২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
পাতানো নির্বাচনে বিদেশী হস্তক্ষেপ

খর্ব হচ্ছে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া

-

বাংলাদেশের নির্বাচনে বিদেশী হস্তক্ষেপের প্রসঙ্গটি জোরালো আলোচনায় রয়েছে। ২০১৪ সালে ব্যাপারটি বেশ দৃষ্টিকটুভাবে ধরা পড়ে। ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং এ দেশে এসে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রত্যক্ষ প্রভাব খাটান। এমনকি জাতীয় পার্টির প্রধান এরশাদকে চাপ দিয়ে ওই একতরফা নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়। এরশাদ তার ওপর জোরাজোরির বিষয়টি প্রকাশ্যে এনে হাটে হাঁড়ি ভাঙেন। বৃহৎ ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিবেশী দেশগুলোতে প্রভাব খাটানোর দীর্ঘ অভিযোগ রয়েছে। তবে এভাবে নির্বাচনে নগ্ন হস্তক্ষেপ কোথাও দেখা যায়নি।
মূলত ২০১৪ সালের পর থেকে বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এখন দেশের কোনো পর্যায়ের নির্বাচনেই আর সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ নেই। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়েও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পক্ষ থেকে ভারতের বিরুদ্ধে জোরালো অভিযোগ উঠেছে।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সরকার নিজে ডামি প্রার্থী রাখার কথা জানিয়েছে। তাই বলা যায়, এটি একটি ডামি নির্বাচন। ডামি শব্দটি ইংরেজি হলেও বাংলায় বহুল ব্যবহৃত। এর সাথে ‘ভুয়া’, ‘জালিয়াতি’-এ ধরনের শব্দের মিল রয়েছে। পণ্যের বেলায় ‘নকল’ অর্থে এটি ব্যবহার হয়। খেলার ক্ষেত্রে এর অর্থ দাঁড়ায় ‘পাতানো’।
২০১৪ সালের বিনা ভোটের এবং ২০১৮ সালের নিশি ভোটের পর এবার তার চেয়েও অর্থহীন একটা কিছু হতে যাচ্ছে, সেটি স্পষ্ট। বিশ্বের বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের পক্ষ থেকে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। বরং দেশটির রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও কূটনীতিকরা এমনকি তাদের বিশাল প্রপাগান্ডা টিম প্রতারণাপূর্ণ নির্বাচনের পক্ষে কাজ করছে।
এতে বাংলাদেশে গভীর হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে বড় বিরোধী দল বিএনপি এমন অন্যায্য অবস্থানের ব্যাপারে ভদ্রতার খাতিরে নীরবতা পালন করলেও ভারতের প্রতি তাদের অস্বস্তি চাপা রাখেনি। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ডামি নির্বাচনকে ‘একতরফা পাতানো’ উল্লেখ করে দিল্লিকে এর ‘মদদদাতা’ বলে মন্তব্য করেছেন। দলটির শীর্ষ নেতারা বন্দী। দলের পক্ষে কথা বলার মতো লোক পর্যন্ত নেই। এ অবস্থায় কিভাবে একটি জাতীয় নির্বাচন হতে পারে?
রিজভী অভিযোগ করেছেন, ‘ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বাংলাদেশে এসে একদলীয় নির্বাচনের পক্ষে সাফাই গাইছেন। তারা গণতন্ত্র-মানুষের অধিকার চান না।’ এ কথার সত্যতা প্রতিদিন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে। একজন প্রার্থী সরাসরি হুমকি দিয়েছেন এই বলে যে, তিনি ভারতের প্রার্থী। রিজভী তার ভার্চুয়াল সংবাদমাধ্যমে এর উল্লেখ করেন। সামাজিক মাধ্যমে আরো স্পর্শকাতর খবর প্রকাশ পাচ্ছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, এই নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের ঘটনা ঘটছে। এর সাথে নানাভাবে ভারত জড়িয়ে পড়ছে।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থায় যে গুরুতর সঙ্কট চলছে তার শুরু ২০১৪ সালে বিনা ভোটের নির্বাচন থেকে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান এর মূল কারণ। অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে একটি দলনিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন করছে বিরোধী দলগুলো। সরকার কঠোরভাবে ওই আন্দোলন দমন করছে। আশার কথা, গণতান্ত্রিক বিশ্ব বাংলাদেশের জন আকাক্সক্ষার পক্ষে। তাই ভারতেরও উচিত জনগণের প্রত্যাশার প্রতি সম্মান জানানো।


আরো সংবাদ



premium cement