নাগরিকদের নিরাপত্তা দেবে কে
- ২৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
প্রতিদিন আইনশৃঙ্খলাজনিত খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। খুন-অপহরণ-ছিনতাই সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক ও পারিবারিক অপরাধও বাড়ন্ত। সাথে রয়েছে বিরোধী রাজনীতিকদের অধিকারহরণ। গতকালের পত্রিকায় খবর- এক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। অন্য দিকে, বখাটেদের বিরুদ্ধে এক গৃহবধূ নালিশ করেছিলেন স্কুলছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করায় । এ জন্য বখাটেরা পিটিয়ে হত্যা করে তার স্বামীকে। শুধু অপরাধী চক্র নয়; বিবদমান পক্ষগুলো মানুষকে চিরতরে হত্যা করে নিজেদের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে পিছপা হচ্ছে না। এসব যদি আমরা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখি; তাহলে কখনো সমাধান আসবে না। এর গোড়াতে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত নীতি প্রয়োগে দুর্বলতা, দুর্নীতি, গাফিলতি ও অদক্ষতা। একই দিন পত্রিকায় আরো খবর হয়েছে- র্যাবের নামে অপহরণ বা ছিনতাই চেষ্টা। এ ধরনের অপরাধও নিয়মিত ঘটছে। এটি অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বিষয় হলেও বন্ধ করা যাচ্ছে না বা শক্ত হাতে দমন করা হচ্ছে না।
শুক্রবার রাতে মহাখালী ফ্লাইওভারে র্যাব পরিচয়ে দুর্বৃত্তদের একটি দল ছিনতাই চেষ্টা চালায়। এক প্রবাসী বিমানবন্দর থেকে ফিরছিলেন। তাকে বহনকারী প্রাইভেটকার ফ্লাইওভারে উঠলে সেখানে আরেকটি প্রাইভেটকার এর গতিরোধ করে। অস্ত্র তাক করে গাড়িতে থাকা প্রবাসীসহ আরো একজনকে নামিয়ে নিয়ে আসে। ‘স্বর্ণ চোরাচালানি’ বলে অভিযোগ করে চুপচাপ তাদের সাথে যেতে বলে। এ সময় তারা সাহায্য চেয়ে চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন ভিড় জমান। একপর্যায়ে একজনকে গাড়িতে রেখে বাকি দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় তারা র্যাব লেখা জ্যাকেট, হাতে পুলিশের সিগন্যাল লাইট ও অস্ত্র ব্যবহার করে। ঘটনার পর তিনজনকে আটক করা গেছে।
ঠিক একই ধরনের আরেকটি ঘটনা দিন পনেরো আগে মতিঝিলে ঘটে। ওই ঘটনায় ছিনতাইকারীরা তাদের অপকর্মটি নির্বিঘেœ ঘটায়। সিটি সেন্টারের সামনে দিয়ে এক ব্যবসায়ী রিকশাযোগে যাচ্ছিলেন। এ অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে ডিবি পরিচয়ে আটক করে হ্যান্ডকাফ পরায় দুর্বৃত্তরা। গাড়িতে তুলে তারা চোখমুখ গামছা দিয়ে বেঁধে রাখে। তার কাছ থেকে চার লাখ টাকা কেড়ে নিয়ে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে নামিয়ে দেয়া হয়। এ চক্রও সরকারি বাহিনীর ব্যবহৃত বিভিন্ন চিহ্ন ও অস্ত্রের ভয় দেখিয়েছে। তাদের কাছে হ্যন্ডকাফ, ডিবি লেখা জ্যাকেট, ওয়ারলেস ও অস্ত্র ছিল। এদের দেখে কোনোভাবে বোঝার উপায় নেই, এরা নকল ডিবি সদস্য।
ফ্লাইওভারে শুক্রবার রাতে সংঘটিত অপহরণ চেষ্টার সাথে জড়িত আটক একজন নিজেকে র্যাবের সোর্স দাবি করেছেন। জানিয়েছেন, র্যাবের এক কর্মকর্তার সাথে মিলে কাজ করেন তিনি। র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এদিকে ডিবির নামে ঘটা ছিনতাইও ডিবি তদন্ত করছে বলে জানিয়েছে। দুর্ভাগ্য হলো- এসব তদন্তে কেউ দোষী সাব্যস্ত হচ্ছে কি না তা জানা যায় না। অন্য দিকে, একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটে চলেছে। ডিবি পুলিশ নিজেদের পর্যবেক্ষণে বলছে, ঢাকা শহরে ১০টি ভুয়া ডিবি চক্র রয়েছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এমনকি সংস্থাটি ভুয়া ডিবিচক্রের কার্যক্রম রোধে তাদের পোশাকে কিউআর কোড সংযোজন করলেও কাজ হয়নি।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর নামে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যও বিগত সময়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, এমন ঘটনাও দৃশ্যমান হয়েছে। একটি দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য এটি নৈতিক অবনমন। তারা নিজেরা অভিযোগ থেকে মুক্ত হতে পারছেন না। তাদের ভেতরে থাকা কিংবা নাম ব্যবহার করে যারা অপরাধ করছেন তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পারছে না। আগে পুলিশ বাহিনীর মধ্যে কঠোর শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা উচিত। অন্যথায় সারা দেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া বিশৃঙ্খলাকে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। এ জন্য সরকারকে দৃঢ় নৈতিক অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে বাহিনীর নামে কোনো ধরনের অপরাধ হলে সেগুলোর দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। তা হলে তখনই কেবল সম্ভব দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানো।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা