর্থনৈতিক সমাজকাঠামো প্রতিষ্ঠা ধনী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে আয়বৈষম্য কমিয়ে এনে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের পথ তৈরি করে। কিন্তু আমাদের দেশে এখন সরকারি তরফ থেকে যে উন্নয়নের বয়ান তুলে ধরা হচ্ছে, তা যে কেবল মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের জন্য, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আমরা মনে করি, দেশে ধনী-গরিবের মধ্যে আয়বৈষম্য কমাতে পারে একটি জনবান্ধব সরকার। কিন্তু বর্তমান সরকার যেসব পদক্ষেপ, কর্মসূচি ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড দেশে পরিচালনা করছে তা গোষ্ঠীস্বার্থ সংরক্ষণ করছে বলে মনে হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা