সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিন
- ২৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
দেশে ইউরিয়ার সঙ্কট দেখা দিতে পারে। নানা কারণে এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইউরিয়া উৎপাদনের ছয়টি কারখানার মধ্যে দু’টি বন্ধ। অন্য চারটি প্রতিষ্ঠানও আর্থিক লোকসানের পর্যায়ে সঙ্কটজনক অবস্থায়। বর্তমানে সচল চারটি কারখানার মধ্যে তিনটি ৩৫ বছরেরও অধিক পুরনো। এগুলোর উৎপাদনসক্ষমতা আগের মতো নেই। অর্থের অভাবে নিয়মিত ওভারহোলিং, প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে না পারায় কারখানাগুলোতে পুরোমাত্রায় উৎপাদন করা যাচ্ছে না।
বিপুল ভর্তুকির অর্থ না পাওয়ায় ইউরিয়া কারখানা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন-বিসিআইসি বড় ধরনের ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। সংস্থার ঘাটতির পরিমাণ প্রায় দুই হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। গত ছয় বছরে এ অর্থ পরিশোধ করেনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে ইউরিয়ার দাম বেড়েছে। দেশে ডলারের চরম ঘাটতি। এলসি খোলার মতো ডলারের জোগানও দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো। ফলে ইউরিয়া আমদানি করে সঙ্কট সমাধান কতটা করা সম্ভব তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এ ছাড়া গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, সরবরাহে ঘাটতি- এগুলোও সঙ্কটে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
বিশ্বব্যাপী মূল্যবৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে গত বছরের শেষ দিকে ইউরিয়ার দাম বাড়িয়েছে সরকার। কৃষকদের জন্য প্রতি কেজি ইউরিয়ার দাম ছয় টাকা বাড়িয়ে ২২ টাকা করা হয়েছে। এতে মূল্যস্ফীতির চাপে এর মধ্যে চিঁড়েচ্যাপটা কৃষকের ওপর এবার বাড়তি চাপ পড়বে।
দেশে প্রতি বছর ইউরিয়া সারের চাহিদা ২৫ লাখ টনের মতো। এর মধ্যে ১০ লাখ টনের মতো দেশে উৎপাদন হয়। উল্লিøখিত সমস্যার মুখে এ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কতটা পূরণ করা যাবে, বলা মুশকিল।
নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ইউরিয়ার দাম তুলনায় কম হওয়ায় বিসিআইসির ভর্তুকির অর্থ পরিশোধের পরও ছয় বছরে সরকারের প্রায় আট হাজার ৭৪৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা সাশ্রয় হবে। কিন্তু সেটিও বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে না।
অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে ইউরিয়ার ক্রমাগত দাম বেড়ে যাওয়া ও ডলারসঙ্কটের কারণে সরকারি ব্যাংকগুলো ঋণপত্র (এলসি) খুলতে অনীহা প্রকাশ করছে। এ কারণে ইউরিয়া আমদানি বর্তমানে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ অবস্থায় দেশীয় কারখানায় ইউরিয়ার উৎপাদন বাড়ানো ও ব্যবস্থাপনা শিথিল করা না গেলে দেশে ইউরিয়ার সঙ্কট দেখা দিতে পারে এবং খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হবে বলে মনে করে শিল্প মন্ত্রণালয়।
ইউরিয়া বা সারের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার ওপর খাদ্যশস্য উৎপাদনের সম্পর্ক অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সার না পেলে কৃষক উৎপাদন করতে পারবে না। ফলন মার খাবে। একই অবস্থা ডিজেল সরবরাহ নিয়েও। বিদ্যুতের ঘাটতিও এ ক্ষেত্রে নেতিবাচক ভূমিকা রাখে। এ বিষয়গুলো সুষ্ঠুভাবে কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করতে না পারলে খাদ্য উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়তে বাধ্য। এর ফলে খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়বে।
গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটার ৪ দশমিক ৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা করায় ইউরিয়া সারের উৎপাদনব্যয় বর্তমানের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। সরকার এখন প্রতি কেজি ইউরিয়ায় ৫৯ টাকা ভর্তুকি দেয়। সেই অর্থ বিসিআইসিকে শোধ করতে পারেনি। দাম দ্বিগুণ হলে বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থায় সেটি যে অসম্ভব হবে তা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে আনুমানিক আট লাখ টন সার সরবরাহের বিপরীতে উৎপাদন পর্যায়ে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় এক হাজার ৪৪০ কোটি টাকা।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদেশ থেকে প্রায় ২১ লাখ টন ইউরিয়া আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু আর্থিক সঙ্কটে এবার আমদানি কঠিন হতে পারে। তবে পরিস্থিতি যাই হোক, ইউরিয়ার সরবরাহ নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। বিষয়টি সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সুরাহা করবে- এমনটি জনগণ আশা করে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা