বিনিয়োগের চেয়ে প্রত্যাহার বেশি
- ০১ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০
চাকরিজীবীরা কর্মজীবন শেষে এককালীন যে অর্থ পেতেন তা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতেন। এ থেকে অর্জিত মুনাফা দিয়ে সংসার চালাতেন। সরকারও সাধারণের এ নিরাপদ বিনিয়োগের অর্থ দিয়ে বিভিন্ন উন্নয়নকাজ চালাত। এতে ব্যাংক থেকে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে বাড়তি ঋণ নিতে হতো না। কিন্তু নানা জটিলতায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ এখন নেতিবাচক।
নিম্ন মধ্যবিত্ত, সীমিত আয়ের মানুষ, নারী, প্রতিবন্ধী ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য সঞ্চয়পত্রের বিভিন্ন প্রকল্প চালু রয়েছে। সামাজিক সুরক্ষার কথা বিবেচনায় নিয়ে সঞ্চয়পত্রে তুলনামূলক বেশি মুনাফা (সুদ) দেয় সরকার। কিন্তু পণ্য ও সেবার দামের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে জীবনযাপনের খরচ বেড়ে গেছে মানুষের, যার প্রভাব পড়ছে সঞ্চয়ে। বিশেষ করে নির্দিষ্ট আয়ে যাদের সংসার চলে, তাদের অনেকে এখন সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন। ফলে নির্দিষ্ট মেয়াদ পূর্তির আগে অনেকে সঞ্চয়পত্র ভেঙে সংসার চালাচ্ছেন। কেউ মেয়াদপূর্তিতেও পুনর্বিনিয়োগ না করে টাকা তুলে নিচ্ছেন। আবার যাদের কাছে টাকা আছে, তারাও কড়াকড়ির কারণে সঞ্চয়পত্রে খাটাতে আগ্রহী নন।
নয়া দিগন্তে গতকাল প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারিতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে সাত হাজার ১০৫ কোটি টাকার। তবে মূল ও মুনাফা বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছে সাত হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা। সুতরাং বিক্রির চেয়ে পরিশোধের পরিমাণ বেশি। অর্থাৎ নিট বিক্রি বা ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪৪০ কোটি টাকা। তথ্য বলছে, গত বছরের (২০২২) ফেব্রুয়ারিতে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। আবার অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ঋণাত্মক তিন হাজার ৫১০ কোটি টাকা। এ কারণে সঞ্চয়পত্র থেকে কোনো ঋণ পায়নি সরকার; বরং আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের নগদায়নের চাপে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে।
সর্বশেষ তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ হয়েছিল ৫৫ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা। সেখানে উত্তোলন হয়েছে ৫৯ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। এই সময়ের মধ্যে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ না হয়ে বরং ঘাটতি হয়েছে তিন হাজার ৫১০ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র থেকে কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ না আসায় বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে সরকার। গত অর্থবছরেও সঞ্চয়পত্র থেকে তুলনামূলক কম ঋণ পেয়েছিল সরকার। পুরো অর্থবছরে ৩২ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে নিট ঋণ আসে ১৯ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা। অথচ করোনার পরও ২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগ হয়েছিল প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা।
নগদ টাকার প্রবাহ কমে যাওয়ায় চাপে রয়েছে ব্যাংক খাত। এ অবস্থায় সরকার ব্যাংক থেকে বেশি মাত্রায় ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ দেয়ার সক্ষমতা ব্যাংকগুলোর কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতেও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন ব্যয় মেটাতে এবার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়া বাড়িয়েছে সরকার। এর মধ্যে সাড়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। পুরোটা নেয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নোট ছাপিয়ে সরকারকে টাকার জোগান দেয়ায় মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ বেড়েছে।
এখন মানুষের হাতে টাকা কম। ফলে সংসার চালাতে সঞ্চয়ে হাত দিচ্ছেন। আবার পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগে আয়কর রিটার্নের স্লিপ জমা করতে হচ্ছে। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের অনেকে এ ঝামেলায় যেতে চান না। এদিকে বিভিন্ন প্রকার সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ সীমা কমিয়ে আনা হয়েছে। ফলে যাদের আগে থেকে বেশি বিনিয়োগ ছিল, তারা মেয়াদপূর্তিতে নতুন করে বিনিয়োগ করতে পারছেন না। এ ছাড়া প্রবাসী বন্ডে বিনিয়োগ সীমা কমিয়ে আনা ও এনআইডি শর্তে সেখানে কম বিনিয়োগ হয়েছে। তবে সম্প্রতি প্রবাসী বন্ডের বিনিয়োগ সীমা ও এনআইডি শর্ত প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।
আমরাও মনে করি, মন্দাকালে স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনে স্বস্তি ফেরাতে নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্রে যেসব বেড়াজাল তৈরি করা হয়েছে; তা অপসারণের উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। এতে যেমন সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বাড়বে; তেমনি ব্যাংকঋণ না নিয়েও সরকারের উন্নয়নকাজ চালানো সহজ হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা