নিয়ন্ত্রণের কোনো তাগিদ সেই
- ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০৫
প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে প্রতিনিয়ত প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে নিরপরাধ মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। উন্নত বিশ্বে এক ধরনের মস্তিষ্ক বিকৃত কিংবা অপরিণামদর্শী মানুষের এই নির্মম চর্চা বন্ধ করা যাচ্ছে না। প্রশ্ন উঠেছে, সমাজের শুধু বিশিষ্ট একটি অংশকে বৈধভাবে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারের সুযোগ দেয়া যায় কিনা। তীব্র সমালোচনার মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যক্তিগত ব্যবহারের নীতি সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও চলমান। আমাদের দেশে বৈধ অস্ত্রের অবৈধ প্রয়োগ আগের চেয়ে অনেক বাড়লেও তার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের সক্রিয়তা নেই।
সহযোগী একটি দৈনিকে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেড় লাখ বৈধ অস্ত্রের হালনাগাদ কোনো তথ্য নেই। অথচ বর্তমান সরকারের সময়ে ব্যক্তিগত অস্ত্রের ব্যবহার করে প্রকাশ্যে খুনের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল রাস্তায় লাইসেন্স করা অস্ত্র দিয়ে গুলি করা হয়। সাবেক এক সংসদ সদস্যের ছেলে বখতিয়ার আলমের চালানো গুলিতে এক অটোচালক ও এক রিকশাচালক প্রাণ হারান।
গত ১৫ জানুয়ারি স্বেচ্ছাসেবক লীগের আরেক নেতা রাজধানীর গুলশানে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করেন। তার ছোড়া গুলিতে দুই পথচারী আহত হন। ৭৫ হাজার টাকা বিকাশ করে দোকানিকে টাকা পরিশোধ না করে অস্ত্র ও ক্ষমতার দম্ভ দেখান। তার অস্ত্রটির লাইসেন্স হালনাগাদ নবায়ন করা। এ বছরের শুরুতে আরেকটি ঘটনায় দেখা যায়, রাজধানীর মোহাম্মদপুরে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে জমি দখলের চেষ্টা করে তিন ভাই। তাদের ব্যবহৃত অস্ত্রও লাইসেন্স করা ছিল।
এ ছাড়া নানা অপরাধ সংঘটনে দেশে আগ্নেয়াস্ত্রের বহু ব্যবহার দেখা যায়। শুধু তাই নয়, দেশে অস্ত্রের কালোবাজারও রয়েছে। বৈধ অস্ত্রের সাথে এমন অবৈধ অস্ত্রের সংখ্যাও যে কম নয়; তা বোঝা যায়। এর দ্বারা হাইপ্রোফাইল হত্যাকাণ্ডও ঘটেছে। ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর এমনি এক হত্যাকাণ্ডের শিকার হন গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। দিনদুপুরে বাসায় ঢুকে দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। অবশ্য এমপি লিটনও তার নিজ এলাকার এক শিশুকে গুলি করে আহত করেছিলেন। দেশে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা কম নয়। কিছু ঘটনায় আগ্নেয়াস্ত্রের সাথে বোমা ও ধারালো অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে। তবে আগ্নেয়াস্ত্রগুলো বৈধ কিনা তার উত্তর সব সময় পাওয়া যায় না।
পত্রিকার বিবরণে জানা যাচ্ছে, বৈধ অস্ত্রের পুরোপুরি পরিসংখ্যান নেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে। সারা দেশে যেখানে আনুমানিক দুই লাখ বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে; সেখানে পুলিশের বিশেষ শাখায় মাত্র ৪৪ হাজার বৈধ অস্ত্রের হিসাব রয়েছে। বাকি অস্ত্রের হালনাগাদ তথ্য নেই। পত্রিকাটি জানিয়েছে, বৈধ অস্ত্রের অবৈধ প্রয়োগ নিয়ে পাঁচ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতরে।
ব্যক্তিগতভাবে অস্ত্র রাখার যৌক্তিকতা হচ্ছে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এই অস্ত্র নিয়ে মানুষের জীবন উল্টো শঙ্কায় পড়ছে। যারা বৈধ অস্ত্রের মালিক হচ্ছেন তাদের জীবনের শঙ্কা তুলনামূলক কমই দেখা যাচ্ছে। আমাদের দেশে অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়ার কোনো সঠিক নীতি যে নেই এটি পরিষ্কার। এসব অস্ত্র ব্যবহার করে চাঁদাবাজি, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল, আধিপত্য বিস্তার, জমি দখল ও অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণের কাজ চলছে বলে পত্রিকার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। দেশের ক্রমপতনমুখী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পেছনে যে বৈধ অস্ত্রের ভূমিকা রয়েছে সেটি দৃশ্যমান। পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে করছে অবৈধ অস্ত্র। অথচ বৈধ অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে নেই উল্লেখযোগ্য কোনো সরকারি পদক্ষেপ। অন্য দিকে, অস্ত্রের চোরাকারবার নিয়ন্ত্রণেও নেই দৃশ্যমান জোরদার অভিযান।
অস্ত্রের লাইসেন্স কারা পাবে তার একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন। একই সাথে সেটি যথাযথ পরিপালনও প্রয়োজন। দেশে এ ব্যাপারে কিছু নিয়ম নিশ্চয় রয়েছে। কিন্তু সেসব যে পালন হচ্ছে না; তা হলফ করে বলা যায়। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বিধান করতে হলে বিষয়টিতে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা