নজরদারির হাতিয়ার হচ্ছে!
- ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০৫
দেশের সব অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে বিজয় কি-বোর্ড ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সম্প্রতি এ নির্দেশ দিয়েছে। গত ১৩ জানুয়ারি দেশের মুঠোফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়ে সব স্মার্টফোনে বিজয় কি-বোর্ড বাধ্যতামূলক করার বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। সংস্থাটির কাছ থেকে বিনামূল্যে বিজয় কি-বোর্ডের অ্যান্ড্রয়েড প্যাকেজ কিট (এপিকে) ফাইল নিয়ে মুঠোফোনে স্থাপন করতে বলা হয়েছে। না হলে মুঠোফোন বিপণন করতে দেয়া হবে না। তবে সরকারের কোন নির্দেশনা বা কোন আইনের ভিত্তিতে এই নির্দেশনা দেয়া হলো তা উল্লেøখ করা হয়নি।
বিজয় কি-বোর্ড খোদ ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রীর উদ্ভাবিত। মূলত এই কি-বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যার উদ্ভাবনের এক ধরনের পুরস্কার হিসেবে তাকে এই দফতরের মন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়। আশা করা হয়েছিল, বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবেন। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট এবং যারা খোঁজখবর রাখেন তারা জানেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিশ্বমানে পৌঁছা দূরের কথা, আমাদের আশপাশের কোনো একটি দেশের চেয়েও এগিয়ে নেই। এই পিছিয়ে থাকার জন্য এককভাবে মন্ত্রী দায়ী, আমরা তা মনে করি না। তবে সব ফোনে বিজয় স্থাপন বাধ্যতামূলক করা ক্ষমতার অপব্যবহারের উদাহরণ হয়ে থাকবে বলে মনে হচ্ছে। বাস্তবতা হলো- জনপ্রিয়তায় বিজয় কি-বোর্ড অনেক পিছিয়ে। এদিকে বিপুলভাবে এগিয়ে আছে রিদমিক কি-বোর্ড। সবাই এটি ব্যবহার করেন।
মন্ত্রী ও তার দফতর তাদের পদক্ষেপের পক্ষে নানা সাফাই দাঁড় করিয়েছেন। কিন্তু এই প্রযুক্তির সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কি-বোর্ড বা অ্যাপ বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) বাধ্যতামূলক তালিকাভুক্ত নয়। বিএসটিআই জানিয়েছে, সংস্থাটির বাধ্যতামূলক পণ্য তালিকায় স্মার্টফোনের কি-বোর্ড নেই। তাই কোনো সরকারি সংস্থা ওই তালিকাবহির্ভূত কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবা বাধ্যতামূলক করতে পারে না। আইনজীবীরাও একইরকম অভিমত জানিয়েছেন গণমাধ্যমের অনুসন্ধানের পরিপ্রেক্ষিতে। এ পদক্ষেপ বাজারের প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ ধ্বংস করবে, যা বাজার অর্থনীতির নীতিবিরুদ্ধ। কেউ বলেছেন, এটি স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ। আমাদের ওপর উর্দুভাষা চাপানোর যে চেষ্টা হয়েছিল তার সাথে তুলনা করা হয়েছে বিজয় কি-বোর্ড চাপানোর চেষ্টাকে।
প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাধারণ ব্যবহারকারী থেকে শুরু করে অনেকে। রাজনীতিকরাও। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না মনে করেন, জনগণের তথ্য হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে বিটিআরসিকে দিয়ে এ নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। এ পদক্ষেপকে অনৈতিক ও বেআইনি অভিহিত করে তিনি আরো বলেন, বিজয় কি-বোর্ড ইনস্টল করলেই স্মার্টফোনে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করবে এবং এতে ব্যবহারকারীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টের গোপন নম্বর, এমনকি ব্যাংক হিসাব ও ক্রেডিট কার্ডের নিয়ন্ত্রণ চলে যেতে পারে সরকারের হাতে।
দেশবাসী জানেন, ইসরাইলসহ বিভিন্ন দেশ থেকে নজরদারির প্রযুক্তি কেনা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে জাতীয় সংসদে বলেছেন, ‘ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মনিটরিংয়ের (নজরদারি) মাধ্যমে দেশ ও সরকারবিরোধী কার্যক্রম বন্ধে এনটিএমসিতে (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার) ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স টেকনোলজির (ওএসআইএনটি) মতো আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজিত হয়েছে। অর্থাৎ নজরদারি এরই মধ্যে চলছে।
বিজয় কি-বোর্ডের সাথে ম্যালওয়্যার (ক্ষতিকারক সফটওয়্যার) ঢুকিয়ে এখন দেশের প্রতিটি মোবাইল নিয়ন্ত্রণে নেয়ার কোনো দুরভিসন্ধি চলছে কিনা- এমন সংশয় কেউ করলে তাকে দোষ দেয়া যায় কি? গ্রাহকের তথ্যের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করাও সরকারের দায়িত্ব। বিটিআরসির দায়িত্বের মধ্যে পড়ে সেটি। খোদ মন্ত্রীর হাতে এর ব্যত্যয় ঘটলে সেটি হবে অনাকাক্সিক্ষত।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা